নীল অর্থনীতি (Blue economy) এবং বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয় –
এক অপার সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দ্বার উন্মোচিত
সাগর, মহাসাগর – নীল লোনা জল, আর সে জলে ডুবে আছে যেন পৃথিবীর সব সম্পদ।
যেন ঠাকুর মায়ের ঝুড়ির- সে রূপ কথার দৈত্য – দানবের দেশ, যেখানে দৈত্য দানবেরা পৃথিবীর সব সম্পদ লুকিয়ে রেখেছে । সমুদ্রের নীল লোনা জলে, জলের নীচে, আরও নীচে একবারে সমুদ্রের তলদেশে, তলদেশেরও তলদেশে।
তাইতো হয়তো জীন-পরী-দৈত্য-দানবের গল্পে দক্ষিণে যেতে বারণ করা হয়েছে। কারণ, আমাদের দেশের তো বটেই – এ পৃথিবীরই সাগর – মহাসাগরের অধিকাংশ রয়েছে দক্ষিণ গোলার্ধে।
নীল লোনা জলে, জলের নীচে, আরও নীচে একবারে সমুদ্রের তলদেশে, তলদেশেরও তলদেশে – এর অর্থ জল শুকালে সম্পদ (খাবার লবন), জলে রয়েছে সম্পদ (জীবিত অথবা মৃত), জলের উপর দিয়ে চলাচলে সম্পদ (জলযান, বানিজ্য, পোর্ট ইত্যাদি), জলের স্পর্শে সম্পদ (পর্যটন, জলজ চাষ), জলের নীচে রয়েছে সম্পদ (খনিজ লবন, মুক্তা, রাসায়নিক মৌল ও মহা মূল্যবান ধাতব ইত্যাদি।), আরও নীচে রয়েছে সম্পদ (তৈল, গ্যাস ও খনিজ পদার্থ ) – যেন যাদুর জল! নীল লোনা জল। সে সম্পদের টেকসই ব্যবহার, আহরণ ও সংরক্ষণের অর্থনীতিই হল নীল অর্থনীতি (Blue economy)।
তাই তো নীল অর্থনীতি – এক অপার সম্ভাবনাময় অর্থনীতির ক্ষেত্র- আমাদেরকে যেন তা আহরণে হাতছানি দিচ্ছে।
নীল অর্থনীতি বা Blue economy হল সামুদ্রিক ভিত্তিক অর্থনৈতিক বিকাশ যা মানুষের কল্যাণ ও সামাজিক সাম্যকে উন্নত করে এবং পরিবেশগত ঝুঁকি (Risk) ও পরিবেশগত ঘাটতি (Ecological scarcity) হ্রাস করে। ইহার সহজ অর্থ হল টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমুদ্র এবং সামুদ্রিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার।
আমাদের এ গ্রহের প্রায় ৭২ শতাংই সমুদ্র-মহাসমুদ্রগুলো দখল করে আছে এবং বিশ্ব জনসংখ্যার বিশাল অংশের খাদ্য ও জীবিকা সমুদ্রের উপর নির্ভরশীল। বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ বানিজ্যই সমুদ্র নির্ভর।
বেলজিয়ামের নাগরিক গুল্টার পউলি সমুদ্র অর্থনীতি (Blue Economy) ধারনাটি (Concept)) তৈরি করেন যা ২০১২ সালে ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে জাতীসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাএা (SDG) সংক্রান্ত বিশ্ব সম্মেলন (The Earth summit, Rio+20) তে স্বীকৃত হয়।
নীল অর্থনীতির (Blue Economy) ক্ষেএগুলো হল :-

১। সামুদ্রিক বানিজ্য এবং বন্দর (Maritime transport and ports):- সামুদ্রিক বানিজ্য, পোর্ট এবং হারবার সুবিধা, সামুদ্রিক সংরক্ষণ কার্যাদি, Amenity values যথা: আমোদ প্রমোদ, মনের সুস্থ্যতা (Mind fresh) ও বিনোদনের জন্য স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বসবাস, অনুষ্ঠান বা ভ্রমনের একাগ্রতার স্থানীয় মুল্য ইত্যাদি।
২। সামুদ্রিক মৎস আহরণ: প্র্রাকৃতিক মৎস আহরণ।
৩। সমূদ্র উপকূলের লোনা জলে মৎস ও লবন চাষ।
৪। কৃত্রিমভাবে বানিজ্যিক সামুদ্রিক মৎস জাতিয় খাদ্য ও সৌন্দর্য বর্ধণকারী দ্রব্যাদির চাষ (Mari culture, sport fishing, (Recreational/ Substance fishing) ইত্যাদি। (Mari culture – সমুদ্রের খোলা জলে কৃত্রিম আবদ্ধ পকুর সৃষ্টি করে বা টাংক স্থাপন করে খাদ্য জীব যেমন চিংড়ী মাছ, ফিনফিস, সেলফিস, খাদ্য তৈরীর শেওলা জাতীয় উদ্ভিদ, মুক্তার জন্য ঝিনুক চাষ, মানুষের ও পশুর জন্য খাদ্য- ঐষুধ-জ্বালানীর জন্য আগাছা চাষ ইত্যাদি)।
৫। খনিজ সম্পদ আহরণ (Offshore petroleum): তৈল, গ্যাস ইত্যাদি খনিজ সম্পদ আহরণ।
৬। সংরক্ষণ ও পরিবেশগত উন্নয়ন (Conservation and environmental protection): সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার। সামুদ্রিক ও পরিবেশের দূষণ/ক্ষতি না করে সম্পদের সংরক্ষণ ও সুষ্ঠু ব্যবহার এবং এমনভাবে আহরণ করা যাতে দূষণ ও অতিমাত্রা আহরণের ফলে সম্পদ নি:শেষ হয়ে না যায়।
এর জন্য সামুদ্রিক দূষণ প্রতিরোধ করা, সামুদ্রিক মাছের অভয়ারন্য সৃষ্টি করা, সমুদ্র তীর হতে নির্দিষ্ট দূরে এবং নির্দিষ্ট আকারের নীচে মাছ শিকার না করা, সামুদ্রিক সীমা সংরক্ষণ, পাহারা ও কোস্টাল পুলিশিং ব্যবস্থা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ইত্যাদি এর অর্ন্তভুক্ত।
৭। পর্যটন (Tourism): সী বীচ ও হোটেল-মোটেল এবং সংশ্লিষ্ট বানিজ্য, সামুদ্রিক ভ্রমনতরী(Cruise ship), ইয়াচিং(Yaching) ইত্যাদি ব্যবস্থা।
৭। সামুদ্রিক জীবাশ্মা আহরণ: মৃত ঝিনুক, মুক্তা, কোরাল ইত্যাদি আহরণ।
৮। সামুদ্রিক খনন ও সামুদ্রিক খনিজ দ্রবাদির আহরণ (Dredging + aggregates extraction): খনিজ বালি সংগ্রহ, জাহাজ চলাচলের জন্য সামুদ্রিক খনন কাজ।
৯। নীল শক্তি (Blue energy) সামুদ্রিক জোয়ার ভাটা, পানির স্রোত, সামুদ্রিক পানির ঢেউ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন। সমুদ্রের তীরে, অগভীর পানিতে বা চরে সোলার প্যানেল স্থাপন ও বাতাস কল (Wind Mails) স্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন।
১০। জল কৃষি/জলজ চাষ(Aqua culture): কৃত্রিমভাবে বানিজ্যিক সামুদ্রিক মৎস জাতিয় খাদ্য ও সৌন্দর্য বর্ধণকারী দ্রব্যাদির বা মাছ জাতীয় প্রাণীর খাদ্য চাষ।
অর্থনীতির লক্ষ্যগুলো:
ক) অর্থনৈতিক বৈচিত্র (Economic diversification)
খ) উচ্চ মূল্যযুক্ত কর্মসংস্থান (High values job creation)
গ) খাদ্য নিরাপত্তা (Ensure food security) নিশ্চিত করণ।
ঘ) সামুদ্রিক পরিবেশের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও রক্ষা করণ।
নীল অর্থনীতির উদীয়মান শক্তিশালী ক্ষেত্রগুলো (Emerging sectors of Blue Economy):-
১। নীল শক্তি:
- উপকূলবর্তী অঞ্চলে সামুদ্রিক ব্যারেজ (Tidal Barrage) নির্মাণের মাধ্যমে জোয়ার ভাটায় বিদ্যুৎ উৎপাদন।
- সামুদ্রিক ঢেউ (Wave energy) ব্যবহার করে বিদুৎ উৎপাদন।
- সমুদ্র স্রোত ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন।
- সমুদ্র তীরে বা আগভীর সমুদ্রে বা চরাঞ্চলে সোলার প্যানেল (Solar panel) স্থাপন করে বা বাতাস কল ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন।
- মহাসামুদ্রিক তাপীয় শক্তি (Ocean thermal converted) – মহাসমুদ্রের গভিরের শীতল জল এবং নিরিক্ষীয অঞ্চলের সমুদ্রের উপরিভাগের উষ্ণজল এর তাপমাত্রার তফাৎ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন।
- জীবাশ্মা জ্বালানি (Hydrocarbons) হতে বিদুৎ উৎপাদন।
ক) সমুদ্র উপকূলে Tidal Barrage নির্মাণের মাধ্যমে জোয়ার এবং ভাটা কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন এর কয়েকটি ছবি:

