নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেন্ট মার্টিনে নির্মাণ হচ্ছে হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্ট মার্টিন দ্বীপের যত্রতত্র হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ নির্মাণ করা হচ্ছে। অথচ এ দ্বীপে সব ধরনের স্থাপনা-অবকাঠামো নির্মাণ নিষিদ্ধ। বঙ্গোপসাগরের বুকে মাত্র ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ প্রবালদ্বীপকে ১৯৮৯ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
গত ৪ জানুয়ারি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের আশপাশে ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া (এমপিএ) ঘোষণা করে সরকার। ঘোষণার পরও দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে রিসোর্ট-কটেজসহ অবকাঠামো নির্মাণ থেমে নেই।
সেন্ট মার্টিনে পর্যটকের যাতায়াত সীমিত করা, পরিবেশ-প্রতিবেশের সুরক্ষায় ১৪ দফা নির্দেশনাসংবলিত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে দুই বছর ধরে প্রচারণা চালাচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। চিত্র বরং ঠিক উল্টো।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইতিমধ্যে ১৯০টি ছোট-বড় হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ নির্মাণ করা হয়। এখন ৩০টির বেশি হোটেল-রিসোর্ট-কটেজের নির্মাণকাজ চলছে।
এসব হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজের কোনোটির পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। নেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। হোটেলের বর্জ্য মিশছে সাগরের পানিতে। অধিকাংশ স্থাপনা তৈরি হচ্ছে সৈকতের বালুর নিচের বড় বড় পাথর উত্তোলন করেই।
দ্বীপের মধ্যভাগে গলাচিপা এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মেরিন পার্কের কার্যালয়ের দক্ষিণ পাশে লাগোয়া চাষের জমিতে টিনের ঘেরা বেড়া দিয়ে চলছে ‘স্যান্ড কোস্টাল বিচ’ নামের একটি রিসোর্ট তৈরির কাজ।
৩০ জনের বেশি শ্রমিক সেখানে একাধিক কটেজ তৈরির কাজ করছেন। পাশে তৈরি হচ্ছে দুইতলা পাকা টাওয়ার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা একজন কর্মচারী স্বীকার করেন, রিসোর্ট তৈরির বিপরীতে কাগজপত্র নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরকে ‘ম্যানেজ’ করে রিসোর্ট তৈরি হচ্ছে। রিসোর্ট তৈরিতে খরচ হবে কোটি টাকা।
মেরিন পার্কের উত্তর পাশের জমিতে টিনের ঘেরা বেড়া দিয়ে ভেতরে তৈরি হচ্ছে ‘দ্বিপান্বিতা টেলিমেডিসিন অ্যান্ড রিসোর্ট সেন্টার’ এবং ‘গোধূলি ইকো রিসোর্ট’। এ দুটো প্রতিষ্ঠানের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। টেকনাফ থেকে ট্রলার বোঝাই করে ইট-সিমেন্ট–বালু নিয়ে এসে অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, যেকোনো মূল্যে প্রবালদ্বীপটি বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সেখানকার অবৈধ স্থাপনাসমূহ উচ্ছেদ এবং অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন তাঁরা।
তবে পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের আশপাশে অবৈধভাবে রিসোর্ট-কটেজ নির্মাণ প্রসঙ্গে এ দপ্তরের সহকারী পরিচালক (সেন্ট মার্টিন দ্বীপ) মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, জনবলসংকটের কারণে ঠিকমতো নজরদারিও করা যাচ্ছে না। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা আদায় হচ্ছে, মামলা হচ্ছে। কিন্তু নির্মাণকাজ থামানো যাচ্ছে না। দপ্তরে জনবল মাত্র ছয়জন।
দ্বীপের উত্তর সৈকতে অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছে ‘ড্রিমার্স প্যারাডাইস রিসোর্ট’ নামে একটি তিনতলা ভবন। গত ২৭ জানুয়ারি সেখানে অভিযান চালান পরিবেশ অধিদপ্তরের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
তখন ভবনটির তিনতলা ছাদের ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট নওরীন হক অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের দায়ে মালিককে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন। ভবনটির মালিক আবদুর রশিদ নামে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার একজন ব্যবসায়ী।
একই সময় অবৈধভাবে পাকা স্থাপনা তৈরির দায়ে ‘আটলান্টিক রিসোর্ট’ একটি ভবন মালিককে এক লাখ টাকা, প্রিন্স হ্যাভেন রিসোর্টকে এক লাখ টাকা এবং ফ্রেন্ডস রিসোর্টকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ম্যাজিস্ট্রেট নওরীন হক বলেন, দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে তিনি আরও ১৭টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করেছেন, যা অবৈধভাবে তৈরি হচ্ছে। এগুলো উচ্ছেদ করা হবে।