সুন্দরবন সংরক্ষণে দু-দেশকে একত্রে কাজ করতে হবে
দূষণের জেরে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনের সংরক্ষণে এবার আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে রাষ্ট্রসংঘ।
ম্যানগ্রোভ অরণ্যে ঘেরা দুই দেশের ভূখণ্ডে থাকা সুন্দরবনের পাশাপাশি বদ্বীপ ভূমির জীববৈচিত্রকে বাঁচাতেও এগিয়ে আসছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলি।
মিশরের ‘শর্ম আল শেখে’ রাষ্ট্রসংঘ আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলনে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ নীতি নিয়ে বৈঠকে দূষণে সৃষ্ট ক্ষতিপূরণের অর্থ সুন্দরবনের জন্য বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উন্নত দেশগুলি তাদের বাজেট থেকেই সুন্দরবনের মতো একাধিক ‘হেরিটেজ-ফরেস্ট’-এ আর্থিক সাহায্য দেবে সিদ্ধান্ত হলেও কবে তা কার্যকর হবে তা নিয়ে এখনও দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি।
মিশরে আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে গিয়ে কলকাতার দূষণ নিয়ন্ত্রণে গত কয়েক বছরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন তা তুলে ধরেন মেয়র পারিষদ।
‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ নীতি নিয়ে সুন্দরবন ইস্যুতে পৃথক বৈঠকে বাংলাদেশের মন্ত্রী আবদুল মোমেনের সঙ্গেও ছিলেন কলকাতার মেয়র পারিষদ।
বৈঠকে তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের মতো বৃহৎ ম্যানগ্রোভ অরণ্য বদ্বীপ ভূমিতে প্রাচীর তুলে দাঁড়িয়ে থাকায় আয়লা, আমপান, বুলবুল, ফণীর ভয়ংকর প্রভাব সরাসরি কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গে পড়েনি।
জলবায়ু সম্মেলনের পৃথক বৈঠকে সুন্দরবনের পরিবেশ সংরক্ষণের জেরে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ও কার্বন নিঃসরণ বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে খাস কলকাতাই। আলোচনায় দুই বাংলার সুন্দরবন অংশ উপকৃত হবে বলে স্বীকার করেন ওপার বাংলার মন্ত্রী।’
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৯ সালে কোপেনহেগেনে এমনই এক জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন কলকাতার মেয়র ও পুর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
সেবার দূষণমুক্ত পরিবহন চালুর জন্য এবং কার্বণ নিঃসরণ বন্ধে পদক্ষেপর জন্য পুরস্কার নিয়েছিলেন কলকাতার মেয়র। আয়লা ও আমফানের পর উপগ্রহ চিত্র ও বনরক্ষীদের নানা পর্যবেক্ষণে তথ্য এসেছে যে, সুন্দরবনের একটা বড় অংশে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ভীষণ ক্ষয় হচ্ছে।
ম্যানগ্রোভের গঠন ও বৃদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে, সুন্দরবনের সবুজের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। গাছগুলো দুর্বল হয়ে গিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে লড়ার শক্তি হারিয়ে চলেছে।
দ্রুত সংখ্যা কমছে নানা দুর্লভ প্রাণীর। হরিণ ও বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে গবেষক মহলে নানা বিতর্ক রয়েছে। সুন্দরবনের ১০২টি দ্বীপের মধ্যে ৫২টিতে লোকবসতি, সংখ্যা প্রায় ৪৫ লক্ষ।
কয়েক লক্ষ মানুষের কৃষিজমিতে আমফানের জেরে মাতলা, রায়মঙ্গল, বিদ্যাধরী ও মুড়িগঙ্গার নদী দিয়ে নোনা জল ঢুকে ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নোনাজলে নষ্ট হয়েছে খেতভরা ফসল, মারা গিয়েছে পুকুর ও ভেড়ির কয়েক কোটি টাকা মূল্যের মাছ।
ঘূর্ণিঝড় আমফানের জেরে নোনা জল ঢুকে নষ্ট হয়ে গিয়েছে বহু হাজার হাজার একর চাষজমি, যা আগামী বহু বছর ধরে কৃষির জন্য অনুপযোগী।
আয়লার দাপটের পর প্রায় ৪-৫ বছর চাষবাস বন্ধ থাকায় বর্তমানে অরণ্যজাত পণ্যের উপরে নির্ভরশীল বাসিন্দাদের একটা অংশ। বদ্বীপ ভূমি এখনই রক্ষা করা না হলে যে দক্ষিণ এশিয়ার স্থলভাগের একটা বড় অংশ আগামী দিনে বিলুপ্ত হয়ে যাবে তা মিশরের জলবায়ু সম্মেলনে স্বীকার করেছেন নেপালের প্রতিনিধিরাও।