প্লাস্টিক দূষণ চুক্তি : ‘দ্বিতীয় প্যারিস চুক্তি’র প্রত্যাশা ও শিল্পের বিরোধিতা
ঢাকা, ০৮ নভেম্বর, ২০২৫ – প্লাস্টিক দূষণকে বৈশ্বিক পরিবেশগত জরুরি অবস্থা হিসেবে চিহ্নিত করে রাষ্ট্রসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি (Global Treaty on Plastic Pollution) চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
এই চুক্তি সফলভাবে স্বাক্ষরিত ও কার্যকর হলে একে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তির মতোই মানব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হবে। চুক্তিটির লক্ষ্য হলো ২০৪০ সালের মধ্যে সমুদ্র এবং স্থলভাগের প্লাস্টিক দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা।
এই চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো প্লাস্টিক পণ্যের সম্পূর্ণ জীবনচক্র (Life Cycle) নিয়ন্ত্রণ করা—অর্থাৎ কাঁচামাল উত্তোলন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি পর্যন্ত।
প্রস্তাবিত চুক্তির খসড়াতে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষতিকারক ‘একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক’ (Single-use Plastics) নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার (Recycling) এবং ন্যূনতম সামগ্রী ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব রয়েছে।
এই উদ্যোগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ৫০টিরও বেশি উন্নয়নশীল দেশের জোট একটি ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষী জোট’ গঠন করেছে, যারা একটি শক্তিশালী, প্রয়োগযোগ্য আন্তর্জাতিক চুক্তি চাইছে।
তবে, পেট্রোকেমিক্যাল এবং প্লাস্টিক উৎপাদন শিল্প এই চুক্তির কঠোর বিধানগুলির বিরুদ্ধে প্রবল চাপ সৃষ্টি করছে। তারা মূলত পুনর্ব্যবহারের উপর জোর দিতে চায়, কিন্তু উৎপাদনের পরিমাণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রার বিরোধিতা করছে।
অন্যদিকে, পরিবেশবাদী গোষ্ঠী এবং বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে, কেবল পুনর্ব্যবহারের উপর নির্ভর করে প্লাস্টিক দূষণের এই বিশাল প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান্তা বারবারার (UCSB) সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যদি চুক্তিতে প্লাস্টিক উৎপাদনের হার নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তবে ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রের প্লাস্টিকের পরিমাণ তিনগুণ বাড়তে পারে।
