ঢাকার জলাশয়ে প্রতিদিন মিশছে ২৩০ টন মানববর্জ্য: নিরাপদ স্যানিটেশনে দ্রুত অগ্রগতির আহ্বান
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ২৩০ টন মানববর্জ্য সরাসরি বিভিন্ন খাল, জলাশয় ও উন্মুক্ত পরিবেশে মিশছে। এই ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক টয়লেট কনফারেন্স ২০২৫-এ, যা ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ খ্রি. তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।
অনুন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৪২০ কোটি ডলারের ক্ষতি হচ্ছে, যা দেশের জিডিপির প্রায় ১.৫ শতাংশ। শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, এই অব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও শিশু স্বাস্থ্য।
বিশ্বব্যাপী পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধি এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণে আয়োজিত এই দুইদিনের সম্মেলনে, সবার দৃষ্টি ছিল নিরাপদ স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা ও করণীয় নিয়ে।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, “খোলা জায়গায় মলত্যাগ শিশুদের স্বাস্থ্য ও বিকাশে বড় বাধা। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, কিন্তু জলবায়ু সংকটের মতো চ্যালেঞ্জ এই অগ্রগতিকে মুহূর্তেই নস্যাৎ করে দিতে পারে। ফেনীর বন্যার অভিজ্ঞতা তা প্রমাণ করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি শিশুর অধিকার আছে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠার। এটি নিশ্চিত করতে সবার আগে প্রয়োজন নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। সরকার ও বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে কাজ করে এই ব্যবস্থাকে প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে।”
ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, “এই সম্মেলন শুধু আলোচনা নয়, এটি একটি আন্দোলনের অংশ—যা স্যানিটেশনকে মানবাধিকার, পরিবেশ রক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। আমাদের এখনই টেকসই সমাধানে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, বর্তমানে দেশের সাড়ে ছয় কোটিরও বেশি মানুষ নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশনের আওতার বাইরে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অর্জনের জন্য স্যানিটেশন খাতে প্রচলিত গতির চেয়ে অন্তত আট গুণ বেশি গতি প্রয়োজন।
এই সম্মেলনের আয়োজক সংস্থাগুলোর মধ্যে ছিল গেটস ফাউন্ডেশন, কিম্বার্লি-ক্লার্ক, নেদারল্যান্ডস দূতাবাস, সুইডেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা ও যুক্তরাজ্য সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা।