আন্তর্জাতিক জীব-বৈচিত্র্য দিবস-২০২৫ ব্যাপক প্রচারণা ও উদ্দীপনায় উদযাপন
গত ২২ শে মে ছিল বিশ্ব জীববৈচিত্র্য (Biodiversity) দিবস। ২০০০ সালের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রতি বছর ২২ শে মে দিবসটি পালনের ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে প্রতিবছর ২২ শে মে এ দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও দিবসটি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি ও জাগ্রত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্যান্য মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়।
সেমিনার, অনলাইন প্রতিযোগিতা এবং আকর্ষণীয় কর্মসূচীর মাধ্যমে জীববৈচিত্র রক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন এবং সরকারী পর্যায়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় স্তরেই দিবসটি পালিত হয়েছে।
মানব জাতির বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ দ্বারা পৃথিবীতে জীববৈচিত্রের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। অনেক জীব জীববৈচিত্র্য পৃথিবী হতে হারিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং তা রক্ষা করা ও অবক্ষয়িত বাস্তুতন্ত্র পূনরুদ্ধারে সচেতনতা তৈরি করার জন্য এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
প্রতিবছরে ন্যয় এ দিবসটির জন্য একটি প্রতিপাদ্য নির্বাচন করা হয়েছে। এ বছরের দিবসটির প্রতিপাদ্যটি হ’ল “প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য এবং টেকসই উন্নয়ন(Harmony with nature and sustainable development)”।
এ প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জৈবিক বৈচিত্র্য দিবসে প্রকৃতির জন্য এই পরিকল্পনা কীভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (SDGs) সাথে সংযুক্ত তা তুলে ধরা হয়েছে, যা দেখায় যে উভয় এজেন্ডাকে একে অপরকে সমর্থন করার সাথে সাথে এক সাথে এগিয়ে যেতে হবে।
একটি বিষয় নিশ্চিত: আমাদের সমস্ত প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সত্ত্বেও আমরা আমাদের পানি, খাদ্য, ওষুধ, পোশাক, জ্বালানি, আশ্রয় এবং শক্তির জন্য সম্পূর্ণরূপে সুস্থ এবং প্রাণবন্ত বাস্তুতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল। বিধায় এ বছরের প্রতিপাদ্য দ্বারা বিশ্ব সম্প্রদায়কে প্রাকৃতিক বিশ্বের সাথে আমাদের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মানব জাতির কল্যাণে বিশ্ব জৈবিক সম্পদকে সম্মান করা, সুরক্ষা এবং মেরামত করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
জৈবিক বৈচিত্র্য সম্পদ হলো সভ্যতা গড়ে তোলার মূল স্তম্ভ। প্রায় ৩ বিলিয়ন মানুষের ২০ শতাংশ প্রাণীজ প্রোটিন মাছ থেকে আসে। ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষের খাদ্য উদ্ভিদ থেকে আসে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ মৌলিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য ঐতিহ্যবাহী উদ্ভিদ-ভিত্তিক ওষুধের উপর নির্ভর করে।
কিন্তু জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি আমাদের স্বাস্থ্যসহ সকলের জন্য হুমকিস্বরূপ। এটি প্রমাণিত হয়েছে যে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি জুনোজ (Zoonoses)(প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত রোগ) বৃদ্ধি করতে পারে, অন্যদিকে, যদি আমরা জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ণ রাখি, তবে এটি করোনাভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট মহামারীর অনুরূপ যে কোন মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য চমৎকার হাতিয়ার সরবরাহ করবে।
যদিও জৈবিক বৈচিত্র্য ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি অসাধারণ মূল্যবান বিশ্বব্যাপী সম্পদ, তবুও কিছু মানুষের কার্যকলাপের কারণে প্রজাতির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এই বিষয়ে জনশিক্ষা এবং সচেতনতার গুরুত্ব বিবেচনা করে, জাতিসংঘ প্রতি বছর আন্তর্জাতিক জৈবিক বৈচিত্র্য দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জলবায়ু-সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে আমরা এখন মাত্র পাঁচ বছর দূরে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (Sustainable Development Goals-SDGs) ২০৩০ সালকে তার ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে সবকটি অর্জনের তারিখ হিসেবে নির্ধারণ করেছে, অন্যদিকে কুনমিং-মন্ট্রিল গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্ক, যা ২০২২ সালে
COP 15 -তে গৃহীত হয়েছিল, তার ২৩টি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে যা এই তারিখের মধ্যে পূরণ করতে হবে।
SDG-গুলির মধ্যে দুটি – নম্বর ১৪ (Goal 14: Life below water), জলের নীচে জীবন এবং নম্বর ১৫ (Goal 15: Life on land), ভূমিতে জীবন – সরাসরি জীববৈচিত্র্যের সাথে সম্পর্কিত, তবে আরও অনেকগুলি পরোক্ষভাবে এই সমস্যার সাথে সম্পর্কিত। জীববৈচিত্র্য পরিকল্পনার লক্ষ্যগুলির মধ্যে রয়েছে ২০% অবক্ষয়িত বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা এবং আক্রমণাত্মক বিদেশী প্রজাতির সংখ্যা ৫০% হ্রাস করা।
এই প্রচারণার লক্ষ্য হল জরুরিতার অনুভূতি জাগানো। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে, বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য কাঠামো এবং SDGs-এর নিকট-মেয়াদী লক্ষ্যমাত্রা উভয়ই অর্জনের জন্য মাত্র পাঁচ বছর বাকি আছে।
এটি অর্জনের জন্য, বেসরকারি অর্থায়ন অপরিহার্য, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের নেচার ফাইন্যান্স অ্যান্ড বায়োডাইভারসিটি ক্রেডিটস রিপোর্টে বলা হয়েছে, যা প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্যের উদ্যোগগুলিকে পর্যাপ্ত অর্থায়নের জন্য বার্ষিক ৭০০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবধান চিহ্নিত করে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনুমিক ফোরাম এর সৌজন্যে
সূত্র:
- ইউ এন ওয়েবসাইট (UN website);
- উইকিপিডিয়া (Wikipedia);
- ইউ এন এনভাইরোনমেন্ট প্রগ্রাম ওয়েবসাইট (UN Environment Programme website), এবং
- ওয়ার্ল্ড ইকোনুমিক ফোরাম (Economic Forum