পরিবেশ রক্ষায় ভূগর্ভস্থ পানির বিকল্প পথ খুঁজতে হবে
কয়েক দশক ধরে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ সারা দেশেই জলবায়ুজনিত ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে চলেছে, যা এ অঞ্চলের সার্বিক পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করছে।
উজানে আন্তদেশীয় নদীর ওপর একতরফা বাঁধ নির্মাণ, নতুন বনায়ন বৃদ্ধি না করে ব্যাপক হারে বৃক্ষ কর্তন, নদ-নদী নিয়মিত খনন না করা, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ সিস্টেম, নতুন করে জলাধার তৈরি না করা ও সর্বোপরি নির্বিচার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে নানাবিধ পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে।
৩০ বছর আগে যেখানে ৪০-৫০ ফুট গভীরতায় পানি পাওয়া যেত, তা এখন প্রায় ১৫০-১৬০ ফুট গভীরতায় মিলছে।
এ হারে পানির স্তর নিচে নামতে থাকলে ২০৩৫ সালের পর হয়তো ২৫০ ফুট গভীরতায় পানি পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে পানিদূষণ, পানি উত্তোলন খরচ, চাষাবাদ খরচ বাড়বে এবং কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ক্রয়সীমার বাইরে চলে পারে।
তা ছাড়া সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় ভূগর্ভে নোনা পানি ঢুকে কৃষিকাজের মারাত্মক ক্ষতি হবে। ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানিতে আনুপাতিকভাবে আর্সেনিক, মেঙ্গানিজ, আয়োডিন, লবণাক্ততা অসহনীয় মাত্রায় থাকার কারণে ভয়াবহ প্রাণঘাতী রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে।
তা ছাড়া অধিকতর পানির স্তর নেমে যাওয়া এলাকায় কখনো কখনো মাটি দেবে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে এবং পাশাপাশি খরা ও পানিদূষণ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গাছ মাটি থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি শোষণ করতে পারবে না বলে অনেক গাছ মারা যাবে এবং নতুন করে বনায়ন সৃষ্টি করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এমতাবস্থায় পরিবেশের এমন বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বহুমুখী ও সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রক্ষায় আশু স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন অতীব জরুরি। প্রধানতম সমস্যার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ও নির্বিচার ভূগর্ভের পানির উত্তোলনের প্রভাবে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মরুকরণের ভয়াবহ আশঙ্কা বিদ্যমান।
এভাবে পানির স্তর নিচে নেমে যেতে থাকলে এবং সরকারের আশু হস্তক্ষেপের অভাবে দুই দশকের মধ্যে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।