28 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সকাল ৬:১৯ | ১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
বর্জ্য থাকবে মাটির নিচে, উন্মুক্ত অবস্থায় ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকবে না
পরিবেশ দূষণ

বর্জ্য থাকবে মাটির নিচে, উন্মুক্ত অবস্থায় ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকবে না

বর্জ্য থাকবে মাটির নিচে, উন্মুক্ত অবস্থায় ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকবে না

চট্টগ্রাম নগরের আলমাস মোড়। মোড়ের এক পাশেই উন্মুক্তভাবে চলা বর্জ্য অপসারণ ও পরিবহনের কাজ। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। গাড়ি চলাচলে সৃষ্টি হয় প্রতিবন্ধকতা। দিনের বেলায় এই কাজের কারণে বিপাকে পড়েন মোড় দিয়ে যাতায়াতকারী হাজারো মানুষ। বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে এই কার্যক্রম।

অবশেষে আলমাস মোড়ে এভাবে ময়লা-আবর্জনা স্তূপ করা এবং পরিবহনের কাজ বন্ধ করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ফিনল্যান্ডের একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় সেখানে বর্জ্য রাখার জন্য ভূগর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষণাগার স্থাপন করতে যাচ্ছে সিটি করপোরেশন। এতে ময়লা আর রাস্তার ওপরে থাকবে না, নিচে রাখা হবে।

শুধু এই মোড়ে নয়, প্রাথমিকভাবে নগরের আরও চারটি স্থানে এই ধরনের ভূগর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষণাগার স্থাপন করা হবে। স্থানগুলো হচ্ছে শুলকবহর ওয়ার্ডের ২ নম্বর গেট মোড় ও বাদুড়তলা, আলকরণের ফলমণ্ডি এবং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের মহাজনঘাটা। এতে প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হবে।



বর্তমানে এই পাঁচটি এলাকায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে বর্জ্য অপসারণ ও পরিবহনের কাজ চলে। প্রথমে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বাসাবাড়ি, অফিস, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ নির্ধারিত এলাকা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে এসব স্থানে রাখেন।

বর্জ্যবাহী কনটেইনার উপচে রাস্তাজুড়ে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। আবার কনটেইনারগুলো রাস্তার ওপর রাখার কারণে গাড়ি চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। যানজট সৃষ্টি হয়। এই পদ্ধতির কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হয় স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও গাড়ির যাত্রীদের।

সিটি করোপেরেশন সূত্র জানায়, এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য প্রাথমিকভাবে নগরের পাঁচটি স্থানে ভূগর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষণাগার স্থাপন করবে ফিনল্যান্ডের হাবা গ্রুপ।

প্রতিষ্ঠানটিই এই বর্জ্যাগারগুলো ব্যবস্থাপনা করবে। সম্প্রতি হাবা গ্রুপের প্রতিনিধিদল সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে এই ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের বিশদ বিবরণ উপস্থাপন করেন। এই কার্যক্রমটিকে বর্জ্য অপসারণে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন হাবা গ্রুপের প্রতিনিধিরা।

সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা ও মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, প্রাথমিকভাবে পাঁচটি স্থানে ভূগর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষণাগার স্থাপন করা হবে। এটি হলে উন্মুক্ত অবস্থায় ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকবে না।

জাপানের দাতা সংস্থা জাইকার এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন দুই হাজার টন সংগ্রহ করতে পারে। বাকি এক হাজার টন বর্জ্য রাস্তাঘাট, নালা-নর্দমা ও খালে পড়ে থাকে।

ভূগর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষণাগারের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা দেন হাবা গ্রুপের বাংলাদেশ প্রতিনিধি মো. জাহিদুল আলম। তিনি বলেন, চট্টগ্রামেও যেভাবে রাস্তার ওপর ময়লা-আবর্জনা রাখা হয় এবং গাড়িতে করে আনা-নেওয়া করা হয়, এই ব্যবস্থা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে নেই।



জাহিদুল আলম বলেন, সিটি করপোরেশনের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। করপোরেশনের মেয়রও এই ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আনুষ্ঠানিক সম্পন্ন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষামূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরু করবেন তাঁরা।

সিটি করপোরেশন ও হাবা গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, প্রথমে বিদ্যমান কনটেইনারগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে। সেখানে ভূগর্ভস্থ কনটেইনার স্থাপন করা হবে।

সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে মাটির নিচে থাকা কনটেইনারগুলোতে রেখে দেবেন। ময়লা রাখা শেষ হলে তা ওপর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হবে। এতে ময়লা যেমন দেখা যাবে না, তেমনি গন্ধও বাইরে যাবে না।

দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, কনটেইনারগুলোতে স্মার্ট প্রযুক্তি রাখা হবে। যাতে ৮০ শতাংশ বর্জ্য ভর্তি হলে নিয়ন্ত্রণকক্ষে সংকেত যাবে। ৯০ শতাংশ পূর্ণ হলে গাড়ি পাঠানোর নির্দেশনা দেবে। এরপর গাড়ি নির্দিষ্ট ভূগর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষণাগারে পৌঁছে যাবে।

আবর্জনাভর্তি কনটেইনার গাড়ি করে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ল্যান্ডফিল বা বর্জ্যাগারে নিয়ে যাওয়া হবে। আর কনটেইনারগুলোতে যে পরিমাণ বর্জ্য জমা হবে, তা থেকে পানি আলাদা করে ফেলা হবে। এতে বর্জ্যের পরিমাণ কমে যাবে। ফলে আগের তুলনায় বেশি পরিমাণ বর্জ্য এনে রাখা যাবে নির্ধারিত স্থানগুলোতে।

হাবা গ্রুপের কর্মকর্তা মো. জাহিদুল আলম বলেন, বর্জ্য সংরক্ষণাগারগুলো এমনভাবে নির্মাণ করা হবে, সেখানে কোনোভাবে বাইরে থেকে পানি ঢুকতে পারবে না।

আর ভেতর থেকে ময়লার দুর্গন্ধও বাইরে ছড়াবে না। এটি খুবই পরিবেশবান্ধব। তিনি জানান, পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে অন্তত ২০ জন কর্মী লাগবে। আর কিছু যন্ত্রপাতি দরকার। এসব জনবল ও যন্ত্রপাতি হাবা গ্রুপ সরবরাহ করবে।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহ জালাল বলেন, ভূগর্ভস্থ স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক ও সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে পরিবেশগতভাবে সুফল পাবেন নগরবাসী।

এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণে জোর দিতে হবে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত