ধুলার দাপটে ঢাকার পরিবেশ ভয়াবহ সংকটে
গাড়ি চলাচল করলে দেখা যায় না সড়ক। ধুলার দাপটে ধূসর হয়ে যায় চারপাশ। গাড়ি যত দ্রুত চলে তত বেশি ধুলা ওড়ে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ফিটনেসহীন গাড়ির কালো ধোঁয়া। সড়কের ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে গিয়ে অনেকে নাক চেপে ধরছেন। কেউ কেউ আবার মাস্কও পরছেন। মিডিয়ানের গাছগুলোতেও জমেছে ধুলোর আস্তরণ।
রাজধানী টিটিপাড়ার চায়ের দোকানদার আল-আমিন বলেন, ‘ব্যস্ততম সামনের সড়কটিতে দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কার কাজ চলছে। তার মাঝেই সারাক্ষণ চলছে গাড়ি। অধিকাংশ গাড়িই আবার কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে যাচ্ছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। মাস্ক পরে কোনোমতে টিকে আছি। কাস্টমারও কমে গেছে। ধুলার কারণে একটা সময় নিজেকেই অচেনা মনে হয়।’
টিটিপাড়া, কমলাপুর সড়কের মতো চিত্র এখন রাজধানীর যত্রতত্র। অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে অনেক এলাকার রাস্তাঘাট জন ও যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে।
সংস্কার কাজে সেই বরাবরের ধীরগতি। ফলে প্রতিনিয়ত ধুলাবালি আর যানবাহনের কালো ধোঁয়া মিশছে ঢাকার বাতাসে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বায়ুর মান। আর তা নগরের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের পর্যবেক্ষণে বায়ুদূষণের বিশ্ব মানদণ্ডে ঢাকা প্রায়শ তালিকার প্রথম আবার কখনও দ্বিতীয় অবস্থানে থাকছে। গেল ১৫ ফেব্রুয়ারি ছুটির দিনও বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে ছিল ঢাকার অবস্থান।
ঢাকার বায়ুদূষণের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ফিটনেসবিহীন গাড়ির কালো ধোঁয়া, শিল্প-কারখানার ধোঁয়া, উন্মুক্তভাবে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা, ল্যান্ডফিল থেকে নিঃসৃত মিথেন গ্যাস এবং সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি থেকে উড়ে আসা ধুলাবালি। এসব দূষণকারী উপাদান প্রতিনিয়ত ঢাকার বাতাসে মিশে বায়ুর মান আরও খারাপ করে তুলছে।
তবে কোন উৎস থেকে কী পরিমাণে বায়ুদূষণ হচ্ছে তার কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থার কাছে।
পরিবেশগত ভয়াবহ সংকটের মুখে থাকা ঢাকা রক্ষায় নেই আন্তঃসংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে পরিবেশকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরিবেশ মন্ত্রণালয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা ও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এ সংস্থাগুলো সমন্বয়হীনভাবে নিজেদের মতো করে কাজ করছে।
ফলে এক সংস্থা সড়ক কেটে রাস্তা সংস্কারের পরপরই আরেক প্রতিষ্ঠান গাঁইতি-শাবল নিয়ে রাস্তার ওপর হামলে পড়ছে। এ কারণে একদিকে রাষ্ট্রের আর্থিক অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে সারা বছর খোঁড়াখুঁড়ির কারণে জনদুর্ভোগ চরমে উঠছে। পরিবেশ দূষণও চলছে বিরামহীন।
প্রকৃতিক পরিবেশ, সবুজ-জলাশয় কমে যাওয়ায় যেকোনো নির্ণায়কের মাপকাঠিতে ঢাকা বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স’র (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান।
তিনি বলেন, গাছপালা কমে যাওয়ায় বায়ু ও পানিদূষণ বেড়ে যাচ্ছে। কংক্রিটের কারণে গ্রীষ্মকালে শহরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। সবুজ অঞ্চলে ফল-ফুলের বাইরেও বিভিন্ন ধরনের পাখি ও প্রাণী থাকে।
বাস্তুসংস্থানের স্বাভাবিকতার জন্যই মানুষের পাশাপাশি গাছপালা ও অন্যান্য প্রাণী থাকা প্রয়োজন। যত সবুজ কমে যাবে আমাদের জীববৈচিত্র্যের ওপর তত নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।