পরিত্যক্ত পলিথিন কিনেছে মৌলভীবাজার পৌরসভা
পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিক কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজার পৌরসভার সামনে মেয়র চত্বরে বসছে পরিত্যক্ত পলিথিন ক্রয়ের হাট। প্রতি সপ্তাহে রবিবার সকাল থেকে বিকেলে থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। এই পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্তমানে ১৫ টাকা কেজি দরে কিনেছে মৌলভীবাজার পৌরসভা।
পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, পলিথিন সহজে পচে না, মাটির গুণাগুণ নষ্ট করে। আগুনে পোড়ালে তৈরি হয় কার্বন, নষ্ট হয় পরিবেশের ভারসাম্য। যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পলিথিন অপরিচ্ছন্ন করে রাস্তাঘাটসহ বাসাবাড়ির আঙিনাকে।
পৌর শহরকে দূষণমুক্ত করে পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে ও পানি নিষ্কাশনে ড্রেনেজ ব্যবস্থায় বাধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য পৌরসভা পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিক কিনে নিয়ে সেটা ডাম্পিং স্টেশনে পুনঃপ্রক্রিয়া করছে। এ ছাড়া পচনশীল বর্জ্য দিয়ে জৈবসার তৈরি ও বায়োগ্যাস তৈরি করা হচ্ছে।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিকেজি পরিত্যক্ত পলিথিন বর্তমানে ১৫ টাকা দরে ক্রয় করা হচ্ছে। সপ্তাহে প্রতি রবিবার বিকেলে বসে এই হাট। যতক্ষণ পর্যন্ত বিক্রেতারা এসব মাল নিয়ে আসেন ততক্ষণই চলে এই হাট।
বাসাবাড়ি, দোকান, অফিসসহ সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত পলিথিন, বিভিন্ন জাতের প্লাস্টিকের বোতল, চিপস, বিস্কুট, আইসক্রিম, চকলেটের প্যাকেট, শপিং ব্যাগ, নানা জাতের খাদ্যদ্রব্যের প্যাকেটসহ নানা উপকরণ ওই হাটে ক্রয় করা হয়।
শহরের বিভিন্ন সড়ক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে গিয়ে গত ছয় দিনে ৪ কেজি পরিত্যক্ত পলিথিন সংগ্রহ করেন পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী জলি বাস্পার। তিনি বলেন, রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করে এখন বাড়তি কিছু আয় করতে পারি।
মইন আলী যিনি পেশায় দিনমজুর। তিনি বলেন, ‘যেদিন কাজ পাই না সেদিন শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়িতে ঘুরে ঘুরে পরিত্যক্ত পলিথিন কুড়িয়ে এনে জমা করি। পরে এই হাটে তা বিক্রি করি।’
এই হাটে কথা হয় শহরের কাজিরগাঁও এলাকার এলাইস মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, গত মাসে শহরের আনাচে-কানাচে থেকে ৬৫ কেজি পরিত্যক্ত পলিথিন সংগ্রহ করে এই হাটে বিক্রি করেন।
মৌলভীবাজার পৌরসভার পক্ষ থেকে পরিত্যক্ত পলিথিন কিনে নেওয়ার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত জানিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জাতীয় পরিষদ সদস্য আ স ম সালেহ সোহেল বলেন, ‘আমরা পরিবেশকর্মীরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। পলিথিন ও প্লাস্টিক পচে না।
মাটির উর্বরতা কমায়, ড্রেনেজ ব্যবস্থায় বাধাগ্রস্ত করে। ফলে শহরের পানি নিষ্কাশনসহ পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমরা চাই দেশের প্রতিটা পৌরসভায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হোক।’
এই হাটের বিষয়ে পৌর মেয়র মো. ফজলুর রহমান বলেন, পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও হুমকি। তা ছাড়া শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থায় চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বাসাবাড়ি, অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ড্রেনের মধ্যে এসব অপচনশীল বর্জ্য ফেলে দেওয়ায় ড্রেন বন্ধ হয়ে যায়।
এ কারণে টানা বৃষ্টি হলে শহরের অনেক স্থানেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এসব দুর্ভোগ ও জনভোগান্তির বিষয়টি আমলে নিয়ে তা থেকে স্থায়ী পরিত্রাণ পেতে ও নাগরিকদের নিজেদের দায়িত্ববোধ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই উদ্যোগটি নিয়েছে মৌলভীবাজার পৌরসভা। এই শহরের সৌন্দর্য রক্ষায় সবাইকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে কখনোই পৌরসভা একার পক্ষে এমন কাজে সফল হতে পারবে না।