(খ) সমূদ্রের টেউ হতে বিদ্যুৎ উৎপাদন (Sea Wave Power Plant) এর কিছু ছবি:


(গ) সমুদ্র তীরে বা অগভীর সমুদ্রে বা চরাঞ্চলে সোলার প্যানেল (Solar panel) স্থাপন করে বা বাতাস কল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন:

(ঘ) মহাসামুদ্রিক তাপীয় শক্তি (Ocean thermal converted):

(ঙ) জীবাশ্মা জ্বালানি (Hydrocarbons) – ডিজেল, পেট্রোল, গ্যাস ইত্যাদি:

২। জলজ চাষ (Aqua culture):
- খাদ্য নিরাপত্তা (Food Security)
- প্রাণির খাদ্য উৎপাদন (Animal Feed)
(ক) সাগরে কৃত্রিম পুকুর তৈরী করে বা বদ্ধ/ খোলা খাঁজায় মাছ/ঝিনুক চাষ:







(খ) সাগরে আগাছা বা ঘাস চাষ (Sea Wood or Sea Grass Farming):
সাগরের ঘাস বা আগাছা দেশে দেশে সুস্বাদু ও উচ্চ পুটিন সমৃদ্ধ খাদ্য হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে, তাছাড়া খাওয়ার তৈল, বায়োক্যামিক্যাল ও হারবাল ঔষধ, জেট ফুয়েল, সার, রাসায়নিক দ্রব্যাদি (যেমন মিথেন, নাইট্রোজেন, ইথানল ইত্যাদি), সবুজ ডিজেল, গৃহস্থালী জ্বালানি শত শত কাজে ব্যবহার হচ্ছে। সমূদ্র উপকূলের বিভিন্ন দেশ কর্তৃক নীল কার্বণ চাষাবাদ হচ্ছে।


Made of Sea Grass (Curtesy: kmart and Ballard Designs)





(গ) সামুদ্রিক শশা চাষ (Sea Cucumber Firming): অত্যন্ত মূল্যবান, পশু – পাখির মাংসের বিকল্প হিসাবে ফাস্ট পুডে ব্যবহার হচ্ছে এবং জীবন রক্ষাকারী ঔষধের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে)




৩। সামুদ্রিক পর্যটন.(Marine Coastal and cruise tourism):
- সী বীচ (Sea Beach)
- ক্রুজশীপ (cruise Ship)
- সামুদ্রিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য অন্বেষণ, সংরক্ষণ (Maritime Heritage)
- সামুদ্রিক ফেরী সার্ভিস ও পারাপার (Passenger Ferry infrastructure and services )

৪। সামুদ্রিক খনিজ সম্পদ (Marine Mineral Resources):
- অগভীর পানিতে খনিজ আহরণে খনন কাজ (Shallow water Mining)
- গভীর পানিতে খনিজ আহরনের জন্য খনন কাজ (Deep-sea mining)


৫। নীল জৈবপ্রযুক্তি (Blue Biotechnology):
জিন ক্রম প্রযুক্তি (Gene Sequencing Technology): কেমিষ্ট ও মেডিক্যাল, কৃষি পরিক্ষাগারে জীন প্রযুক্তিতে এর ব্যবহার




৬। অভ্যন্তরীন নৌ পথ (Inland water ways):
- অভ্যন্তরীন নৌ চলাচল (Inland transport)।
- অভ্যন্তরীন অবকাঠামো (Inland Infrastructure)।
- অভ্যন্তরীন সেবা (Inland services)।
- অভ্যন্তরীন আবাসন (Inland Real Estate)
- অভ্যন্তরীন নৌচলাচল ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন (Inland Navigation and traffic Management)।
- অভ্যন্তরীন শ্রোতাশয় এবং অবস্থান (Inland Marinas and tacking)
৭। সমুদ্র তীরের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড (Coastal belt Economic Activities):
- লবন পানিতে মাছ চাষ (Salt water Fish Culture)।
- লবন চাষ (Salt Cultivation)
- বন ও সমুদ্র তীরবর্তী স্থানে বনায়ন (Forestry and Afforestration)।
- জাহাজ নির্মাণ শিল্প (Ship manufacturing)।
- জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প (Ship breaking Industries)।

