জলবায়ু পরিবর্তন: চীন ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নেট শূণ্য নির্গমনের লক্ষ্যে রয়েছে – শি জিনপিং


চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ঘোষণা করেছেন, চীন ২০৩০ সালের পূর্বেই বর্তমাণ কার্বণ নির্গমণের পরিমাণ হ্রাস করা শুরু করবে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে নেট- শূণ্য কার্বন নির্গমণের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে।
নিউইয়র্কের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভিডিওলিংকের মাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার সময় মিঃ শি এই পদক্ষেপের রূপরেখা উল্লেখ করেন।
এই ঘোষণাটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হচ্ছে।
চীন বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) এর নির্গমণকারী, বৈশ্বিক নির্গমনের প্রায় ২৮% জন্য দায়ী।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সমঝোতা স্থগিত হওয়ার পরে এবং কোীভধ ১৯ এর প্রাদর্ভাবের কারণে এই বছর জলবায়ু বিষয়ক কপ সম্মেলন (Conference of the Parties -COP26) স্থগিত হওয়ার পরে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এই বিষয়ে অগ্রগতির খুব কম প্রত্যাশা ছিল।
তবে চীনের রাষ্ট্রপতি নির্গমন নিয়ন্ত্রণের জন্য তার দেশের পরিকল্পনা সম্পর্কে সাহসী বক্তব্য রেখে জাতিসংঘের চলমান ৭৫তম ভার্চুয়াল অধিবেশনে বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছেন।
তিনি করোনাভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষিতে বিশ্বকে অর্থনীতির সবুজ পুনরুদ্ধার করার জন্য সকল দেশকে আহ্বান জানিয়েছেন।
মিঃ শি আরও বলেছিলেন, “আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের আগে (CO2) এর নির্গমন সর্বোচ্চ শিখর হতে হ্রাস করণ এবং ২০৬০ এর আগে কার্বন নেট শূণ্য কার্বণ নির্গমনতা অর্জন করা।”
এখন অবধি চীন বলেছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বশেষে এটি নির্গমনকে হ্রাস করবে, তবে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া এড়িয়ে গেছে।
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে সরে যেতে শুরু করলেও ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে চীন থেকে CO2 এর নির্গমন বাড়তে থাকে।
কোভিড -১৯ সংকটে দেশটির নির্গমন ২৫% হ্রাস পেয়েছে, জুনের মধ্যে তারা আবারও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন, সিমেন্ট এবং অন্যান্য ভারী শিল্প উৎপাদনে তারা ফিরে গেছে।

পর্যবেক্ষকদের ধারণা এই মুহূর্তে এই বিবৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে চীনা নেতা জলবায়ুর প্রশ্নটি মোকাবেলায় মার্কিন অনীচ্ছার সুযোগ নিচ্ছেন।
গ্রিনপিস এশিয়ার চীনা জলবায়ু নীতির বিশেষজ্ঞ লি শো বলেছেন, ” জাতিসংঘের ভার্চুয়াল অধিবেশনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণের কয়েক মিনিট পরে শি জিনপিংয়ের ভাষণে জলবায়ু প্রতিশ্রুতি স্পষ্টতই একটি সাহসী এবং গণনমূলক পদক্ষেপ।”
“এটি ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জলবায়ু এজেন্ডাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সি’ দৃঢ় আগ্রহ দেখিয়েছে।”
২০১৪ সালে মিঃ শি এবং তৎকালীন মার্কিন-রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত একটি আশ্চর্য চুক্তি করেছিলেন, যা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তির মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
লি শুয়ের মতে মিঃ শি পুনরায় বিশ্ববাসীর বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন।
“জলবায়ু কার্ডকে কিছুটা ভিন্নভাবে খেলতে পেরিয়ে শি কেবলমাত্র বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর রাজনীতির জন্য প্রয়োজনীয় গতি সঞ্চারিত করেনি, বরং বিশ্বের সামনে একটি উদ্বেগজনক ভূ-রাজনৈতিক প্রশ্ন উপস্থাপন করেছেন: একটি বিশ্বব্যাপী সাধারণ বিষয় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন এগিয়ে চলেছে। ওয়াশিংটন কি কার্ডটি চীনের দিকে খেলতে পারবে? “
শি তার বক্তব্যে নেট কার্বণ শূণের পরিবর্তে কার্বণ নিরপেক্ষতা (carbon neutrality) শব্দ দুটি ব্যবহার করেছেন, আসলেই কি তিনি ইহা দ্বারা নেট কার্বন শূণ্য বুঝিয়েছেন এবং দেশটি সেখানে পৌঁছাতে কী পদক্ষেপ নেবে তাসহ এই ঘোষণার বিষয়ে অনেক অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়েছে।
মার্কিন সাবেক জলবায়ু দূত টড স্টার্ন বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঘোষণা যে ২০৬০ এর আগে চীন কার্বন নিরপেক্ষতায় পৌঁছানোর ইচ্ছা নিয়েছে তা একটি বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ – যা ২০৫০ এর কাছাকাছি আরও ভাল অবস্থান।
আরও জোরালো নীতি অবলম্বন করে চীন অবিলম্বেই কার্বন নির্গমন হ্রাসের পদক্ষেপ শুরু করবে বলে তাঁর ঘোষণাটিও স্বাগত। অত্যন্ত উৎসাহজনক পদক্ষেপ।”
এখানে উল্লেখ্য যে, প্যারিশ চুক্তিতে ২০৫০ সালের মধ্যে নেট শূণ্য কার্বন নির্গমনের প্রতিশ্রুতিতে সবাই স্বাক্ষর করেছে। তবে বিশ্ব বাস্তবতায় এবং কোভিধ ১৯ মহামারীর কারণে ইতোমধ্যে অনেকেই ২০৩০ সালের মধ্যে এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়ন এবং ২০৫০ সালেরে মধ্যে নেটশূণ্য কার্বন নির্গমন সময় কিছুটা পিছিয়ে দিতে অভিমত ব্যক্ত করে চলেছেন।

বেশিরভাগ পর্যবেক্ষক একমত হয়েছেন যে, বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানী বিকাশের জন্য চীনের ভূমিকার কারণে চীন দেশটির এই ঘোষণাটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এনার্জি অ্যান্ড ক্লাইমেট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইসিআইইউ) এর পরিচালক রিচার্ড ব্ল্যাক বলেছেন,
“চীন কেবল বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন নির্গমনকারী নয়, সবচেয়ে বড় জীবাস্ম জ্বালানী অর্থায়নকারী এবং বৃহত্তম বাজার, তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই চীন জীবাশ্ম জ্বালানীগুলি থেকে দূরে সরে যাওয়ার ঘোষণার ফলে বিশ্বের অন্যান্য অংশ কিভাবে তার অগ্রগতি নিয়ে অগ্রসর হয় সে সম্পর্কে তার সিদ্ধান্তগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।”
“এই ঘোষণাটিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য একটি বড় প্রাপ্তি, যার নেতারা সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট শি’কে তাদের সাথে যৌথভাবে কার্বন নির্গমন হ্রাস করার অংশ হিসাবে ঠিক এই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন,
যা ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং [ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট] জায়ার বলসোনারোর বিরোধীতা সত্বেও জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপগুলির সর্বোত্তম প্রচেষ্টায় আগামী বছরের বৃটেনের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠব্য জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ ২৬ (Conference of the Parties -COP 26) সফলতা বয়ে আনবে।”