33 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
দুপুর ১:৪২ | ২৭শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
জলবায়ু পরিবর্তনে বিশুদ্ধ পানিসংকটে দেশ
পরিবেশ দূষণ

জলবায়ু পরিবর্তনে বিশুদ্ধ পানিসংকটে দেশ

জলবায়ু পরিবর্তনে বিশুদ্ধ পানিসংকটে দেশ

‘জলবায়ু’ শব্দটি ব্যাপক পরিচিত হলেও অনেকেই শব্দটির মর্মার্থ উপলব্ধি করতে পারেননি। বিষয়টি বোঝেন সবাই, কিন্তু বোঝাতে সক্ষম নন। জলবায়ুর ক্ষেত্রে একটি ছোট্ট হিসাব-নিকাশ আছে। হিসাবটি জানানোর আগে আমরা জেনে নিই জলবায়ুর উপাদানগুলো।

যেমন- বায়ু, বায়ুচাপ, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, মেঘ-বৃষ্টি, তুষারপাত, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যৎপাত ইত্যাদি জলবায়ুর উপাদান। আর ছোট্ট হিসাবটি হচ্ছে, কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের ২৫-৩০ (মতান্তরে ১০-১২) বছরের গড় আবহাওয়াই হচ্ছে জলবায়ু। অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পরিবর্তনটিই হচ্ছে মূলত জলবায়ু পরিবর্তন।

জলবায়ু পরিবর্তনকে আমরা সাধারণত ‘জলবায়ু সংকট’ বলে থাকি। এ ছাড়া আবহাওয়ার মতো জলবায়ুর উপাদানগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় অক্ষাংশ, ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা, বনভূমি, ভূমির ঢাল, পর্বতের অবস্থান, সমুদ্র থেকে দূরত্ব, সমুদ্রস্রোত, বায়ুপ্রবাহের দিক, মাটির বিশেষত্ব ইত্যাদির মাধ্যমে।

এই নিয়েই জলবায়ু সংকট তৈরি হয়। যার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে; বৈজ্ঞানিক ভাষায় যাকে ‘গ্রিনহাউস’ প্রতিক্রিয়া বলা হয়। সর্বসাধারণের কাছে সেটি বৈশ্বিক উষ্ণতা নামেও পরিচিত।

জলবায়ুর প্রভাবের সঙ্গে আমাদের বেঁচে থাকার সম্পর্কটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ২০১৯ সালের বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। অন্যান্য বছরের তুলনায় সেই বছরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বিশ্ববাসীকে ভাবিয়ে তুলেছিল। উপমহাদেশীয় অঞ্চলেও ব্যাপক তাপমাত্রা বিরাজ করছিল ২০১৯ সালে।

শুধু তাই-ই নয়, ভারতের শতাধিক লোকের মৃত্যুর খবরও আমরা জানতে পেরেছি একই বছর। এসব হচ্ছে শুধু জলবায়ু সংকটের প্রভাবে। উল্লেখ্য, বন্যা, খরা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি জলবায়ুর প্রভাবেই ঘটছে। নদীভাঙনের বিষয়টিও জলবায়ু সংকটের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

জলবায়ু সংকটের কারণে বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে যেমন, তেমনি সেসব ঘূর্ণিঝড় খুব শক্তিশালী হয়ে উপকূলে আঘাতও হানছে। আমরা ইতিপূর্বে সুপার সাইক্লোন-৯১, সিডর, আইলা, মোরা, বুলবুল, আম্ফান ও ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবলীলা দেখেছি।

আমরা দেখেছি অসংখ্য মানুষ, গবাদি পশু আর বন্যপ্রাণীর মরদেহ যত্রতত্র পড়ে থাকতে। সেই সঙ্গে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির বিষয় তো আছেই। এ ছাড়া জলোচ্ছ্বাসের কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ভূমির লবণাক্ততা বৃদ্ধির বিষয়টি আশঙ্কা জাগিয়েছে আমাদের।

যার কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে চাষাবাদে যেমন বিঘ্ন ঘটছে, তেমনি চিংড়ি চাষে ব্যাপক বিপর্যয় নেমে এসেছে। আবার অতিরিক্ত লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য, গাছগাছালি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ভয়ংকর দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে শুধু একটি কারণেই, আর সেটি হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন।

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা জলবায়ু সংকটের জন্য মূলত দায়ী হচ্ছে শিল্পোন্নত দেশগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা। সেই দেশগুলোর স্বেচ্ছাচারিতার খেসারত দিতে হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে এখন।