সুতরাং আমরা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছি যে, নীল অর্থনীতি জাতীসংঘের ঘোষিত সস্রাব্দ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্রমাত্রার (UN Sustainable Development Goals (SDGs) প্রায় সবগুলো লক্ষ্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেকে সমর্থন করে
এবং তা অর্জনের পৃষ্ঠপোষক, বিশেষভাবে লক্ষ্যমাত্রা ১৪: পানির নীচে জীবন (SDG14: Life below water) এর সরাসরি পৃষ্ঠপোষক। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্রমাত্রার (UN Sustainable Development Goals (SDGs) এর অন্য লক্ষ্য লক্ষ্যমাত্রা গুলোর সরাসরি পৃষ্ঠপোষক সেগুলো হল,
- (১) লক্ষ্যমাত্রা ১: দারিদ্রমুক্ত পৃথিবী (SDG1: No Poverty): নীল অর্থনীতি বিভিন্নভাবে মানুষের আয়ের উৎস ও আয় বর্ধক।
- (২) লক্ষ্যমাত্রা ২: ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী (SDG2: Zero Hunger): ইহা আয়ের উৎস অর্থাৎ ইহা দ্বারা মানুষের বিভিন্ন কর্মের সৃযোগ হয় এবং সরাসরি মাছ ও সামুদ্রিক আগাছা সরাসরি মানুষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় বিধায় ইহা মানুষের ক্ষুধা নিবারণে সাহায্য করে।
- (৩) লক্ষ্য ৩: সুস্বাস্থ্য এবং সর্বাঙ্গীনভাবে ভাল থাকা (SDG3: Health and Well-being): সামুদ্রিক পর্যটন এবং মানুষের আয়ের উৎস ও আয় বর্ধক। বিধায় মানুষের শারিরিক ও মানষিক স্বাস্থ্য ভাল রাখে।
- (৪) লক্ষ্যমাত্রা ৪: উন্নত শিক্ষা (SDG4: Quality Education): বিভিন্ন প্রকার আয় দ্বারা অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জণে উন্নত শিক্ষা গ্রহন ও প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
- (৫) লক্ষ্যমাত্রা ৫: লিঙ্গ সমতা (SDG5: Gender Equality): বিভিন্ন প্রকার আয় দ্বারা অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জণ ও উন্নত শিক্ষা অর্জনে সমাজের মধ্যে লিঙ্গ বৈষ্যম্য হ্রাস করে।
- (৬) লক্ষ্যমাত্রা ৬: নিরাপদ পানি এবং উন্নত পয়:নিষ্কাশন ( জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট (Clean Water and Sanitation): অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জণ ও উন্নত শিক্ষা ইহা অর্জণের সহায়ক।
- (৭) লক্ষ্যমাত্রা ৭: সাশ্রয়ী এবং পরিচ্ছন্ন (দূষণমূক্ত) শক্তি (SDG7: Affordable and Clean Energy): সাগর – সমুদ্র নীল শক্তির উৎস।
- (৮) লক্ষ্যমাত্রা ৮: শালীন কাজ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন (SDG8: Decent Work and Economic Growth): নীল অর্থনীতি সম্পৃক্ত প্রত্যেকটি কাজই শালীন আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের বৃহৎ উৎস ।
এভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্রমাত্রার নিন্ম বর্ণিত লক্ষ্রমাত্রাগুলোরও কোন না কোনভাবে পৃষ্ঠ পোষক – - (৯) লক্ষ্যমাত্রা ৯: টেকসই শিল্প স্থাপন, উদ্ভাবনের উৎস প্রদান, এবং স্থিতিস্থাপক অবকাঠামো নির্মাণ (Promote inclusive and sustainable Industrialization’ Foster innovation, Build resilient infrastructure)।
- (১০) লক্ষ্যমাত্রা ১০: মা্নুষে মানুষে অসমতা হ্রাস (SDG10: Reducing Inequality): অর্থনৈতিক মুক্তি ও উন্নত শিক্ষা ইহা হ্রাসে সহায়ক।
- (১১) লক্ষ্যমাত্রা ১১: টেকসই শহরসমূহ এবং সম্প্রদায়সমূহ গড়ে তোলা (SDG11: Sustainable Cities and Communities)।
- (১২) লক্ষ্যমাত্রা ১২: পরিমিত ভোগ এবং উৎপাদন (Responsible consumption and production)।
- (১৩) লক্ষ্যমাত্রা ১৩: স্বাচ্ছন্দ জীবনের জন্য জলবায়ুর নিয়ন্ত্রন (Climate action)।
- (১৪) লক্ষ্যমাত্রা ১৫: স্থলভাগের (পানির উপরে) জীবন (Life on land)।
- (১৫) লক্ষ্যমাত্রা ১৬: শান্তি, সুবিচার এবং শক্তিশালী কাঠামো গড়ে তোলা (Peace, justice and strong institutions)।
- (১৬) লক্ষ্যমাত্রা ১৭: লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পরস্পরকে সাহায্য সহযোগীতা করণ (Partnerships for the goals); ইহা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রযোজ্য।
