পরিবেশ বিধংসী প্লাস্টিকের ব্যানার-পোস্টারে সয়লাব নির্বাচনী মাঠ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার ও প্রচারণায় পরিবেশ বিধংসী প্লাস্টিক ও পলিথিন মোড়ানো (লেমিনেটেড) সব ধরনের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড ব্যবহার নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। সম্প্রতি সংস্থাটি এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)।
বাপা’র চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন এলেই প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণার জন্য পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড ব্যবহার করে থাকেন। তারা সেই পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ডগুলোকে আরও চমকপ্রদ এবং বৃষ্টি, কুয়াশা, আর্দ্রতা কিংবা ধুলাবালি থেকে রক্ষা করে পরিবেশ বিধংসী প্লাস্টিকের ব্যবহার করেন, যা পরিবেশের অত্যন্ত মারাত্মক ক্ষতিকর।
সেই বিপুলসংখ্যক প্লাস্টিক ও পলিথিন মোড়ানো পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নির্বাচনের পর বিভিন্নভাবে পুকুর, নদ-নদী, খাল-বিল, ড্রেনে মিশে যায়। ফলে বন্যা-জলাবদ্ধতাসহ পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়।
বাপা বলছে, পরিবেশের জন্য ক্ষতি বিবেচনা করে প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশই বিশ্বে সবার আগে পলিথিন প্লাস্টিক আইন করে নিষিদ্ধ করেছিল। তবে বর্তমান সময়ে বাজারে পলিথিনের আধিপত্য দেখলে বোঝার কোনো উপায় নেই, ২০ বছর আগেও নিষিদ্ধ ছিল এই পলিথিন।
২০০২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫-এর সংশোধনের পরিপ্রেক্ষিতে পলিথিনের ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি নিষিদ্ধ পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন করে।
তাহলে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা, এমনকি উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। একইসঙ্গে পলিথিন বাজারজাত করলে ছয় মাসের জেলসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু এর যথাযথ প্রয়োগের অভাবে তা বাস্তবায়ন হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশ মহাবির্পযয়ের সম্মুখীন হবে।
এসব পোস্টার প্লাস্টিকে মোড়ানোর (লেমিনেটেড) কারণে পরিবেশের জন্য মহাবিপর্যয় অপেক্ষা করছে। একদিকে এই প্লাস্টিক নষ্ট হবে না। অন্যদিকে একে পুনরায় ব্যবহার করারও সুযোগ নেই। বছরের পর বছর ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পড়ে থেকে পরিবেশের ক্ষতি করা ছাড়া এগুলোর আর কোনো কাজ নেই।
এই প্লাস্টিক তৈরিতে যেসব রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার হয়, সেগুলো বিষাক্ত এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এতে কিছু বিশেষ রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পলিথিনের বিক্রিয়া ঘটিয়ে এই প্লাস্টিক তৈরি করা হয়।
এগুলো আবার সূর্যের আলো থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন করে। আমরা সবাই জানি প্লাস্টিক প্রকৃতি পরিবেশ তথা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পেট্রোলিয়াম-জাতীয় পদার্থ থেকে এটি তৈরি হয়। প্লাস্টিক তৈরিতে প্রায় ৩৮ ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে ১২ থেকে ১৮টি অত্যন্ত ক্ষতিকর।
প্লাস্টিকের একটি অনুষঙ্গ পলিথিনও একবার ব্যবহার্য পণ্যের মধ্যে পড়ে। এটা কোনোভাবে রিসাইকেল হয় না। এটা বর্জ্য উৎপন্ন করে। এটা ভেঙে যায় ও কণায় পরিণত হয়। পরিবেশ থেকে কখনও বিলীন না হয়ে বরং তা একসময় আমাদের খাদ্যের সঙ্গে মিশে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণা থেকে জানা যায়, গত ১৫ বছরে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭৫ গুণ বেড়েছে। এখন শিশুরাও ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। এর অন্যতম একটি কারণও এই প্লাস্টিক।
তাই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার ও প্রচারণায় পরিবেশ বিধংসী প্লাস্টিক ও পলিথিন মোড়ানো (লেমিনেটেড) সব ধরনের পোস্টার, ব্যানার ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা বলেছে ‘বাপা’।