কমলাপুর স্টেডিয়াম দূষিত হয় নোংরা ময়লা-আবর্জনায়
কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ থাকলে প্রধান ফটকে উচ্চ স্বরে শব্দদূষণের যেমন ছড়াছড়ি, তেমনি কড়াকড়ি নিয়মকানুনে। খেলা না থাকলে এই স্টেডিয়াম দূষিত হয় নোংরা ময়লা-আবর্জনায়। সন্ধ্যায় স্টেডিয়ামের আঙিনায় বসে মাদকের আসর।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ চলায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) আওতাধীন কমলাপুরের স্টেডিয়াম এখন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) অন্ধের যষ্টি। ঢাকায় এই এক স্টেডিয়ামে কখনো দিনে সর্বোচ্চ তিনটি ম্যাচও হয়।
বছরে গড়ে চার শর বেশি ম্যাচ হওয়া কমলাপুর স্টেডিয়ামের আর্টিফিশিয়াল টার্ফ অনেক আগেই মান হারিয়েছে। নারীদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ, অনুশীলন, বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ, প্রথম ও দ্বিতীয় লিগ, পাইওনিয়ার লিগসহ টানা ম্যাচের চাপে মাঠের টার্ফ এখন খেলোয়াড়দের কাছে আতঙ্কের আরেক নাম! মাঠের মান নিয়ে যেমন সমালোচনা আছে, তেমনি প্রশ্নবিদ্ধ স্টেডিয়ামের পরিবেশও।
যখন খেলা বা অনুশীলন থাকে, তখন অবশ্য স্টেডিয়ামের পরিবেশ বদলে যায়। ভোরের আলো ফোটার সময় এই মাঠে অনুশীলন করেন নারী ফুটবলাররা। ভোরের সময় স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণ বেশ পরিষ্কার থাকে—জানালেন জাতীয় নারী দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন।
তিনি বলেন, ‘আমরা খুব একটা ময়লা দেখি না। রাতেই এসব ময়লা নিয়ে যাওয়া হয়।’ টুর্নামেন্ট চলার সময়ও তেমন একটা ময়লা-আবর্জনা দেখা যায় না। তবে টুর্নামেন্ট শেষ হলে স্টেডিয়াম যেন ময়লার ভাগাড়!
স্টেডিয়ামের উত্তর প্রান্তে ভিআইপি গেট-সংলগ্ন ফুটপাত গত অক্টোবর পর্যন্তও ছিল এলাকাবাসীর ময়লা ফেলার স্থান। ছয় মাস আগেও দুটি ময়লার ডিপো ছিল স্টেডিয়ামের সামনে।
অনেক সমালোচনার মুখে সেগুলো সরানো হয় নভেম্বর মাসে অনূর্ধ্ব-১৫ নারী সাফের আগে। কয়েক মাস বিরতির পর আবারও আবর্জনার স্তূপ জমছে স্টেডিয়ামের গেটের সামনে।
২০২১ সাল থেকে স্টেডিয়ামের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় চলছে বাফুফে একাডেমির প্রশিক্ষণ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্যাম্পে থাকা এক ফুটবলার বললেন, ‘আগে ময়লার গন্ধে আমাদের ভীষণ কষ্ট হতো। স্টেডিয়ামের পাশেই প্রধান সড়ক। উচ্চ শব্দেও আমাদের মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। বৃষ্টির সময় দুর্গন্ধ আরও বাড়ে।’
এই ফুটবলারের কথার প্রমাণ মিলল গত মাসে হওয়া অনূর্ধ্ব-১৭ নারী সাফেও। বৃষ্টির পর দুর্গন্ধ ভেসে এসেছিল প্রেসবক্স পর্যন্ত!
স্টেডিয়ামের উল্টো পাশেই কমলাপুরের কার্গো টার্মিনাল। সেখানে দিনরাত শব্দদূষণ চলছেই। পুরো স্টেডিয়ামের প্রথম ও দ্বিতীয় তলা ভাড়া দিয়ে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার শোরুম। আছে পশুপাখির দোকানও।
স্টেডিয়ামের দক্ষিণ প্রান্তে পার্ক করা থাকে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। স্টেডিয়াম এলাকার পূর্ব প্রান্তে রীতিমতো কারখানাই খুলেছেন ব্যবসায়ীরা, সেখানে চলছে অটোরিকশার বডি তৈরির কর্মযজ্ঞ। বিশ্বে কোনো স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে ময়লার ভাগাড়, কারখানা ও ট্রাক পার্কিংয়ের এমন দৃশ্য রীতিমতো বিরল।
স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে দিন দিন জমছে ময়লার স্তূপ। বিষয়টি তিনি জানেন না বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন কমলাপুর স্টেডিয়ামের প্রশাসক জাহাঙ্গীর আলম। পরে ক্যামেরায় ধারণ করা ছবি দেখানো হলে ময়লা ফেলার স্থান স্টেডিয়ামের অংশ নয় বলে দায়টা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেন জাহাঙ্গীর।
কমলাপুর স্টেডিয়ামের পূর্ব প্রান্তের সীমানার ওপ্রান্তে মুগদা খালপাড় এলাকা। এলাকার মানুষ মূল সড়কে আসতে ব্যবহার করেন স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণ। সাধারণ মানুষের চলাচল কমলেই রাতে স্টেডিয়াম হয়ে ওঠে মাদকাসক্তদের অভয়ারণ্য। গ্যালারির পূর্ব প্রান্তে ওপরতলায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মীরা পরিবার নিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন।
কয়েক বছর আগে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় বিরতি পড়লেও আবারও স্টেডিয়াম ব্যবহৃত হচ্ছে বাসাবাড়ির কাজে। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব পরিমল সিংহের সঙ্গে, কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।