২০১২ সালে SDG সংক্রান্ত বিশ্ব সম্মেলন (The Earth summit, Rio+20) এ নীল অর্থনীতি স্বীকৃত হওয়ার পর ৯ অক্টোবর ২০১৪ সালে অস্টেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ভারত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা এ্যাসোসিয়েশন (Indian-Ocean Rim Association – IORA) এর মন্ত্রী পরিষদের সভায় নীল অর্থনীতি ধারনাটি সদস্য রাষ্টগুলো কতৃক গৃহীত হয় এবং ভারত মহাসাগরকে ঘিরে কর্মসংস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র বিমোচন ও টেকসই ব্যবসা ও অথনৈতিক উন্নয়ন মডেল তৈরিতে সকলে একমত পোষণ করে।
তখন হতে মৎস ও জলজ পালন, সীফুড পণ্য সুরক্ষা এবং গুনগত মানের উন্নয়ন, সীফুড হ্যান্ডেলিং, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং মৎস ও জলজ পালন পণ্য সুরক্ষা করণ, ব্যাংকিং এবং কৃএিমভাবে মাছের চাষাবাদ, সমুদ্রবন্দর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালন,
মৎস বানিজ্য, সমুদ্র যোগাযোগ, সমুদ্রের স্থানীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা, সমুদ্র বন্দর ও শিপিং, সমুদ্র পূর্বাভাস/পর্যবেক্ষণ, নীল কার্বন (Blue Carbon) এবং নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সম ও উন্নয়ন নীতি গ্রহন করা হয়।
নীল অর্থনীতি বিষয়ক IORA এর প্রথম মন্ত্রী পরিষদের সভা ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মরিশাস এ অনুষ্ঠিত হয়, ২০১৭ সালে মে মাসে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় এবং ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ১৯তম সভা আবুধাবীতে অনুষ্ঠিত হয়।
১৯তম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে ০৩-০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ এ টেকসই নীল অর্থনীতি উন্নয়ন সংক্রান্ত ঢাকা সম্মেলন (Dhaka IORA Conference – “Promoting Sustainable Blue Economy”) অনুষ্ঠিত হয় এবং বাংলাদেশের মানণীয় প্রধান মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ওয়াজেদ উক্ত সম্মেলন উদ্ভোধন করেণ।
নীল অর্থনৈতিক উন্নয়নে IORA এর সচিবালয় কর্তৃক ৬টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব প্রদান করে, তা হল:
- ১। জলজ মৎস পালন (Fisheries of Aquaculture)।
- ২। নবায়ন যোগ্য সামুদ্রিক শক্তি বা নীল শক্তি (Renewable Ocean Energy)।
- ৩। সামুদ্রিক বন্দর এবং জাহাজ যোগাযোগ (Seaports and Shipping)।
- ৪। সমুদ্রতীরবর্তী হাইড্রোকার্বন এবং সমুদ্র তলের খনিজ (Offshore Hydro carbons and seabed minerals)।
- ৫। সামুদ্রিক জৈবপ্রযুক্তি, গবেষণা এবং উন্নয়ন (Marine Biotechnology, Research and Development)।
- ৬। পর্যটন (Tourism)।
বাংলাদেশের নীল অর্থনীতির বিষয়টি উঠে আসে মূলত মায়ানমার ও ভারতের সাথে ২০১২ সালে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিরোধের পর থেকে। ২০১৪ সালে হেগের আর্ন্তজাতিক আদালতের রায়ে বাংলাদেশকে বঙ্গোবসাগরের ১,১৮,৮১৩ বর্গ কিমি বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে সামুদ্রিক সম্পদ অন্বেষণ, শোষণ, সংরক্ষণ ও পরিচালনার একচেটিয়া অধিকার দেয়া হয়।
বাংলাদেশ ও মায়ানমারের দাবী (বাংলাদেশের দাবী সবুজ রং এবং মায়ানমারের দাবী লাল রং অংশ)সমূদ্র সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালত (International Tribunal for the Law of the Sea – ITLOS), হামবার্গ, জার্মানী কর্তৃক ১৪ মার্চ ২০১২ সালে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সমূদ্রসীমা নির্ধারণ সংক্রান্ত রায়ে বাংলাদেশ ১,১১,৬৩১ বর্গ কিমি সমূদ্র এলাকা এবং মায়ানমার ১,৭১,৮৩২ বর্গকিমি সমূদ্র এলাকা প্রাপ্ত হয়
(মায়ানমারের উপকূলীয় দৈর্ঘ্য বাংলাদেশের উপকূলীয় দৈর্ঘ্য অপেক্ষা অধিক হওয়ায় আনুপাতিক হারে মায়ানমার বাংলাদেশ অপেক্ষা বেশী পায় )। উল্লেখ্য বাংলাদেশ ও মায়অনমারের উপকূলীয় দৈর্ঘ যথাক্রমে ৪১৩ কিমি ও ৫৮৭ কিমি।

