প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হাকালুকি হাওর সংরক্ষণের নির্দেশ কেন নয়: হাইকোর্ট
প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষিত হাকালুকি হাওরের সীমানা নির্ধারণ ও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে ক্ষতিকারক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী হাওরটি রক্ষা ও সংরক্ষণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ দেন।
রুলে হাকালুকি হাওরের অন্তর্ভুক্ত মালাম বিল ও বিলের জলাবনে গাছ কাটা, স্থাপনা নির্মাণ ও শ্রেণি পরিবর্তন থেকে রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা এবং আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিলটি পুনরায় ইজারা দেওয়া কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে মালাম বিলের ইজারা বাতিল চেয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর করা আবেদনটি নিষ্পত্তি করতেও জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষিত হাকালুকি হাওর ও মালাম বিল রক্ষায় নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থে ওই রিট করে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস হাসানুল বান্না, তাঁকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী শামীমা নাসরিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।
বেলা জানায়, দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, জুড়ি ও কুলাউড়া উপজেলা এবং সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোপালগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল হাওরের ১৮ হাজার ৩৮৩ হেক্টর এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়।
ঘোষিত এ হাওরে ছোট–বড় অনেক বিল রয়েছে, মালাম বিল যেগুলোর অন্যতম। মালাম বিলটি বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের কয়েকটি মৌজাজুড়ে অবস্থিত, যার আয়তন ৪২৮ দশমিক ৯২ একর।
বিলটি বদ্ধ জলমহাল হিসেবে পাঁচ বছর মেয়াদে (১৪২৭-১৪৩২ বঙ্গাব্দ) জেলা প্রশাসক মানাদী মৎসজীবী সমবায় সমিতি বরাবর মৎস্য চাষের উদ্দেশ্যে ইজারা দেন।
রিট আবেদনকারীপক্ষ জানায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শন ও বড়লেখা ভূমি অফিসের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ইজারা চুক্তি লঙ্ঘন করে ওই বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সৃজিত বিভিন্ন প্রজাতির জলজ বৃক্ষ (হিজল, করচসহ অন্যান্য জলজ প্রজাতি) কেটে মানাদী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি ২ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ ও ১০-১২ বিঘা জমি চাষের উপযোগী করে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বড়লেখা থানায় সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করলেও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে জলজ প্রজাতির বৃক্ষ নিধন ও বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ থাকলেও মামলায় ইজারা গ্রহীতাকে বিবাদী করা হয়নি এবং ইজারা চুক্তি বাতিল করা হয়নি। এ অবস্থায় বেলা রিটটি করে।