সামুদ্রিক পাখির ‘সার্কুলার ইকোনমি’: সাগর-দ্বীপ-মানুষ—সবকিছুকে যুক্ত রাখা এক প্রাকৃতিক সেতু
নেচার রিভিউজ বায়োডাইভারসিটিতে প্রকাশিত নতুন রিভিউ বলছে—সামুদ্রিক পাখিরা (seabirds) সাগর থেকে খাদ্য তুলে এনে গুয়ার্নো/মল-মূত্র ত্যাগের মাধ্যমে দ্বীপ ও আশপাশের জলভাগে পুষ্টি ফিরিয়ে দেয়। এতে শৈবাল, প্রবাল, সামুদ্রিক মাছ ও উপকূলীয় ইকোসিস্টেম টেকসই ও শক্তিশালী হয়।
৩০ অক্টোবর ২০২৫ — নর্দান ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (NIU) নেতৃত্বে করা বৈশ্বিক সমীক্ষা—যাকে লেখকেরা বলছেন ‘সার্কুলার সীবার্ড ইকোনমি’—দেখিয়েছে, সামুদ্রিক পাখিরা সমুদ্রে খাদ্য খেয়ে দ্বীপে বাসার কাছে গুয়ার্নো হিসেবে যে পুষ্টি ফেলে, তা মাটি-গাছপালা সমৃদ্ধ করে; বৃষ্টিতে/জোয়ারে এই পুষ্টি সমুদ্রে ফিরে গিয়ে প্রবাল বৃদ্ধিতে সহায়তা ও মাছের বায়োমাস বাড়ায়, ফলে জলবায়ু-চাপের মাঝেও উপকূলীয় ইকোসিস্টেমের সহনশীলতা বাড়ে। প্রবন্ধটি ২৭ অক্টোবর ২০২৫-এ প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দ্বীপ-ভিত্তিক সংরক্ষণ (উপদ্বীপ/চর, ম্যানগ্রোভের ধারে পাখি-কলোনি) সমুদ্র-স্থলভাগের ইকোসিস্টেম টেকসই ও শক্তিশালী করতে পারে—যা স্থানীয় মৎস্য-সম্পদ ও প্রবাল-ঘেঁষা জীববৈচিত্র্য বাঁচিয়ে রাখতে সহায়ক। সমুদ্র-দ্বীপের মধ্যে পুষ্টি স্থানান্তরের প্রভাব সহজেই অনুধাবন করা যায় এবং তা আঞ্চলিক অর্থনীতি/সংস্কৃতিতেও ছুঁয়ে যায় (ন্যাভিগেশন, সার/গুয়ার্নো, খাদ্য, সাংস্কৃতিক পরিচয়)।
উপকূলীয় ইকোসিস্টেম রক্ষায় সীবার্ড সবচেয়ে হুমকিতে থাকা পাখি-গোষ্ঠীগুলোর একটি কেননা আগ্রাসী শিকারি (ইঁদুর-বিড়াল), আবাস ধ্বংস আর জলবায়ু পরিবর্তনে এই প্রজাতি দিনে দিনে কমতে শুরু করেছে। আর তা ঘটলে ইকোসিস্টেম বা পুষ্টি-সেতুটি দুর্বল হবে ফলে ঝুঁকিতে পড়বে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ প্রজাতি।
সমাধান কল্পে আমাদের যা করা প্রয়োজন –
- দ্বীপে ইনভেসিভ ইঁদুর-বিড়াল প্রবেশ ঠেকানো
- দ্বীপ/উপদ্বীপের বায়ো-সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে হবে
- নেস্টিং সাইট সুরক্ষা করা
- দ্বীপে ইনভেসিভ শিকারি নির্মূল
- সোশ্যাল অ্যাট্রাকশন’ ও ছানা স্থানান্তর
- বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কড়া করা
এই পদক্ষেপ গ্রহন করলে সীবার্ড ফিরে আসবে। আর সীবার্ড ফিরলে প্রবালপ্রাচীর-মাছও দ্রুত সেরে ওঠে কেননা, ২০২৫-এর আরেক গবেষণায় দেখা গেছে সীবার্ড এর ফলে ইকোসিস্টেমের সহনশীলতা বা পুষ্টি প্রবাহ ফিরলে প্রবাল রিফের ডাইনামিক ফাংশন (উৎপাদনশীলতা, হার্বিভোরাস ফিশ বায়োমাস) বাড়ে আর তখন এই ‘সার্কুলার ইকোনমি’ কাজ করে—এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে সফল কেস দিনে দিনে বাড়ছে বাড়ছে।