নেদারল্যান্ডের হেগের আন্তর্জাতিক স্থায়ী আদালত (The Permanent Court of Arbitration – PCA) কর্তৃক ২০১৪ সালে প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২৫,৬০২ বর্গ কিমি বঙ্গোবসাগরের বিরোধপূর্ণ সমূদ্র এলাকার মধ্যে বাংলাদেশ ১৯,৪৬৭ বর্গ কিমি এলাকা প্রাপ্ত হয়।




বঙ্গোবসাগরের নীল জলের নীচে বিশাল সম্পদের ভান্ডার রয়েছে, যার টেকসই ব্যবহার, আহরণ ও সংরক্ষণের জন্য বিশেষ নীতিমালার জরুরী প্রয়োজন।
বর্তমানে দেশের আমদানি-রফতানির ৯৫% ভাগ বঙ্গোপসাগর নির্ভর। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী উপসাগরের ২০০ নটিক্যাল মাইল ( ১ নটিক্যাল মাইল = ১.১৫১ মাইলস ) অবধি একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল ছাড়াও সমুদ্র তীরে বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার এখন চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর হতে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত।

উল্লেখ্য যে, বিশ্বের ৬৪৮টি উপসাগরের মধ্যে বঙ্গোবসাগর বৃহত্তম উপসাগর এবং বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডের প্রায় ১.৪ বিলিয়ন মানুষের বঙ্গোপসাগরের উপকূল রেখায় বাস করে।
এ ছাড়াও বাংলাদেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করে এবং প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষের জীবন ও জীবিকা (মৎস, কৃষি, নৌপরিবহনের ও পর্যটন) এর উপর নির্ভরশীল।
বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৮ সালের এক গবেষনা অনুসারে সমুদ্র বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ১.২ বিলিয়ন টাকা মূল্য বা ৩.০৩ শতাংশ জিডিপিতে অবদান রাখছে।
তারমধ্যে পর্যটন ও বিনোদন (২৫%), সামুদ্রিক মৎস ও জলজ পালন (২২%), পরিবহন (২২%), অফসোর তেল/গ্যাস উত্তোলন (১৯%), জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ ভাঙ্গা (৯%) এবং খনিজ (৩%) রয়েছে।

মৎস ও জলজ চাষে সম্পূর্ণ ও খন্ডকালীন কর্মসংস্থানে ধরা হয়েছে ১৩ লক্ষ এবং সমুদ্রতীরে লবন উৎপাদন ও জাহাজ ভাক্সগা শিল্পে-৬০ লক্ষ লোক নিযুক্ত রয়েছে।
আর্ন্তজাতিক আদাতের রায়ে জয় করা নতুন সামুদ্রিক সীমানায় তেল ও গ্যাসের এক সম্ভাবনাময় মজুদের আশা করা যাচ্ছে। এছাড়াও শিপ বিল্ডিং এবং শিপ ব্রেকিং ভবিষতের দিনগুলিতে বড় আকারে বৃদ্ধি পাওয়ার এবং পর্যটন খাতে পরবর্তী দশকে প্রতিবছর ৯.০০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
কৃএিমভাবে সামুদ্রিক শেওলা চাষ এবং ঝিনুক, সামুদ্রিক মুক্তা, সামুদ্রিক শশা এবং সামুদ্রিক আর্চিন চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে সব কিছুই টেকসই ব্যবস্থাপনা (sustainable Management) এর মাধ্যমে করতে হবে – যাতে সমুদ্র ভান্ডার হঠাৎ নিঃশেষ হয়ে না যায় এবং সমুদ্রে পরিবেশ দূষণ না ছড়ায় যা ০৩ সেপ্টেম্ভর ঢাকার সোনারগাও হোটেলে IORA এর টেকসই নীল অর্থনীতির উন্নয়ন সংক্রান্ত ঢাকা সম্মেলনের উদ্ভোধনী বক্তিতায় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ সর্তক করে দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “ সমূদ্রের অফুরন্ত সম্পদ যা সম্পূর্ণ রক্ষিত অবস্থায় আছে তা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহ পরস্পরের সহযোগীতার ভিত্তিতে সুষ্ঠু ও টেকসই ভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে এতদাঞ্চলের দ্রারিদ্রতা দূরীকরণ, খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলা, শক্তির অভাব, এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা ও প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে প্রত্যেকের টেকসই উন্নয়নের একটি বিশাল সুযোগ রয়েছে।
” তিনি আরও বলেন, “ তার জন্য একটি টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন যাতে সামুদ্রিক সম্পদ একবারে নি:শেষ হয়ে না যায় এবং সমূদ্রে দূষণ না চড়ায়।”
সমুদ্র সম্পদ রক্ষা এবং সে সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত অনেকগুলো আইন ও রেগুলেশন প্রনয়ন ও প্রয়োগ করেছে তার কয়েকটি নিন্মে দেয়া হল:
- (১) East Bengal Protection and Conservation of Fish Act, 1950.
- (২) The Territorial Waters and Maritime Zones Act, 1974.
- (৩) THE MARINE FISHERIES ORDINANCE, 1983.
- (৪) The Marine Fisheries Rules, 1983.
- (৫) National Fisheries Policy, 1998
- (৬) The Protection and Conservation of Fish (Amendment) Act, 1995
- (৭) The Protection and Conservation of Fish (Amendment) Act, 2002
- (৮) The Bangladesh Biodiversity Act 2017.
কিন্তু এতগুলো আইন থাকা সত্বেও এদেশের মানুষের আইন বিষয়ে অজ্ঞতা, জানলেও তা না মানার মানসিকতা এবং যথাযথ প্রয়োগের অভাবে বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদ সংরক্ষণ ও দূষণমুক্ত রেখে টেকসই ব্যবহারে বিশাল ঘাটতি লক্ষণীয়।
বাংলাদেশ একটি ঘূর্ণীঝড় প্রবণ এলাকা। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে প্রতিবছরই ঘূর্ণীঝড়, জলোচ্ছ্বাস দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। তার মধ্যে ১৯৯১ সালে সংঘটিত ঘূর্ণীঝড়টি ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত সিডর, আইলা লোকক্ষয়ের দিক হতে মাঝারী হলেও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ছিল ব্যাপক।
এইতো গত ২০ মে ২০২০ তারিখে বাংলাদেশ ও ভারতের সমূদ্র উপকূরে আঘাত হানা ঘূর্ণীঝড় আম্ফান এর ধ্বংসযজ্ঞে শুধূ বাংলাদেশেরই ২৬ জন লোকক্ষয়সহ প্রাথমিক হিসাবে প্রায় ১১ বিলিয়ন টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আর ভারতে লোকক্ষয় ৯০ জনসহ সম্পদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন রুপি।
যদি আম্ফানের আঘাত সংশ্লিষ্ঠ অংশে বিশ্বের বৃহত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দর বন না থাকত এবং সুন্দর বন ২৪০-২৬০ কিমি গতিতে আঘাত করা আম্ফানকে প্রতিহত করে ঝড়ের বেগ ১৫৫-১৬০ কিমি এ নামিয়ে না আনত, তবে হয়ত বাংলাদেশ ও ভারতের সংশ্লিষ্ট অঞ্চল পশুর তৃণচর্বের ন্যায় মাটিতে মিশে যেত।
অধিকন্তু বাংলাদেশের সমূদ্র উপকূল আঁকাবাঁকা ও স্থানে স্থানে সমূদ্রের দিকে প্রলম্বিত এবং প্রচুর ব-দ্বীপ নিয়ে গঠিত। তাই ঘূর্ণীঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধ করা খুবই কঠিন।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তণ এবং বিশ্বে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে পূর্ব এশিয়া, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপাঞ্চল সলোমন দ্বীপপুঞ্জসহ বিশ্বের অনেক স্থলভাগের অংশ ইতোমধ্যে সমূদ্রে তলিয়ে গেছে।
জলবায়ু বিষেশজ্ঞরা আশংকা করছে যদি এ গতিতে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে তবে এ শতাব্দির মধ্যে বাংলাদেশের এক-তৃতীয় অংশ বঙ্গোবসাগরে তলিয়ে যাবে এবং দেশের ১ হতে ৩ কোটি সমূদ্র উপকূলের মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে।
সুতরাং কোন দিক দিয়েই বাংলাদেশের সমূদ্র উপকূলবর্তী মানুষ ও সম্পদ নিরাপদ নয়।
বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধীন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন র্বোড (বাপাউবো) এর উপকূলীয় বাঁধ প্রকল্প এর আওতায় সমূদ্র ও নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ ও পোল্ডার সৃষ্টির মাধ্যমে এবং বাংলাদেশ বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের অধীন উপকূলীয় বন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চল ও দ্বীপাঞ্চলকে ঘূর্ণীঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস হতে রক্ষা করে যাচ্ছে।
উপকূলীয় জীবন, সম্পদ, এবং নীল অর্থনীতির বিদ্যমান কর্মকান্ড সচল রাখতে এবং আরও গতিশীল ও নিরাপদ করতে উক্ত ২ টি খাতে সরকারের আরও অধিক গুরুত্ব দেয়াসহ খাত দুটির টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।



