22 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ৪:৫২ | ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
মেগা প্রকল্পের ফলে ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল
পরিবেশ দূষণ

মেগা প্রকল্পের ফলে ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল

মেগা প্রকল্পের ফলে ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল

সরকারি–বেসরকারি মেগা প্রকল্পের কারণে বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে বলে মনে করেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে বনের জায়গা দখল করে একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

কলকারখানা, রিসোর্ট, আবাসনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে, যা বনাঞ্চল ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশগত ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘বন, পাহাড়, উপকূল ও আদিবাসী অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।

বাপার সহসভাপতি মহিদুল হক খানের সভাপতিত্বে সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম।



বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাসের সঞ্চালনায় সভায় আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন ও অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর মোহাম্মদ আলী, আদিবাসী নেতা দীপায়ন খীসা প্রমুখ।

সভায় উপস্থাপন করা ধারণাপত্রে এম শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘একটি দেশে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকার কথা থাকলেও আমাদের সরকারি হিসাবে আছে ১৩ শতাংশ। বাস্তবে আরও কম। গবেষণায় দেখা গেছে, গত ২৫ বছরে পাহাড়ে ৩০ শতাংশ বনভূমি কমেছে, যার অন্যতম কারণ শিল্পায়ন ও নগরায়ণ।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি সংস্থাও বনের জায়গায় বিশাল বিশাল প্রকল্প করেছে। বনে গড়ে তোলা হয়েছে হরেক রকমের রিসোর্ট। এতে কেবল বনের গাছপালা নয়, বনের প্রাণ-প্রকৃতিও নষ্ট করছে।

লবণাক্ততার তীব্রতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘একসময় আমাদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল, হেক্টরপ্রতি ১ হাজার ২০০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন হবে। যে কারণে চিংড়ি চাষের প্রসার ঘটে।



কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণের বদলে আমরা লবণ পেয়েছি। আর লবণাক্ততার প্রভাবে সুন্দরবন বিলীন হওয়ার উপক্রম। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। এরপর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিবেশের এই সংকটের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের চেয়ে আমাদের দায়ও কম নয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদুল ইসলাম বলেন, দখল–দূষণের কারণে উপকূলে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েছে। প্রতিবছরই পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। বন্যার প্রকোপ বাড়ছে। নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

বিভিন্ন এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। কিন্তু দখল-দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। এ অবস্থায় আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ বলেন, অদূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে ভূমি ও ভূপ্রকৃতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাহাড়, উপকূলসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে। এই সংকট মোকাবিলায় যেকোনো প্রকল্প গ্রহণে স্থানীয় ইস্যুগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।

সব এলাকার জন্য একই প্রকল্প সমান সুফল দেবে না। বিশেষায়িত অঞ্চলের জন্য স্থানীয় জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প প্রণয়ন করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে আধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের চিরায়ত জ্ঞানকে প্রধান্য দিতে হবে।

অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন বলেন, ‘যে ব্যবস্থাপনা আমাদের বনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, সেই ব্যবস্থাপনা আমরা চাই না। আদিবাসীরা ৮৫ শতাংশ বন রক্ষা করে থাকে। অথচ তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বন ও ভূমি বিপর্যয় থেকে রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’



শিক্ষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, উপকূল সব সময় বঞ্চিত। উপকূলের চারপাশে পানি থাকলেও বিশুদ্ধ পানির সংকট চলছে, পানির কারণে স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে, দখল–দূষণে নদীগুলো মৃতপ্রায়। ব্লক ও বাঁধ দিয়ে উপকূল রক্ষার নামে অনিয়ম বন্ধ, উপকূলের নিষিদ্ধ জাল নির্মূল ও জেলেদের পুনর্বাসন জরুরি।

দ্বিতীয় দিনের শুরুতে ‘স্থায়িত্বশীল নগরায়ণ’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন বাপা সহসভাপতি খুশী কবির। ধারণাপত্র উত্থাপন করেন পরিকল্পনাবিদ তৌফিকুল আলম।

সর্বশেষ অধিবেশনে ‘জ্বালানি, বিদ্যুৎ, ও জলবায়ু পরিবর্তন’ নিয়ে আলোচনা হয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদের সভাপতিত্বে ওই সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাপার কোষাধ্যক্ষ জাকির হোসেন।

সভায় দেশি-বিদেশি পরিবেশবিজ্ঞানী, গবেষক ও সারা দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিরা মতামত তুলে ধরেন। সবার মতামতের ভিত্তিতে সম্মেলনের প্রস্তাব গৃহীত হয়।

সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবনায় বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলোকে পরিবেশ রক্ষার প্রতি মনোযোগী করতে বাপার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে এবং আগামী নির্বাচনের আগে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সব রাজনৈতিক দলকে বাপা সুপারিশ দেবে।

পরিবেশ আন্দোলনের রাজনৈতিক কার্যকারিতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে বাপা-বেনে অনুসন্ধান ও আলোচনা অব্যাহত রাখবে। শিল্পায়নকে বিকেন্দ্রীকরণ ও সুষম নগরায়ণের লক্ষ্যের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। পরিবেশ সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে জোরাদার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত