পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক নিউজ পোর্টাল গ্রীণ পেইজ এর প্রকাশকের ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর ছাদ বাগানটি পূর্ব শত্রুতার জেরে ধ্বংস করা হয়েছে
পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক নিউজ পোর্টাল গ্রীণ পেইজ এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক মিসেস ফাতেমা জিন্নাত কর্তৃক ৬২ সিদ্ধেশ্বরী রোড, ঢাকাস্থ এপার্টমেন্টের তাঁর বাসভবনের ছাদে যে ছাদ বাগানটি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তা ঐ এপার্টমেন্ট কমিটির সভাপতি ডা. জাহিদ কর্তৃক পূর্ব শত্রুতার জেরে তার অপকর্মর দোসর ম্যানেজার বাবুলের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
গত ১৭ আক্টোবর, ২০২৩ তারিখে ম্যানেজার বাবুলের বাহির হতে শ্রমিক এনে ভোর রাতে গোপনে ধ্বংস করে দিয়েছে। ছাদ বাগানটি অত্যন্ত দৃষ্টি নন্দন ও মনোরম ছিল যার বৈকালিক সৌন্দর্য উক্ত এপার্টমেন্টে বসবাসকারী অন্যান্য ফ্লাটের বাসিন্দাগণও উপভোগ করত।
ছাদ বাগানটিতে বিভিন্ন প্রকার ফুলের ও ফলজ গাছ ছিল। ফুল গাছের মধ্যে বেলী ও চার রংয়ের রজনীগন্ধা, কামিনী ও পাতাবাহারসহ আরো অন্যান্য বাহারী ফুলের গাছ ছিল এবং ফলজ গাছের মধ্যে ৭/৮ টি ফলবান পেঁপে গাছ, ২টি ফলবান পেয়ারা, ১টিফলবান ডালিম, ১টি থাই কটবেল, ১টি ফলবান থাই জাম্বুরা, ১টি লেবু গাছসহ আরো বেশ কয়েক রকম ফলজ গাছ ছিল।
বাগানটি ধ্বংসের সময় প্রত্যেকটি ফলজ গাছ কচি-ও পরিপক্ক ফলে ও ফলজ ফুলে পরিপূর্ণ ছিল। এ বাগানটি লাগানো হতে পরিচর্যা বাবদ তাঁর বহু টাকা ও শ্রম ব্য়য় হয়েছে। মূলত: পরিবেশ কর্মী হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে উদ্ভূদ্ধ হয়ে দেশের পরিবেশের উন্নয়ন এবং প্রতিটি স্থানে খাদ্য উৎপাদনের নিমিত্তে ছাদ বাগানটি সৃষ্টি করেছেন।
![]() | ![]() |
![]() | ![]() |
![]() ধ্বংস করার পূর্বে ছাদবাগানটি দৃশ্য |
১৭ আক্টোবর, ২০২৩ তারিখ আনুমানিক ১০ টার দিকে মিসেস ফাতেমা জিন্নাতকে তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ীচালক বাসায় এসে এ দূঃসংবাদটি জানালে তিনি দৌঁড়ে ছাদে যেয়ে এ ধ্বংসলীরা দেখতে পান।
তিনি ছাদে যেয়ে দেখেন ফ্লাটের ম্যানেজার বাবুলের নেতৃত্বে ৪/৫ জন শ্রমিক দিয়ে ততক্ষণে সব গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলেছে। গাছ তো কেটেছেই সাথে সাথে গাছের মাটির টব ভেঙ্গে চুরমার করেছে এবং ড্রামের মাটিগুলো সরিয়ে মাটি ও ড্রামগুলো অন্যত্র বিক্রয় করে দিয়েছে এবং কর্তণকৃত গাছসমূহসহ সেগুলো ছাদ থেকে সিড়ি দিয়ে নামিয়ে পিকআপের মাধ্যমে সরিয়ে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে আলামত ধ্বংস করে দিয়েছে, যাতে দূষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া না যায়।
![]() | ![]() |
![]() | ![]() |
![]() | ![]() |
![]() ছাদ বাগানের ধ্বংসলীলা |
পূর্ব শত্রুতা বিষয়ে জানা যায় যে, জনাব জাহিদ সাহেব গত বিশ বছর যাবত তিনি এপার্টমেন্টটির সভাপতির পদ কুক্ষিগত করে রেখেছেন এবং নামকাওয়াস্তে একটা এপার্টমেন্ট কমিটি করা হলেও কমিটিকে পাশ কাটিয়ে নীজেই একা এপার্মেন্টের পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষনের সকল সিদান্ত গ্রহণ করেন।
কমিটির সিদান্ত ব্যতিরেকে কোন প্রকার কোটেশণ ছাড়াই ম্যানেজার দ্বারা দু‘জনের মধ্যে যোগসাজসে এপার্টমেন্টের এর পরিচালন ও মেরামতের নামে এপাটর্মেন্ট মালিকদের নিকট হতে সংগৃহীত টাকা খরচ করেন । তিনি কখনো এপার্টমেন্ট এর আয় ব্যয়ের হিসাবও কাউকে প্রদান করেন না।
বিগত বার্ষিক সভায় মিসেস ফাতেমা জিন্নাত এর স্বামী পরিবেশ ও জলবায়ু কর্মী প্রকৌশলী মো: মাহফুজুর রহমান এ বিষয়ে প্রশ্ন উপস্থাপন করায় সভাপতি জনাব জাহিদ সাহেব তার উপর ক্ষিপ্ত হন এবং তখন হতেই এপার্টমেন্ট এর বিভিন্ন কর্মকান্ডে তিনি নিজে এবং ম্যানেজার বাবুলকে দিয়ে মিসেস ফাতেমা জিন্নাত ও তার স্বামীর সাথে বিরূপ আচরণ করতে থাকেন।