নীল অর্থনীতি টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ও ক্রমাগতভাবে অর্থনৈতিক অর্জন প্রাপ্তির লক্ষ্যে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, চ্যালেঞ্জ নির্ণয় ও তা মোকাবেলার উপর টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে একটি কৌশল নির্ধারণ করা একান্ত প্রয়োজন।
বাংলাদেশের নীল অর্থনীতি অর্জনের চ্যালেঞ্জ সমূহ:
- (ক) এখন পর্যন্ত যথাযথ প্রদক্ষেপ গ্রহন না করা।
- (খ) সম্পদের টেকসই ব্যবহার কাঠামোর অভাব।
- (গ) প্রয়োজনীয় গবেষনার অনুপস্থিতি।
- (ঘ) গভীর সমুদ্র বিষয়ক পর্যাপ্ত জ্ঞান, দক্ষ জনশক্তি ও সরঞ্জামের অভাব।
- (ঙ) উদ্ভাবনী মানসিকতার ও প্রযুক্তির অভাব।
- (চ) সরকারি নীতি ও পরিকল্পনায় যথাযথ গুরুত্ব না দেয়া।
চ্যালেঞ্জ উওরনের উপায় সমূহ:
- (ক) সুস্থ্য, পরিবর্তনমুখী ও উৎপাদনশীল সামুদ্রিক পরিবেশ গঠন করা।
- (খ) সামুদ্রিক উন্নয়ন কতৃপক্ষ স্থাপন করা।
- (গ) টেকসই প্রযুক্তি ও গবেষনার উন্নয়ন করা।
- (ঘ) ব্যবসা, বিনিয়োগ ও অর্থসংস্থানের জন্য একটি ফোকাল পয়েন্ট স্থাপন করা।
- (ঙ) সামুদ্রিক নজরদারি বাড়ানো এবং সমুদ্র সীমা সংরক্ষণে শক্তির বৃদ্ধি ও প্রয়োগ করণ। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কোষ্টগার্ড সৃষ্টি করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শক্তি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
- (চ) শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করণ।
- (ছ) যথাযথ অবকাঠামো গঠন করণ।
- (জ) সরকারি নীতিতে এবং বিনিয়োগে গুরুত্ব প্রদান, বিনিয়োগকারীদের ও অর্থলগ্নীকারীদের উদ্ভ’দ্ধকরণ, সিকিউরিটি প্রদান ইত্যাদি।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি, বিশাল জনসংখ্যার কর্মের সংস্থান, শক্তির (Energy) ঘাটতি মোকাবেলাসহ উত্তরের দেশসমূহে রপ্তানীর মাধ্যমে জিডিপি বৃদ্ধিতে নীল সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার/আহরনে মনোযোগী হওয়া আবশ্যক।
Source : For News Links Click here, The Green Page Bangladesh Online Environment Based News Portal.