তারা একদিকে কার্বন নিঃসরণ বাড়িয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে জলবায়ু সংকটের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে অনুদানও দিচ্ছে। অনেকটা গোড়া কেটে পানি ঢালার মতো।

সমীক্ষায় জানা গেছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে হিমালয়ের বরফও গলে যাচ্ছে দ্রুততর। ২০০০ সাল পর্যন্ত হিমালয়ের বরফ শতকরা একভাগ হারে গলেছে। বর্তমানে হিমালয়ের বরফ দ্বিগুণ হারে গলছে! তাতে চীন, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানসহ এশীয় অঞ্চলের শতকোটি মানুষ বিশুদ্ধ পানি সমস্যায় পড়বে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে জার্মানির বন শহরে যখন জলবায়ু সম্মেলন চলছিল, ঠিক তখনই ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এর রিপোর্টে এসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছিল।

অনুমান করা হয়েছে, সারা বিশ্বে মোট মজুত জলের পরিমাণ ১ দশমিক ৩৮৬ বিলিয়ন কিউবিক কিলোমিটার। তার মধ্যে সমুদ্রে সঞ্চিত লবণাক্ত জলের পরিমাণ ৯৭ দশমিক ২ শতাংশ, যা মোটেই পানযোগ্য নয়। অন্যদিকে ২ দশমিক ১৫ শতাংশ পানি জমাটবদ্ধ হয়ে আছে বরফাকারে। সেটিও পানযোগ্য নয়।

বাকি শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ পানি সুপেয় হলেও প্রায় শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ পানি রয়েছে ভূগর্ভে, যা উত্তোলনের মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন পানযোগ্য জলের চাহিদা পূরণ করতে হয়। এই পানি আমাদের কাছে বিশুদ্ধ পানি হিসেবে পরিচিত। এই জলের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে প্রত্যেক মানুষের জন্য দৈনিক গড়ে তিন লিটার হারে।

ভূগর্ভস্থ পানি ছাড়া নদ-নদী, খাল-বিল কিংবা পুকুর-জলাশয়ের পানি সুপেয় হলেও তা বিশুদ্ধ নয়। তবে সেটিও আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। বিশেষ করে গোসলাদি, রান্নাবান্না, জামাকাপড় ধোয়ার কাজে এ জলের ব্যাপক প্রয়োজন পড়ে। তাতে একজন মানুষের সব মিলিয়ে গড়ে ৪৫-৫০ লিটার জলের প্রয়োজন হয়।

বাস্তবতা হচ্ছে, বিশ্বের মোট আয়তনের তিন ভাগ জলরাশি হলেও বিশুদ্ধ পানিসংকটে ভুগছে ৮০টি দেশের প্রায় ১১০ কোটি মানুষ। এ ছাড়া প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ১৮ লাখ শিশু প্রাণ হারাচ্ছে শুধু দূষিত পানি পান করে। বিশুদ্ধ জলের অভাবের নানা কারণও রয়েছে।

এর মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, খরা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া এবং আর্সেনিকের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। জানা যায়, বৈশ্বিক উষ্ণতা আর মাত্র ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লেই বিশ্বের ১৪৫ কোটি মানুষ সুপেয় পানিসংকটের মুখোমুখি হবে।

তার মধ্যে এশিয়া মহাদেশে ১২০ কোটি এবং আফ্রিকা মহাদেশে ২৫ কোটি মানুষ এর আওতায় পড়বে। এ থেকে বাদ যাবে না বাংলাদেশের মানুষও। বরং তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ বেশি পানিসংকটে পড়বে। এ ছাড়া অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় এশীয় অঞ্চলে এর প্রভাব পড়বে খানিকটা বেশি।

তার ওপর আমাদের জন্য মহা অশনিসংকেত হচ্ছে, হিমালয়ের বরফ গলার হার দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়া। যেখানে ২৫ বছর আগে ৫০ সেন্টিমিটার বরফ গলেছে, সেখানে দ্বিগুণ হারে বরফ গলছে বর্তমানে। হিমবাহ গবেষকদের অভিমত, এই হারে বরফ গলতে থাকলে এশিয়ার কয়েকটি দেশের ১০০ কোটি মানুষ সরাসরি বিশুদ্ধ পানি সমস্যায় ভুগবে।

এই দুর্যোগ থেকে উত্তরণের পথও বাতলে দিয়েছেন গবেষকরা। তারা স্পষ্ট বলেছেন, কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামাতে হবে। তাতে বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধ হবে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত