কৃত্রিমভাবে মেঘের ঘনত্ব পরিবর্তন: বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণের এক বিতর্কিত কৌশল, ঝুঁকি নিয়ে বিতর্ক
ঢাকা, ০৬ নভেম্বর, ২০২৫ – বিশ্ব উষ্ণায়নের দ্রুত গতি মোকাবিলায় বিজ্ঞানীরা এখন বিতর্কিত ‘জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং’ (Geo-engineering) কৌশলগুলির দিকে মনোযোগ বাড়াচ্ছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো মেরিন ক্লাউড ব্রাইটেনিং (Marine Cloud Brightening – MCB) বা সামুদ্রিক মেঘের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি।
এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সমুদ্রের লবণ কণাগুলি বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যা মেঘে ‘বীজ’ হিসেবে কাজ করে এবং তাদের আরও উজ্জ্বল করে তোলে। এই উজ্জ্বল মেঘ তখন সূর্যের আলো বেশি পরিমাণে প্রতিফলিত করে মহাকাশে ফিরিয়ে দেয় এবং পৃথিবীকে শীতল রাখতে সহায়তা করে।
MCB-এর সমর্থকরা মনে করেন, এটি বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে সাময়িকভাবে দ্রুত প্রশমিত করার একটি কার্যকর উপায় হতে পারে, বিশেষ করে যদি নির্গমন কমানোর প্রচেষ্টা যথেষ্ট দ্রুত ফলপ্রসূ না হয়।
অস্ট্রেলিয়ার ‘অ্যাটমোস্ফিয়ারিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ দ্বারা পরিচালিত ছোট আকারের পাইলট পরীক্ষাগুলি ইঙ্গিত দিয়েছে যে, একটি সীমিত অঞ্চলে তাপমাত্রা সাময়িকভাবে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমানো সম্ভব।
এই গবেষণাগুলির ফল ‘নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে, গ্রীনহাউস গ্যাসের মাত্রা কমানোর সঙ্গে সঙ্গে এই কৌশলটি একটি ‘জরুরি ব্যবস্থা’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তবে, এই ধরনের বৃহৎ আকারের বায়ুমণ্ডলীয় হস্তক্ষেপ নিয়ে নৈতিক, পরিবেশগত এবং আইনি ঝুঁকিগুলি অত্যন্ত গুরুতর। সমালোচকরা সতর্ক করেছেন যে MCB পদ্ধতি অপ্রত্যাশিত আবহাওয়ার ধরণ (unpredictable weather patterns), আঞ্চলিক বৃষ্টিপাতের ধরণে পরিবর্তন আনতে পারে, যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে খরা বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়াতে পারে।
‘ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (WMO)’ এক বিশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং শুরু করার আগে বিশ্বজুড়ে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এবং আঞ্চলিক খাদ্য নিরাপত্তার ওপর এর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি ও তত্ত্বাবধান অপরিহার্য।
