ফনিমনসা গাছ হতে জৈব চামড়া তৈরি উদ্ভাবন
মূল: Elias Marat for Waking Time
মেক্সিকোর দু’জন তরুন উদ্ভাবক ফনিমনসা গাছ (Prickly pear Cactus) হতে প্রথম জৈব চামড়া তৈরী করেন। তৈরী চামড়া অত্যন্ত টেকসই, শৈলী এবং পরিবেশ বান্ধব।
এ দু’জন উদ্ভাবক হলেন অ্যাড্রিয়ান লোপেজ এবং মার্টে কাজারেজ। আগামী ২ অক্টোবর ২০২০ সালে ইতালীর মিলান শহরে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জতিক চামড়া মেলাতে উদ্ভাবক দু’জন তাদের উদ্ভাবিত চামড়া প্রদর্শনীর প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে করে বিশ্বের শীর্ষ ফ্যাশন ডিজাইনাদের নজর কাড়তে পারে। তাদের প্রত্যাশা এ চামড়া বিলাস বহুল ফ্যাশন শিল্পের প্রধান পণ্য হয়ে উঠতে পারে।
এল হেরাল্ডো ডি মেক্সিকো এর রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী গত দু’বছর ধরে এ দু’জন উদ্ভাবক গবেষণা করে ফনিমনসা হতে জৈব চামড়া তৈরী করে এবং তারা দাবী করে যে, এ চামড়া জাতীয় জিনিষটি শুধুমাত্র পরিবেশ বান্ধব নয় এবং পুরোপুরি উদ্ভিদ-ভিত্তিকও নয়, ইহা স্বস্তিদায়ক ও এর সাথে বর্জ্য হিসাবে ফেলে দেওয়া কাপড়ের টুকরার সুতা ব্যবহার করা হয়। এ পণ্যের স্থায়ীত্ব ন্যুনতম এক দশক হবে বলে তাদের ভাষ্য।
উদ্ভাবকদের এ আবিষ্কারটি মাথায় আসে যখন চামড়া দিয়ে পণ্য তৈরীর ব্যান্ড গুলো বাজারে প্রচলিত ক্রমবর্ধমান পেট্রোলিয়াম ভিত্তিক প্লাস্টিক দিয়ে তৈরী নিম্নমানের নকল পণ্য হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় যা বেশ শক্ত এবং পরিস্কার করা কষ্টসাধ্য এবং সত্যিকারের প্রানীর চামড়ার মত স্বস্তিদায়ক ও নয়।
কাজারেজ ব্যাখ্যা করেছে ফনিমনসা ও অন্যান্য ক্যাকটাস হতে অনেক প্রসাধনী তৈরী হচ্ছে, যেমন শ্যাম্পুতে ও মানব ত্বকে ব্যবহার্য্য বিভিন্ন ক্রীম তৈরীতে। আমরা ভেবেছি “যদি এটি ত্বকের পক্ষে ভাল হয় তবে চামড়ার মত বস্তু তৈরীতে কেন নয় ? এভাবেই ধারনাটি আমাদের মাঝে জন্ম নেয়।”
কাজ শুরু করার পর কিছু কিছু লোক তাদেরকে এ বিষয়ে নিরুৎসাহী করে এবং পাগলামী বলে অবহিত করে।
কাজারেজ বলেন “যেহেতু আমাদের দেশে বহু ফনিমনসার জন্ম হয়, ইহা দেশের প্রতীক, তাই ফনিমনসা মেক্সিকোর নতুনত্ব আনার সম্ভাবনাময় বলে আমরা মনে করি। কিন্তু অনেক লোক আমাদের নিরুৎসাহী করেছিল এবং বলেছিল আমরা পাগল। এমনকি আমাদের প্রকৌশলীরাও বলেছিল এটা সম্বব নয়।”
তিনি আরও বলেন, ”আমরা বললাম, কেন হবে না? আমরা মেক্সিকোতে আছি; আমরা মেক্সিকান, আমাদের জন্য ফনিমনসার চেয়ে এত সহজলভ্য কাঁচামাল কোনটি? এটি নিজের থেকে জন্মে এবং দ্রুত বেড়ে যায় এবং তেমন পানি দিতে হয়না, বেশি পানি অপচয় করেনা।”
তিনি বলতে থাকেন, “ফনিমনসা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করি, বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করার পর আমরা একটি প্রতিরোধী (Resistance) বস্তু তৈরী করতে সক্ষম হই।”
লোপেজ এবং কাজারেজ এ দু’জন উদ্ভাবক সম্প্রতি ইউরোপে কয়েকটি নতুন উদ্ভাবন হতে অনুপ্রাণিত হয়, যেমন ইটালীয়ান টেক্সটাইল ”ফ্রেম্যাট” তৈরী করা হয়েছে লেখারস ও আপেল প্রসেসিং বর্জ্য হতে এবং স্প্যানিশ টেক্সটাইল ”পিনটেক্স” তৈরী করা হয়েছে আনারস পাতার আশঁ থেকে।


তারপর ক্রমাগতভাবে একটা দীর্ঘ সময় পরীক্ষা ও ত্রুটি সংশোধন প্রক্রিয়ায় (Trial and Error method) ফনিমনসার জৈব মিশ্রণের সাথে যথাযথ ভাবে তুলা ও রং মেশানোর পর আসল সাফল্যেটি আসে এবং প্রাথমিক অগ্রগতি সম্পন্ন হয়।
কাজারেজ উল্লেখ করে যে, ”ফনিমনসার চামড়ায় পার্স (Parts), কোমরের বেল্ট, হাত ঘড়ির স্ট্র্যাম/চাবুক, ছোট আকারের বইয়ের কেবিনেট বা আরাম কেদারা (চেয়ার) ইত্যাদি তৈরী করা যেতে পারে”
লোপেজ বলেছে ”যে কোন চমড়ার জৈব বিকল্প হিসাবে ইহা প্রতিস্থাপন যোগ্য। পশুর চামড়া বা সিনথেটিক চামড়ার বিকল্প হিসাবে ইহা প্রতিস্থাপন যোগ্য। এটিই চক্র এবং এটির দ্বারা আমাদের ইকোসিস্টেম এর কোন ক্ষতি হয় না। যে সকল কৃষক ফনিমনসা উৎপাদন করে।
তাদেরকে সহয়তা করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেওয়ার দিকে আমারা এগিয়ে যাই। এটি আমাদের কাজকে অর্থবহ করে তোলে। কারন, এটি কেবল ফ্যাশন ও পরিবেশ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট নয়।
আমরা এরকম ক্ষেত্রেগুলোত আমাদের শ্রমিকদের সহায়তা করতে সক্ষম হব এবং এমনকি অপ্রত্যক্ষ ভাবে কর্মসংস্থান তৈরী করতে পারব।”