জলবায়ু সংকট আর পরিবেশগত নয়: ল্যানসেট রিপোর্ট এবং জীববৈচিত্র্যের ব্যালান্স
বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্য সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট’ (The Lancet) থেকে প্রকাশিত ‘কাউন্টডাউন ২০২০৫’ রিপোর্টটি এক কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছে: জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর কেবল একটি দূরবর্তী পরিবেশগত সংকট নয়, বরং এটি মানবজাতির শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক স্বাস্থ্যের উপর সরাসরি আক্রমণ।
এই রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে যে, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার ঘটনা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং ভেক্টর-বাহিত রোগের বিস্তার বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনযাত্রার স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হচ্ছে।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৯০-এর দশক থেকে তাপ-সম্পর্কিত মৃত্যুহার (Heat-related Mortality) প্রায় ৬৩% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত দশকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫৫০,০০০ মৃত্যুতে পৌঁছেছে। এছাড়া, তাপ-জনিত চাপ বা ‘হিট স্ট্রেস’-এর কারণে বিশ্বব্যাপী জিডিপি-র প্রায় ১% উৎপাদনশীলতা নষ্ট হচ্ছে।
মশা-বাহিত রোগ, যেমন ডেঙ্গু, এখন একসময়ের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। এই চিত্রগুলি স্পষ্ট করে যে, জলবায়ু সংকট মানবদেহের স্থিতিশীল শারীরবৃত্তীয় সীমা (physiological limits) অতিক্রম করে যাচ্ছে।
ল্যানসেট রিপোর্টটি জীবাশ্ম জ্বালানির উপর বৈশ্বিক নির্ভরশীলতারও সমালোচনা করেছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকির পরিমাণ (প্রায় ৯৫৬ বিলিয়ন ডলার) এখন মোট বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য বাজেটের চেয়েও বেশি।
এই ভারসাম্যহীনতা তুলে ধরে যে, বৈশ্বিক অর্থনীতি এখনও শক্তি প্রাপ্তির উপর নির্ভরশীল, সুসংহত ঝুঁকি প্রতিরোধের উপর নয়। এই পরিস্থিতিতে, বিজ্ঞানীরা এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনকে জনস্বাস্থ্যের একটি কেন্দ্রীয় নির্দেশক হিসেবে বিবেচনা করে নীতি সংস্কার এবং জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি বন্ধ করার জরুরি আহ্বান জানিয়েছেন।
