ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছ নিষিদ্ধ করে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারী

সরকার ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছের চারা তৈরি ও রোপণ এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে। এ বছর হতে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এ দু’ধরণের গাছের চারা রোপন করা যাবে না।।
সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন-১ অধিশাখা কর্তৃক এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গিকার পূরণে এ দুটি প্রজাতির গাছের চারা তৈরি, রোপণ এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে এসব গাছের পানি শোষণক্ষমতা অত্যাধিক এবং মাটিকে রুক্ষ করে তোলে। বিধায় দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এ দু’ধরনের আগ্রাসী প্রজাতির গাছের চারা রোপণের পরিবর্তে দেশি প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক কামাল হোসেন ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছ নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন এবং ‘ইউক্যালিপটাস ডিলেমা ইন বাংলাদেশ’ নামে বইও লিখেছেন। তিনি বলেন, দেশি প্রজাতিকে প্রাধান্য দিয়ে বনায়নের নির্দেশনা একটা ভালো উদ্যোগ।

কামাল হোসেনের মতে, ১৯২১ সালে সিলেটের চা–বাগানে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রথম ইউক্যালিপটাস নিয়ে আসা হয়। তারপর ১৯৬০ সালের দিকে কিছু আসে।
১৯৭৭-১৯৭৮ সালের দিকে আকাশমণিও বাংলাদেশে আনা হয়। এ দুটি প্রজাতি দেশে আনার পর বাংলাদেশ ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)কর্তৃক তখন পরীক্ষামূলকভাবে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, হাটহাজারী, মধুপুর, দিনাজপুরের বিভিন্ন জায়গায় এটির উপযোগিতা পরীক্ষা করে। তার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সর্বত্রই এই প্রজাতি দু’টরি দ্রুত বিস্তার ঘটে।
গবেষণায় দেখা যায় যে, ইউক্যালিপটাস পানি বেশি শোষণ করে; কারণ, এটার গ্রোথ বেশি। এ গাছটি প্রচুর বীজ ছড়ায়। ফলে, এই প্রজাতির আশে পাশে অন্যান্য প্রজাতির গাছ জন্ম নেওয়ার সুযোগ থাকে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি প্রজাতি ২টি যেহেতু অবক্ষয়িত ও অনুর্বর মাটিতে টিকে থাকার ক্ষমতা বেশী, সেহেতু এ প্রজাতিদ্বয় দেশের সে সব এলাকায় লাগানো যায় কি না তা পরিক্ষা করে দেখতে পারে।