বিশ্ব পানি দিবস-২০২৫

আজ ২২শে মার্চ বিশ্ব পানি দিবস-২০২৫। ১৯৯৩ সাল থেকে প্রতি বছর ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস পালিত হয়ে আসছে। এর উদ্দেশ্য হলো মিঠা পানির গুরুত্ব বিষয়ে আলোকপাত করা ও মানব জাতির মধ্যে এর সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
বিশ্ব পানি দিবসের মূল লক্ষ্য হলো জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (Sustainable Development Goals– SDG) বা এজেন্ডা-২০৩০ (Agenda-2030) এর লক্ষ্যমাত্রা: ৬: সকলের জন্য পানি এবং স্যানিটেশন (Water and Sanitation for all by 2030) কে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে এ দিবসটি পালনের গুরুত্ব এবং প্রতিপাদ্য নির্বাচন করা হয়।
২০২৫ সালের বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য নির্বাচন করা হয়েছে ‘হিমবাহ সংরক্ষণ(Glacier Preservation)’।
বর্তমানে বিশ্ব সংথ্যা ৮ বিলিয়ন এর অধিক। এই জনসংখ্যার ২.২ বিলিয়ন জনসংখ্যা নিরাপদ পানি পানির প্রাপ্যতা হতে বঞ্চিত (Without access to safe water) ।
হিমবাহ জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ – তাদের গলিত পানীয় জল, কৃষি, শিল্প, পরিষ্কার শক্তি উৎপাদন এবং সুস্থ বাস্তুতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য।
শুষ্ক মৌসুমে হিমবাহ বিশ্বের অধিকাংশ নদ-নদীকে মিঠা পানির সরবরাহের মাধ্যমে প্রবাহমান রাখছে এবং নদ-নদী ও ছোট ছোট সৌতশ্রেণী দ্বারা পৃথিবীর সমতল ভূমিকে সতেজ ও প্রানবন্ত রাখছে এবং এতদাঞ্চলের প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবন রক্ষা করছে। পৃথিবীর প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষ সরাসরি হিমবাহের মিঠা পানির উপর সরাসরি নির্ভরশীল।
পরিবেশ দূষণ জনিত কারণে গ্রীণ হাউজ গ্যাসসমূহের বৃদ্ধির সাথে তালমিলিয়ে ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা যত বাড়ছে শীতকাল ততই সংকুচিত হচ্ছে তার বিপরীতে গ্রীষ্মকাল প্রসারিত হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন শীত মৌসমের সংক্ষিপ্ততার কারণে পাহাড়ের পাদদেশর হিমবাহসমূহ পূর্ণগঠিত হওয়ার সময় পাচ্ছে না, তেমনি তাপমাত্রার বৃদ্ধি ও গ্রীষ্মকাল প্রসারিত হওয়ার কারণে দ্রুত তা গলে যাচ্ছে।
এভাবে হীমবাহসমূহ গলে গেলে এক সময় পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টি হবে। তাই বিশ্বর হিমবাহসমূহ টিকিয়ে রাখার জন্য ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা তথা গ্রীণহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ হ্রাস তথা ধীরে ধীরে দূষণ হ্রাস করতে হবে।
তাই মিঠা পানির প্রধান উৎস বিশ্বের সকল হিমবাহ এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান এবং এগুলোকে টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা এবং প্রদক্ষেপ গ্রহণে মানবজাতিকে উদ্বুদ্ধ করণের জন্য এ বছরের পানি দিবসের প্রতিপ্রাদ হলো “হিমবাহ সংরক্ষণ” নির্বাচন করা হয়েছে।
বিশ্ব পানি দিবসে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্বব্যাপী মিঠা পানির সংকট মোকাবেলা করার জন্য হিমবাহ সংরক্ষণে একসাথে কাজ করতে হবে।
যুক্তরাজ্য হতে প্রকাশিত বিঞ্জান ভিত্তিক জার্নাল “নেচার(Nature)” এক নিবন্ধ অনুসারে ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে প্রতি বছরে গড়ে ২৭৩ গিগাটন হিমবাহ হ্রাস পেয়েছে।
আবার এই সময়ে প্রথমার্ধ (২০০০-২০১১) এ মধ্যে বছর প্রতি যে পরিমান হিমবাহ হ্রাস পেয়েছে, দ্বিতীয়ার্ধ (২০১২-২০২৩) এ তার ৩৬% গড়ে অধিক পরিমানে হ্রাস পেয়েছে।
হিমবাহ গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্ব পানি দিবস ২০২৫-এর মূল বার্তা
- হিমবাহগুলি আগের চেয়ে দ্রুত গলে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভূ-পষ্ঠের তাপমাত্রার যত বৃদ্ধি ঘটছে, পৃথিবীর হিমবাহসমূহ ততিই সঙ্কুচিত হচ্ছে, যা পানি চক্রকে আরও অপ্রত্যাশিত এবং চরম করে তুলছে।
- হিমবাহের পতন ধ্বংসের হুমকি দিচ্ছে। কোটি কোটি মানুষের জন্য, গলিত পানির প্রবাহ পরিবর্তিত হচ্ছে, যার ফলে বন্যা, খরা, ভূমিধস এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে এবং বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে।
- হিমবাহ সংরক্ষণ একটি বেঁচে থাকার কৌশল। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে এবং মানুষ এবং গ্রহের জন্য গলিত পানিকে আরও টেকসইভাবে পরিচালনা করতে আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে।