28 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
দুপুর ১:০৮ | ১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
তিস্তা সেচ এলাকায় চাষাবাদ বৃদ্ধিতে ৪ লাখ গাছ কাটছে পাউবো ও বন বিভাগ
পরিবেশ রক্ষা

তিস্তা সেচ এলাকায় চাষাবাদ বৃদ্ধিতে ৪ লাখ গাছ কাটছে পাউবো ও বন বিভাগ

তিস্তা সেচ এলাকায় চাষাবাদ বৃদ্ধিতে ৪ লাখ গাছ কাটছে পাউবো ও বন বিভাগ

নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে আমাদের রক্ষা করে থাকে বৃক্ষ। এ বৃক্ষরাজি উজাড়ের ফলে পরিবেশ ও জনজীবনে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন অধিকাংশ বক্তব্যে বৃক্ষ রোপনে উৎসাহিত করে যাচ্ছেন, এমন সময়ে তিস্তা সেচ এলাকায় চাষাবাদ বৃদ্ধিতে সেচ খালগুলো সংস্কারের নামে খালের উভয় পাশে সামাজিক বনায়নের প্রায় ৪ লাখ গাছ কেটে ফেলা হবে। এতে প্রাকৃতিক বির্পযয়সহ জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ার আশংকা রয়েছে।



তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ কৃষিতে ব্যবহারের জন্য ১৯৯১ সালে সৈয়দপুর, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জসহ ১২ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে (ক্যানেল) খাল খনন করা হয়।

উল্লেখযোগ্য খালগুলো হলো, দিনাজপুর সেচ খাল, বগুড়া সেচ খাল, রংপুর সেচখাল, এস সেভেনটি খাল, এস ফোরটি খাল, এস সিক্সটি খাল, টি-২ এস সেভেনটি খাল, তিস্তা প্রধান সেচ খাল, এস ওয়াই আর সেচ খাল, এস টু আর সেচ খাল, এস ফাইভ ডি সেচ খাল, এস এইটটি সেচ খাল, এস থ্রি-ডি সেচ খাল, এস সিক্সডি সেচ খাল, বিসিথ্রি সেচ খাল। এ সকল খালের সংযোগ রয়েছে ছোট প্রায় ৪০ টি সরু ক্যানেলের।

বন মন্ত্রণালয় ও পানি মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে নানা শর্তে চুক্তির স্বারকে এ সকল খাল ও সংযোগ ক্যানেলগুলোর উভয় ধারে সামাজিক বনায়নের বৃক্ষ রোপন করেন। মেয়াদ পুর্তিতে কেটে পুনরায় রোপন করা হয় চারা।

এভাবে স্থানীয় বনবিভাগ ও উপকারভোগীর মাধ্যমে ২০০২ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আকাশমনি, ইউক্যালিপটাস, জারুল, পারুল, বহেরা, হরতকি, নারকেল, আম, জাম, বট, ডুমুর, গামার, গুটি, মেহগনি, সাদা কড়ই, রেইনট্রি, কটিগুয়া, পাকুড়, জলপাই, রাজকড়াই, বকহিন, কদম, পাউয়া জিগা, জিগনি, কাঠাল, মিল কড়ই, তরুল, পলাশ, বাবলা, শিশু, আমলকি, নুনাতি, ছাইতন, অর্জুন, মানডাল, চাম্পা, সোনালু, কৃষ্ণচুড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতীর বনজ, ফলজ ও ওষুধী গাছ রোপন করেন। এ উদ্যোগে উত্তরের এ সকল এলাকার প্রকৃতিকে সবুজ স্নিগ্ধতায় সাজিয়ে তুলেছিল।

সম্প্রতি কৃষিতে পানি সরবরাহ বৃদ্ধির নামে বিশাল এলাকাজুড়ে সামাজিক বনায়নের বৃক্ষরাজি ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে সংশ্লিষ্টরা।



উক্ত বিষয়টি রংপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মতলুবুর রহমানকে জানালে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। কৃষিতে ফলন বাড়ার লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই প্রকল্পের গাছগুলো সরাতে হচ্ছে।

কারণ এই শর্তে সেখানে গাছ রোপন করা হয়েছিল। তবে তারা যে গাছ নষ্ট করছে সে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত আছি। বিশাল এ বনায়নের গাছ অপসারণের পর আবার রোপন হবে। একটু সময় লাগবে। এতে প্রকৃতিতে প্রভাব পড়তে পারে। এক্ষেত্রে করার কিছুই নেই।’

জনবল স্বল্পতার দোহাই দিয়ে বিশাল সামাজিক বনায়নের গাছগুলো অপসারন প্রক্রিয়ায় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে আলোচনা করে তারপর ব্লেজিং, নাম্বার বসানো, পরিমাপ এবং টেন্ডারের পর বিক্রি করার কথা।

কিন্তু এতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। তাই এ সম্পর্কে কোনো কিছুই মানতে চাইছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। পাশাপাশি অনেক এলাকায় ব্লেজিং, নাম্বারিং ও পরিমাপ করা গাছগুলোকে এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে মাটির স্তুপের নিচে ঢেকে দেয়া হচ্ছে।

কথা হয় বনায়নের উপকারভোগী দলের সভাপতি সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে তিনি জানান, গাছগুলো খাল থেকে অনেক দূরে। এমনকি বাঁধের এক কিনারে। তাদের খনন ও বাঁধ পুন:নির্মাণ কাজে কোনো সমস্যা হতো না। তারপরেও এ সকল গাছ অপসারনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।



সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের সামাজিক বনায়ন এলাকার সভাপতি মোহাইমিনুল ইসলাম ঝন্টু বলেন, ‘আমাদের বাগানটি সংযোগ ক্যানেলের দুই ধারে ১৫ কিলোমিটারে ১৫ হাজার চারা ২০১৯ সালে রোপন করা হয়েছে।

৭৫ জন উপকারভোগীর নিয়মিত যত্নে গাছগুলো ১২ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতা হয়েছে। এগুলো বিক্রি করলে চুলার খড়ি ছাড়া কিছুই হবে না। তাই কোনো মুল্য পাওয়া যাবে না। কিভাবে তারা এই অপরিপক্ক গাছগুলো নিধন করবে? বিষয়টি ভাবলেই চোখে পানি আসছে।’

এ বিপুল সংখ্যক বৃক্ষরাজি ধ্বংস করায় উত্তরের এ জনপদ গুলোতে চলতি মৌসুমেই প্রকৃতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হাকিম বলেন, ‘প্রতি বছর উত্তরাঞ্চলে গ্রীস্মকালে উষ্ণতা বাড়ছে। গত বছর গড় তাপমাত্রা ছিল সর্বনিম্ন ৩৫ ও সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে প্রচণ্ড দাবদাহ হয়েছিল। আর বিশাল এলাকার সবুজ বৃক্ষ কর্তন করা হলে আগামিতে এ অঞ্চলে মরুকরণের আশংকা রয়েছে। তাই এখনই সচেতন হওয়া উচিত।’

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত