দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বায়ুদূষণ কমানো একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, যা অর্থনৈতিক সক্ষমতা, উন্নয়নের ধরন, যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদফতর আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প’ শীর্ষক পরামর্শ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের বায়ুদূষণের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ আসে বাইরের দেশ থেকে এবং ২৮ শতাংশ পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে। তাই দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকা জরুরি।
তিনি বলেন, জ্বালানির মান উন্নয়ন ও রিফাইনারির সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে দূষণ কমানো সম্ভব নয়। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে রিফাইনারি উন্নত হওয়ার পরও দূষিত শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে। তাই বাংলাদেশকেও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রকল্প তখনই অর্থবহ হবে, যখন বাস্তবায়নের মাধ্যমে দূষণ কমানোর স্পষ্ট অগ্রগতি দেখা যাবে। শুধু পর্যবেক্ষণ করে পরিস্থিতির অবনতি তুলে ধরলেই চলবে না, কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবেশ অধিদফতর একটি হটলাইন চালু করবে, যেখানে মানুষ শীতের মাসগুলোতে বায়ুদূষণের অভিযোগ জানাতে পারবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানান, সড়ক বিভাজকে গাছ লাগানোর মাধ্যমে ধুলাবালি কমানো সম্ভব, যা পদ্মা সেতু সংলগ্ন এলাকায় ইতোমধ্যেই দেখা গেছে। পরিবেশ অধিদফতরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেন আগামী বছর শীতকালে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বায়ুদূষণ কমাতে কড়া অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ইটভাটাগুলোতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে কিছু স্টিল কারখানা শীতকালে ২ থকে ৩ মাস বন্ধ রাখতে হতে পারে। এছাড়া, ২০ বছরের পুরনো বাস রাস্তায় না চালানোর সিদ্ধান্ত কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, এই প্রকল্প এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে, যাতে জনগণ বায়ুর গুণগত মানের উন্নতি দেখতে পায়। যদি ধুলাবালির দূষণ ১৩ শতাংশ কমানো যায় এবং শিল্প কারখানার নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যে প্রকল্পটিতে যুক্ত হয়েছে। অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদেরও সম্পৃক্ত করা দরকার, যাতে প্রকল্পটি দেশের প্রকৃত চাহিদা পূরণ করতে পারে এবং জনগণের জন্য বাস্তবসম্মত সমাধান নিয়ে আসে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ; পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মো. কামরুজ্জামান; ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ম্যানেজার-এনভায়রনমেন্ট ক্রিশ্চিয়ান অ্যালবার্ট পিটার, এবং সিনিয়র এনভায়রনমেন্ট স্পেশালিস্ট অ্যানা লুইসা লিমা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।