সবুজ হয়ে উঠছে গ্রেট ইন্ডিয়ান মরুভূমি
গবেষকরা বলছেন, গত দুই দশকে এই মরুভূমিতে আরও বেশি লোক বাস করছে এবং ভূদৃশ্য পরিবর্তনের ফলে এটি কৃষি ও নগরায়ণে পরিণত হয়েছে। এটি মরুভূমিকে আরও সবুজ করে তোলার একটি কারণ। তবে এর আরেকটি কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন, যার ফলে এই অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
থর মরুভূমি, যাকে গ্রেট ইন্ডিয়ান মরুভূমিও বলা হয়। উত্তর-পশ্চিম ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব পাকিস্তানে ৭৭,০০০ বর্গমাইল (২০০,০০০ বর্গকিলোমিটার) বিস্তৃত।
যদিও বিশ্বের অনেক মরুভূমি ক্রমবর্ধমান খরার মুখোমুখি হচ্ছে, কিন্তু থর মরুভূমি নগর ও কৃষি প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে ১ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা নিয়ে বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে এটি।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি গান্ধীনগরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বিমল মিশ্র লাইভ সায়েন্সকে বলেন, পানি ও জ্বালানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধির ফলে কৃষি ও নগর এলাকায় সম্প্রসারণ ঘটেছে এবং এই অঞ্চলে ফসলের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নগরায়ন, কৃষি এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, এমন বিশ্বের আর কোনো মরুভূমি নেই।
১৮ এপ্রিল সেল রিপোর্টস সাসটেইনেবিলিটি জার্নালে প্রকাশিত নতুন এই গবেষণায় ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত স্যাটেলাইট তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিমল এবং তার দল দেখেছেন, এই সময়ের মধ্যে মরুভূমি গড়ে ৩৮% সবুজ হয়ে উঠেছে, স্যাটেলাইট ছবিতে আরও গাছপালা দৃশ্যমান হয়েছে।
ঠিক কেন সবুজায়ন ঘটছে, তা বোঝার জন্য গবেষকরা থর মরুভূমিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ঐতিহাসিক রেকর্ড, সেচ অবকাঠামো এবং জলবায়ু মডেলগুলোও দেখেছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, থর মরুভূমির সবুজায়ন মূলত গ্রীষ্মকালীন বর্ষা মৌসুমে বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে ঘটেছে – সামগ্রিকভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বিতীয়ত, বর্ষা মৌসুমের বাইরে ভূগর্ভস্থ পানি ভূপৃষ্ঠে নিয়ে আসার কারণে সেচ অবকাঠামো গড়ে ওঠার কারণে।
গবেষণার লেখকরা পরামর্শ দিয়েছেন, থর মরুভূমিতে পানি-সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা এই অঞ্চলটিকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে এবং টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করতে পারে। তবে উষ্ণ তাপমাত্রা এই মরুভূমিতে বসবাসকারী ১ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে এবং সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার সম্পদ হ্রাস করতে পারে।
গবেষকরা বলেছেন, থর মরুভূমিতে ভবিষ্যতের উন্নয়নের অংশ হিসেবে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার অনুশীলন, খরা-প্রতিরোধী ফসল, ক্রমবর্ধমান তাপের সঙ্গে অভিযোজন এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
গবেষণা অনুসারে, মৌসুমি বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির ফলে আরও বন্যা হতে পারে। কেননা জলবায়ু মডেলগুলো থেকে অনুমান, এই বর্ধিত বৃষ্টিপাত চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলোর মধ্যে ‘বিস্ফোরণে’ ঘটবে, যা মরুভূমিতে ঘরবাড়ি এবং ভবনগুলোর ক্ষতি করতে পারে। তবে যদি বর্ধিত বৃষ্টিপাতকে নিয়ন্ত্রণ এবং মানিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে এই অঞ্চলের মানুষ এবং কৃষিক্ষেত্রও সমৃদ্ধ হতে পারে।
একটি পৃথক গবেষণায় গবেষকরা অনুমান করেছেন, একবিংশ শতাব্দীর শেষ নাগাদ এই মরুভূমি আরও বেশি ভূমি সবুজ হয়ে উঠবে।
এই পরিবর্তন এই অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে, কিন্তু মরুভূমিতে অভিযোজিত বিশেষ প্রজাতির স্থানীয় জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, উন্নয়ন অব্যাহত থাকার সাথে সাথে মরুভূমির পরিবেশের এই দিকগুলো সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করা উচিত।