পরিবেশ বাঁচাতে পলিথিনের ব্যবহার কমাতে হবে
পরিবেশ সুরক্ষার কথা উঠলে পলিথিন ও প্লাস্টিকের অপব্যবহার এক অনিবার্য আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০০২ সালে আইন প্রণয়ন হলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এখনো বড় ঘাটতি রয়েছে।
এ কারণেই আজ বাংলাদেশের খাল-বিল, নদী-নালা ও শহরের বর্জ্যে প্লাস্টিকের স্তূপ দেখা যায়। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্লাস্টিক ব্যবহারে শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে একটি।
নভেম্বর থেকে পরিচালিত অভিযানে ৭৩ টন পলিথিন জব্দ এবং আড়াইশ মামলা করা হয়েছে। যদিও এটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, তবে সামগ্রিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এ প্রচেষ্টা এখনো অপর্যাপ্ত। প্লাস্টিকের বিপুল উৎপাদন এবং বিক্রয় অব্যাহত থাকলে ভোক্তা পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
পলিথিনের ব্যবহার সমস্যার একমাত্র দিক নয়, এর উৎপাদন এবং বিপণনও বড় সমস্যা। যেসব প্রতিষ্ঠান প্লাস্টিক বাজারে আনছে, তাদের কার্যক্রম কঠোর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে।
এ বিষয়টি বারসিক’র পরিচালক পাভেল পার্থর মন্তব্যেও উঠে এসেছে। তিনি যুক্তিসঙ্গতভাবেই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ক্রেতা বা ভোক্তার উপর কেন দায় চাপানো হবে, যখন বাজারে বিকল্প ব্যবস্থা যথেষ্ট সহজলভ্য নয়?’ তার মতে, প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে উৎপাদকদের দায়বদ্ধ করা এবং তাদের আইনের আওতায় আনা বেশি জরুরি।
অন্যদিকে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার কমাতে শুধু মোবাইল কোর্ট পরিচালনা বা আইনি পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে বিকল্প পণ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাগজের ব্যাগ বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হলে সেই পণ্যগুলোর উৎপাদন ও বিতরণ প্রক্রিয়া সহজ এবং সাশ্রয়ী করতে হবে।
এসডো’র এক গবেষণা অনুযায়ী, দেশে ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতলের মাত্র ২১.৪ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়, আর বাকি ৭৮.৬ শতাংশ মাটির নিচে জমা পড়ে বা জলাশয়ে গিয়ে মিশে পরিবেশের ক্ষতি করে। শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকাগুলোর প্লাস্টিক দূষণও বাড়ছে।
এ বাস্তবতা প্রমাণ করে প্লাস্টিক দূষণ এখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনের জীবনে ব্যবহৃত একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক যেমন খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল এবং মোড়কজাত সামগ্রী এ সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে।
প্লাস্টিক দূষণ রোধে প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে উৎপাদনের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ। তবে এটিই যথেষ্ট নয়। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব পণ্য যেমন পাটজাত ব্যাগ, ধাতব বা কাচের বোতল এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য সামগ্রীর সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের জন্য উন্নততর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
স্থানীয় পর্যায়ে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়ার উন্নয়নেও জোর দিতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন।
পাশাপাশি প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদক এবং বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের উপর নজরদারি বাড়াতে হবে। আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্বলতা দূর করা এবং যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশ রক্ষার এ লড়াই আমাদের প্রত্যেকের, কিন্তু এর নেতৃত্ব সরকার এবং উৎপাদকদেরই নিতে হবে। জনগণকে দোষারোপ না করে, সবার জন্য একটি টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে। এটি অর্জনের জন্য নীতিনির্ধারক, গবেষক এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা একান্ত প্রয়োজন।