ময়লা আবর্জনা ও পাস্টিকের ভাগাড়ে পরিনত হওয়া শুভাঢ্যা খাল পুনদ্ধার প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে
ঢাকার পাশে বুড়িগঙ্গা নদীর অপর পাড়ের দক্ষিন কেরানীগুঞ্জে প্রধান খাল এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। অবৈধ দখল আর দূষণে খালটি এখন মৃতপ্রায়। খালটি ময়লা–আবর্জনা ও প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরে গেছে।
খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩ কিলোমিটার। খালটি ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চর কালীগঞ্জ হতে শুরু হয়ে রাজেন্দ্রপুর বাজার এলাকায় গিয়ে শেষ হয়েছে। ভূমিদস্যুদের ব্যাপক দখল এবং খালটির দু’পাড়ের স্থানীয় লোকজনের ফেলা ময়লা–আর্বজনায় খালটির অস্তিত্ব এখন বিলীন হওয়ার পথে।
রাজধানী ঢাকার পাশেই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বুক চিরে শুভাঢ্যা খাল বুড়িগঙ্গা নদী ও ধলেশ্বরী নদীর সংযোগ চ্যানেল হিসাবে ব্যবহৃত হতো। মোগল আমল হতে খালটি প্রাণবন্ত জলপথ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।
সমগ্র দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ধলেশ্বরীর দু’পাড়ে অবস্থিত বিস্তৃত জনপদের মানুষ এবং পণ্য পরিবহনে নৌ-চ্যানেল হিসাবে এক মাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল। বর্তমানে খালটি দখল ও দূষণে অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে।
একসময় যে খালটি নৌ-চ্যানেল চ্যানেল হিসাবে কার্যকর ছিল, মাছ আহরণ করা যেত, দু’পাড়ের কৃষি জমিতে সেচ দেওয়া যেত, সে খালটিই এখন বর্জ্য ও পলিথিনে পরিপূর্ণ। এ ছাড়াও খালটি কোন কোন স্থানে প্রায় পুরোটাই দখল করা হয়েছে এবং অনেক স্থানে খালটি দখলে দূষণে এমনভাবে ভরাট হয়েছে যে পায়ে হেঁটে খালটি পার হওয়া যায়।
খালের দু’পাড়ে রয়েছে শত শত শিল্পকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ সব শিল্প কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সকল বর্জ্য খালে ফেলা হচ্ছে।মূলতঃ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় মানুষজন অনেকটা নিরুপায় হয়ে খালেই বর্জ্য ফেলছে।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে এসব এলাকা থেকে প্রতি দিন বর্জ্য সংগ্রহ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। আবার, খালটির দু’পাড়ে ময়লা জমা রাখার সুনির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় বর্জ্য বেশি হলে তা খালে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
বিগত দিনে খালটি পুনঃখনন, পূনদ্ধারে ও সংস্কারে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কোন উদ্যোগই কার্যকর হয়নি।
খালটি পুনরুদ্ধার ও পুনঃখননে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ৩১৭ কোটি টাকার একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এবার সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নতুন প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
খালটি পূণঃউদ্ধারে আবর্জনা পরিষ্কারকরণ অন্তে পূণঃথনন, খালের দু’পাড়ে তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়ন এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজও এবং দু’তীরে বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। আশা করা যাচ্ছে খালটির পুনদ্ধার এর প্রকল্পের কাজ আগামী ২০২৬ সালে সমাপ্ত হবে।
গতকাল ১১ মে ২০২৫ খ্রিঃ তারিখে পরিবেশ উপদেষ্টা খালটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি সরে জমিনে পর্যবেক্ষনে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কালিগঞ্জ ও শ্মশান ঘাট এলাকায় পরিদর্শণ করেন।
পরিদর্শনকারীন তিনি বলেন, জনগণের টাকায় এই খাল পুনদ্ধারের কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। তাই যাতে অর্থ অপচয় না হয়, সাশ্রয় হয় এবং কার্যকর সুফল বয়ে আনে সে লক্ষ্যে সরকার তৎপর। তিনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শুধু সরকার নয়, এলাকাবাসীকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, এই খাল খননের পর দুই পাশে প্রাকৃতিক নিয়মে সবুজায়ন ও বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এ উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।