জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ
জলাভূমির দেশ বাংলাদেশ। এ দেশের প্রায় সব নদী হিমালয় থেকে নেমে এসেছে। বঙ্গোপসাগর মিশে যাওয়ার আগে নদীগুলোর শাখা-উপশাখা বিস্তৃত হয়েছে, সৃষ্টি করেছে জলাভূমি। তবে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে পানি।
পানি না পেয়ে কখনো খরা আবার পানি বেড়ে প্লাবন, বারবার ঘূর্ণিঝড় এবং উপকূলে নোনাপানি হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব হুমকির সৃষ্টি হয়েছে। কখনো তা বাড়ছে, কখনো কমছে। এসব সংকট মোকাবিলা করতে লাখো মানুষ প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এই ব-দ্বীপের ১৭ কোটি মানুষ এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আজ বাংলাদেশ যে সংকটে ভুগছে, আগামীকাল অন্য অনেক দেশ সে সংকটে পড়বে। এই সংকট বাংলাদেশ যে কৌশলে মোকাবিলার চেষ্টা করছে, তা থেকে বাকি বিশ্ব শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
ভারী বৃষ্টিতে উজান থেকে ঢল নামতে শুরু করলে বাংলাদেশে চাষিরা ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বন্যার পানি থেকে খেত বাঁচাতে তাঁরা ভাসমান বীজতলায় সবজির চাষ করেন। ঘের করে চিংড়ি চাষের কারণে মাটি লবণাক্ত হয়ে ওঠায় তাঁরা টমেটো, ঢ্যাঁড়সের চাষ করছেন।
তবে তা সাধারণ মাটিতে হচ্ছে না, হচ্ছে কম্পোস্টের ওপর। চিংড়ি বহনের জন্য ব্যবহৃত বাক্সেও এসব সবজি চাষ করা হচ্ছে। যেখানে ভূমিক্ষয় হচ্ছে, মানুষ তখন সেখান থেকে অন্য গ্রামে কিংবা শহরে চলে যাচ্ছেন। যেখানে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিচ্ছে, সেখানকার মানুষ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী এই পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘ধরুন, আপনার কাছে একটি ড্রাম আছে। এতে সাতটি ফুটো হয়েছে। এসব ফুটো বন্ধ করার জন্য আপনার মাত্র দুটি হাত আছে। আপনি কী করবেন? এটা কোনো সহজ কাজ নয়।’
বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় থেকে মানুষের জীবন রক্ষায় বাংলাদেশ সফল হয়েছে। তবে দেশে আরও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে লাখো মানুষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, শস্যবিমা বিস্তৃত করা, গ্রাম থেকে যেসব মানুষ যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য শহরে আবাসনের ব্যবস্থা করা। এমনকি প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকে আবহাওয়ার তথ্য পেতে সম্পর্ক উন্নয়ন করাও এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম।
বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে অর্ধেকই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়।