দেশে অব্যবস্থাপনার একটি বড় দৃষ্টান্ত হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: পরিবেশ উপদেষ্টা
দেশে অব্যবস্থাপনার একটি বড় দৃষ্টান্ত হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। গত ৫৩ বছরে গড়ে ওঠা এই সমস্যার সমাধান দেড় বছরের সরকারের কাছে চাওয়াটা একটু বেশি হলেও যৌক্তিক ও যথার্থ। তবে এই চাওয়ার সঙ্গে পাওয়া মেলাতে সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু সেই সময় কি এই সরকারের আছে?
‘উপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ অধিকারকেন্দ্রিক সংস্কার’ শীর্ষক এক নাগরিক সংলাপে এ কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘এই অল্প সময়ে আমরা যা করতে পারি, তা হচ্ছে খুব ভালো ও শক্তিশালী কিছু আইন তৈরি করে দিতে পারি; যা শুধু কাগজে–কলমে নয়, সামগ্রিকভাবে মানুষের আচরণ এবং মনস্তাস্ত্বিক পরিবর্তনেও ভূমিকা রাখবে।
বর্তমানে আমরা বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু—এই চারটি দূষিত নদী বাঁচানোর একটি পরিকল্পনা করছি। এটাও অনেক লম্বা সময়ের কাজ। নদী হোক কিংবা সমাজ, পরিষ্কার করার জন্য সময়টুকু আমাদের দিতে হবে।’
নাগরিক সংলাপের ধারণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, দেশে প্রতিদিন আনুমানিক ২৫ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। উপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় প্রতিদিনের এই বর্জ্যের ৫৫ ভাগই সঠিক ব্যবস্থাপনার বাইরে থেকে যায়। এগুলো থেকে নির্গত হয় ক্ষতিকর গ্যাস। এতে দূষিত হয় বাতাস। দূষিত হয় মাটি ও পানিও।
ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মাহাবুবুর রহমান তালুকদার। তিনি বলেন, ‘আমাদের ল্যান্ডফিল্ডগুলোর ৮০ ভাগই ময়লা (বর্জ্য) দিয়ে ভরাট হয়ে আছে। আর সাত–আট বছর পরেই সেগুলোতে আর জায়গা থাকবে না।
তাই আমাদের নাগরিক পর্যায় থেকেই সচেতনতা দরকার। গৃহস্থালির ময়লাগুলো পচনশীল ও অপচনশীল—এই দুই ভাগে আলাদা করা ছাড়াও প্লাস্টিক বর্জ্যের পুনব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
দেশের পৌরসভা ও নগর পর্যায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) সিনিয়র একাডেমিক কো–অর্ডিনেটর মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম।
সমাধান নিয়ে তিনি বলেন, জৈব-অজৈব, চিকিৎসা, প্লাস্টিক, ইলেক্ট্রনিক, ইত্যাদি বর্জ্য আলাদাভাবে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এতে কাজ সহজ হবে, ল্যান্ডফিল্ডের ওপর চাপ কমবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস হাসানুল বান্না বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ আছে। পরিবেশ আদালত আইন আছে, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা আছে।
এই আইনগুলোর আওতায় বর্তমানে মোট ১০২টি মামলা চলছে। তিনি বলেন, এত মামলা; কিন্তু কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আজ পর্যন্ত হয়নি। তাই যথাযথ আইন তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং ব্লাস্টের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, ‘সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তখনই সম্ভব হবে, যখন নাগরিক হিসেবে আমরা সচেতন হব। আর আইন তৈরির পাশাপাশি সরকারই পারে জনসচেতনতা তৈরি করতে।’