তারই সর্বশেষ হীন কর্ম হিসাবে এ তাঁদের প্রতিষ্ঠিত ছাদ বাগান ও উহাতে বিদ্যমান ফলজ গাছসমূহ পরিপক্ক ও কচি কচি ফলসহ নিচিহ্ন করে দেন। মূলত: তিনি মিসেস ফাতেমা জিন্নাত ও তাঁর স্বামীর প্রতি প্রতিশোধ নিতে যেয়ে প্রকৃতির উপর প্রতিশোধ নিয়েছেন, পরিবেশের প্রভূত ক্ষতি সাধন করেছেন।
ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহর দিন দিন মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে৷ এ শহরটিতে জনস্রোতের কারণে থাকার জায়গার সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে৷ বাড়ির ছাদের চিলেকোঠায়ও মানুষের বসবাসের স্থান গড়ে উঠেছে৷ বসতি বাড়ার সাথে সাথে এখানকার পরিবেশ দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
প্রচণ্ড গরমে নগর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। মাত্রারিক্তভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাপমাত্রা৷ এ শহরের প্রায় ৬০ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে ফাঁকা ছাদ, যা তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে উচকে দিচ্ছে। ঢাকা শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা, যা এই নগরীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অনেকাংশে দায়ী৷
এহেন পরিস্থিতিতে ঢাকাকে মানুষের বাসযোগ্য রাখতে গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই৷ যেহেতু সমতলে গাছ লাগানোর জায়গা তেমন নেই, সেহেতু এ শহরের পরিবেশ উন্নয়ন এবং তাপমাত্রা হ্রাসে সবকটি বাড়ী ও অফিসের ছাদে ছাদ বাগান বাস্তবায়ন জরুরী বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ৷
বিশেষজ্ঞগণের মতে শহরের সবগুলো ছাদে যদি পরিকল্পিতভাবে বাগান করা হয়, তাহলে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মত তাপমাত্রা হ্রাস করা সম্ভব হবে৷
এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ঢাকা শহরের প্রায় ৬০ শতাংশ জায়গায় কংক্রিটের কাঠামো আছে, যা মূলত শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে৷ অধিক জনসংখ্যা, অতিরিক্ত নগরায়ন, যানবাহন, জলাধার ও গাছপালা কমে যাওয়ার কারণে ঢাকার পরিবেশ দূষণ বিশ্বের অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় অনেক বেশি৷
তাই তো নগর জীবনকে সহনীয় রাখতে এবং ঢাকার পরিবেশের উন্নয়ন ও তাপমাত্রা হ্রাসে সরকারী ও বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা ও পরিবেশ কর্মীরা শহরের বাসা ও অফিসের ফাঁকা ছাদসমূহে ছাদবাগান করার নানা উদ্যোগ ও কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।
ছাদবাগান করতে উৎসাহ যোগানের জন্য ইতোমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করোরেশন পৌর কর ১০% হ্রাসের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ছাদবাগানকে উদ্বুদ্ধ করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাদবাগানের জন্য বিভিন্ন রকমের আকর্ণীয় বাসরিক পুরষ্কার প্রদান করছেন।
অথচ দেশের পরিবেশ আন্দোলনের সাথে যুক্ত পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক নিউজ পোর্টাল গ্রীণ পেইজ এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক মিসেস ফাতেমা জিন্নাত এর নিজের তৈরী ছাদ বাগানটি ডা. জাহিদের মত ছদ্দবেশী ভদ্র লোকদের হাতে ধ্বংস হয়ে গেল।
প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বীরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা না গেলে এবং সমাজকে এদের মত হীন কর্ম সম্পাদন কারীদেরকে প্রতিরোধ করা না গেলে বিশ্বের জলবায়ুর পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণ রোধের চলমান আন্দোলন কিছুতেই বেগবান করা যাবে না।