জেনে অবাক হবেন যে, প্রাচীন কিছু কুমিরেরা দুই পায়ে চলাফেরা করত।
কুমির একটি উভয়চর প্রাণী এবং স্থলভাগে চার পায়ে মানুষের মত চলাফেরা করে।
কিন্তু সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করা জীবাশ্মের ট্র্যাক থেকে বিজ্ঞাণীরা ধারণা করছেন যে, প্রাচিন কালে কুমিরেরা সম্ভবত দু’পায়ে চলাফেরা করত।

দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি লেকের তীরে কদমাক্ত মাটিতে প্রমাণগুলো রয়েছে যা ১১০-১২০ মিলিয়ন বছর পূর্বে ক্রিটাসিয়াস যুগের প্রথম দিকের।
ক্রিটাসিয়াস যুগ হ’ল জুরাসিক যুগ ও টারসিয়ারী যুগের মধ্যবর্তী যুগ, ভূ গঠন পর্যায়ের উষ্ণ যুগ- যখন পৃথিবীতে মানুষের আগমন ঘটে নাই এবং তখন স্থলভাগে ডাইনোসরদের আদিপত্য ছিল ।
যদিও এই আবিষ্কারের যথেষ্ট বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। যে দলটি ইহা আবিস্কার করেছে তারাও মনে করে যে আমাদের ধারণাটি চ্যালেঞ্জ করার যথেষ্ঠ সুযোগ রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মার্টিন লকলে এটিকে কুমিরের পদচিহ্ন বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
সমীক্ষাটি একটি প্রাণবন্ত বিতর্ককে উৎসাহিত করার বিষয়ে নিশ্চিত। তবে এটি উট পাখি বা অন্য কোন আচার্যজনক পাখির জীবাশ্ম হতে পারে। এটি যদি কুমির হয় তবে এটি আমাদের বিবর্তনমূলক সূচনা দেখায়।

অধ্যাপক লকলি এবং তার সহকর্মীরা ট্র্যাকগুলো তৈরি করে এমন প্রাণীটিকে বাতরাচোপাস গ্রানিস (Batrachopus grandis) নামটি দিয়েছেন, যদিও এর কোনও শারীরিক গঠন এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
প্রাণীর অস্তিত্বের স্বীকৃতি কেবলমাত্র জীবাশ্মের মুদ্রণের উপর নির্ভর করে। এগুলো দেখতে অনেকটা বৃহত্তর হলেও আকৃতিতে খুব একই রকম দেখাচ্ছে, যদিও বারাচোপাস ক্রোকরা লক্ষ লক্ষ বছর আগে জুরাসিকের যুগে বাস করত।
কোরিয়ার চিনজু জাতীয় শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালযয়ের দল নেতা অধ্যাপক কিং সু কিম বলেন যে, ”পদচিহ্নগুলো পর্যবেক্ষণ করলে গোঁড়ালীর গভরতা প্রাণীটির আরও খাড়া ভঙ্গির ধারণাকে সমর্থন করে”।
তিনি আরও বলেন যে, “আমাদের ট্র্যাকওয়েগুলি অত্যন্ত সংকীর্ণ – আঁটসাঁট দড়ির উপর কুমিরের ভারসাম্যহীন,”।
তিনি আরও বলেন যে, “ এই প্রাণীগুলি দ্বিপদী এবং অনেকটা ডাইনোসরের মতো একই পথে চলছিল, তবে পায়ের ছাপগুলো ডাইনোসর দ্বারা তৈরি হয়নি।
কারণ, ডাইনোসর ও উহাদের পাখির বংশধররা তাদের পায়ের আঙ্গুলগুলোতে ভর করে হাঁটত।কুমিররাই মানুষের মতো স্পষ্ট গোঁড়ালির ছাপ রেখে তাদের পায়ের ফ্ল্যাটে চলাফেরা করে।”

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিল ম্যানিং আবিষ্কারের দলে অর্ন্তভূক্ত ছিলেন না। জীবাশ্ম ট্র্যাকওয়ে বিশেষজ্ঞ হিসাবে তিনি প্রিন্টগুলি “খুব আকর্ষণীয়” হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং তাদের প্রকাশনাকে আলোচনা শুরু করার জন্য স্বাগত জানিয়েছেন – তবে তিনি ব্যাখ্যাটিতে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন “দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের বলার মতো জীবাশ্মের হাড় নেই। তাই ইহা কুমির কিনা বলা যাচ্ছে না।
তবে গবেষকরা অচিরেই এই বির্তকের অবসান ঘটাবেন।

চিত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার জীবাশ্ম ট্র্যাকওয়েগুলির বিশাল বৈচিত্র রয়েছে – তবে তুলনামূলকভাবে কয়েকটি জীবাশ্মের হাড় রয়েছে