সরকারি আইন অমান্য করে ইটভাটায় কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণ
সরকার আইন করে নিষিদ্ধ করলেও বরগুনার বেতাগীতে ৬টি ইটভাটায় কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। ইটভাটার মালিকেরা সামাজিক বনের গাছ কেটে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করায় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।
এর মধ্যে কয়েকটি ইটভাটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে এবং আবাসিক এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। এতে ইটভাটার চুল্লি থেকে বের হওয়া কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এ ছাড়া এই ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
বরগুনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়া শিশুদের ঝুঁকি বাড়ায়।
বরগুনা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৬৪টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে বেতাগীতে থাকা মেসার্স বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স হাওলাদার ব্রিকস, মেসার্স আরএমবি ব্রিকস, মেসার্স কেজেডএফ ব্রিকস ও মেসার্স এমএইচকে ব্রিকসে জ্বালানি হিসেবে কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইটভাটার শ্রমিকেরা জানান, প্রতিটি ভাটায় দৈনিক ৪০০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। ইট তৈরির মৌসুমে (কার্তিক মাস থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত) ভাটাগুলোতে বেতাগী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে গাছ কিনে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করা হয়।
শ্রমিকদের দেওয়া এই তথ্য অনুযায়ী, বেতাগীর ছয়টি ভাটায় প্রতিদিন ২ হাজার ৪০০ মণ ইট পোড়ানো হয়। অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩–এর ৬ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কোনো জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করতে পারবেন না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বাইয়েন বলেন, কোনো অবস্থায় ইট তৈরির জন্য ভাটায় কাঠ পোড়ানো যাবে না। কাঠ সংগ্রহের জন্য গাছ কাটা অব্যাহত থাকলে পরিবেশ বিপর্যস্ত হবে।
আরএমবি ব্রিকস নামের ইটভাটাটি বেতাগী সদর উপজেলার কেওড়াবুনিয়া এলাকায় বিষখালী নদীর তীরে। সেখানে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। এই ভাটার মধ্য কয়েক হাজার মণ কাঠ স্তূপ করে রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া কাঠ চেরাইয়ের জন্য ভাটার ভেতরে করাতকল স্থাপন করা হয়েছে। এই ইটভাটার মালিক বেতাগী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র গোলাম কবির।
এ বিষয়ে আরএমবি ব্রিকসের ব্যবস্থাপক জলিল মিয়া বলেন, ‘কয়লার সংকট থাকার কারণে আমরা এ বছর কাঠ দিয়ে ইট পুড়ছি। টাকা দিয়েও আমরা কয়লা পাই না।’