এসিড বৃষ্টি বা অম্ল বৃষ্টি (ACID RAIN)
আমরা সেই ছোট্ট কাল হতেই এসিড বৃষ্টি বা অম্ল বৃষ্টির কথা শুনে আসছি। আমাদের অনেকের ধারণা বিশ্বের কোন বিশেষ অঞ্চলে কোন একটি সময়ে এ ধরণের র্বষ্টি হয়ত অতীতে হয়েছে বা মাঝে মাঝে হয়।
নিশ্চয় সে বৃষ্টি ভয়ংকর এবং যেখানে হয় সেখানে সব কিছু এসিডে জ্বলষে যায়, পুড়ে ছারকার হয়ে যায়। আসলে আমাদের দেশের মত যে সকল দেশে বা অঞ্চলে বায়ু মন্ডল সালফারের (S) অক্সাইড ও নাইট্রোজেনের (N) অক্সাইড এ ভরপুর সেথায় প্রতি নিয়তই এসিড রেইন বা অম্ল বৃষ্টি হচ্ছে।
যখন বৃষ্টির পানির PH মান ৪ (চার) অথবা ৪ (চার) এর চেয়ে কম হয়, তখনই সেই বৃষ্টি কে অম্ল বৃষ্টি বা Acid rain বলে।
PH হলো কোন তরলের হাইড্রোজেন আয়ন (H+) এর ঘনত্বের পরিমান। ইহাকে নেগেটিভ লগারিদম হাইড্রোজেন আয়ন ঘনত্ব দ্বারা প্রকাশ করা হয়, ইহার রাসায়নিক সংকেত নিন্মে দেয়া হ’ল:-
PH = log10 (1/H+) বা -log10H+
ইহাকে একটি স্কেল দ্বারা প্রকাশ করা হয় উহাকে PH স্কেল বলে। PH স্কেল এ ০ হতে ১৪ পর্যন্ত দাগাঙ্কিত থাকে।পরিস্কার খাওয়ার পানির PH এর মান ৭ ধরা হয়। কোন তরলের PH এর মান ৭ হতে কম হলে উহা এসিড এবং ৭ এর বেশী হলে উহাকে ক্ষার বা ক্ষারক বা Basic বলা হয়।
রাসায়নিক সংকেত হতে বুঝা যায় যে, কোন তরলে H+এর পরিমান ১০ গুচ্ছ বৃদ্ধি পেলে PH এর মান ১ কমে যায় এবং আবার H+এর পরিমান ১০ গুচ্ছ কমে গেলে PH এর মান ১ বৃদ্ধি পায় যায়। নিন্মে একটি PH স্কেল দেওয়া হ’ল।
যে সকল শহর বা অঞ্চলে শিল্প ইন্ডাষ্ট্রিজ, গাড়ীর চলাচল বা কাঠ বা কয়লার ইটের ভাটা বেশী থাকে অথবা কৃষির উচ্চিষ্ট খড় পোড়ানো হয় সেসব শহরে বা অঞ্চলে বা নিকটবর্তী অঞ্চলের বায়ুমন্ডলে সাধারনত সালফার ও নাইট্রোজেন অক্সাইড বেশী থাকে এবং ঐ সকল অঞ্চলের বৃষ্টি এসিডিয় হয়।
নিন্মে সালফার (S)ও নাইট্রোজেন (N)এর সাথে অক্সিজেনের সূর্যের আলোতে বিক্রিয়ায় প্রথমে অক্সাইড তার পর বৃষ্টির পানি বা কুয়াশার পানির সহিত বিক্রিয়ায় এসিড বৃষ্টির রাসায়নিক বিক্রিয়া দেখানো হ’ল:-
(১) সালফার (S) এর সাথে অক্সিজেন (O2) এবং বৃষ্টি বা কুয়াশার পানির বিক্রিয়ায় সালফিউরিক এসিড (H2SO4):
S + O2 → SO2
SO2 +1/2 O2 + H2O = H2SO4↓
(2) নাইট্রোজেন (N) এর সাথে অক্সিজেন (O2) এবং বৃষ্টি বা কুয়াশার পানির বিক্রিয়ায় নাইট্রিক এসিড (HNO3 )
N + O2 → NO
NO + O2 + H2O → HNO3
এসিড বৃষ্টির কুফল:
- খাওয়ার পানি দূষিত করে
- জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- মাটির PH মান পরিবর্তণ করে উর্বরতা নষ্ট করে। মাটির PH সাধারনত ৭- ৮ থাকে। কিন্তু এসিড বৃষ্টির ফলে উহা হ্রাস পায় এবং মাটির রাসায়নিক সমতা নষ্ট হয়ে যায়। মাটিতে ইসড বৃষ্টি জমে যাওয়াকে ইংরেজীতে Wet Deposition বলে।
- বিল্ডিং এবং ভাস্কর্য ক্ষয় প্রাপ্ত হয়।
- বনভূমি ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।
বায়ুতে সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইড পরিমান বৃদ্ধির কারণগুলো নিণ্মে দেওয়া হল:
সালফার ডাই অক্সাইড (SO2)
- শিল্প ইন্ডাষ্টিজে, গাড়ীতে, ইটের ভাটায় প্রেট্রোল, ডিজেল, কয়লা ইত্যাদি জ্বালাণী পোড়ানোর ফলে। বিশেষ করে শিল্প ইন্ডাষ্টিজে কয়লা পোড়ানোর ফলে ৭৫%) ।
- শিল্প – কারখানায় অন্যান্য প্রক্রিয়ায় (২৫%)।
নাইট্রোজেন অক্সাইড (NO)
- গাড়ীতে জ্বালানী হিসাবে প্রেট্রোল, ডিজেল, অকটেন ইত্যাদি ব্যবহার তথা পোড়ানোর ফলে (৫২%)।
- শিল্প ইন্ডাষ্টিজে, ইটের ভাটায় প্রেট্রোল, ডিজেল, কয়লা ইত্যাদি জ্বালাণী পোড়ানোর ফলে। (৪৪%)।
- কৃষি ও অন্যান্য (৪%) ।


প্রতিকার:
- এক জন বা দুই জনের জন্য ছোট ছোট গাড়ী ব্যবহার যেমন টেক্সী, কার ব্যববহার না করে বড় বড় বাস, রেলগাড়ী ব্যবহার করা।
- গাড়ীর পরিবর্তে সাইকেল ব্যবহার করা, কম দূরত্বে হেটে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
- প্রেট্রোল, ডিজেল, অকটেন এর ব্যবহার ক্রমে হ্রাস করা।
- কয়লা ও কাঠ পোড়ানো একেবারে বন্ধ করে দেওয়া।
- শিল্প কারখানা শহর হতে দূরে স্থাপন করা ।
- চিমনিতে cleaning process, Electrostatic Precipitous, Coal burring PP এর ব্যবহার নিশ্চিত করা।
- সকল ক্ষেত্রে সবুজ জ্বালাণী ব্যবহার করা।
- কৃষি কাজ ও রান্নার কাজে ধোঁয়া সৃষ্টি হয় এমন বস্তু বা খড় পোড়ানো বন্ধ করা ইত্যাদি।
- যে সকল অঞ্চলে এসিড বৃষ্টি হয় সে সকল অঞ্চলের পুকুর, জলাশয়, মৎস প্রকল্পে পানির এসিডিয় পরিমান দূর করার জন্য মাঝে মাঝে চুন/ক্ষার প্রয়োগ করা।
1. Atmospheric Pollution, History, Science and Regulation, Mark Z. Jacobson, Cambridge Uni. Press, 2003
2. Environment: Problems and Solutions, DK Asthana, Meera Asthana, Chand Pub. India, 1999.
3. Environmental Chemistry, AK De, 4th Edition, New Age International (Pvt)Ltd, India, 2000
4. Air Pollution, MN Rao, HVN Rao, Tata-McGraw-Hill, India, 1989.
5. Wikipedia.