প্লাস্টিক দূষণ রোধে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে
প্লাস্টিক দূষণ রোধে ইংরেজি অক্ষরের তিনটি আর অর্থাৎ রিডিউস বা ব্যবহার কমানো, রিইউজ বা পুনরায় ব্যবহার এবং রিসাইকেল বা পুনরুৎপাদনের প্রতি জোর দিতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে সার্বিক বিষয়ে নজরদারির জন্য সমন্বয় কমিটি গঠন এবং প্লাস্টিক, পলিথিনের বাজারের ব্যাগ এবং পলিথিনজাত পণ্যের নিয়ন্ত্রণ ও নিষিদ্ধকরণ আইনের বাস্তবায়ন করতে হবে। চিকিৎসা সরঞ্জাম ছাড়া অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
বুধবার বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত ‘পলিথিন-প্লাস্টিক দূষণে বিপন্ন বাংলাদেশ: করণীয় ও প্রতিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে এমন ১৫টি দাবি জানানো হয়েছে। বাপা এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে ১৫ দফা দাবি পড়ে শোনান স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি আলোচনা সভায় সঞ্চালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
১৫ দফার অন্যান্য দাবিগুলো হচ্ছে—খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্য প্যাকেটজাতকরণে প্লাস্টিকের ব্যবহার হলে তাতে উচ্চ কর আরোপ, চক্রাকার অর্থনীতির অধীনে উৎপাদককেই বর্জ্য আহরণের প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা, প্লাস্টিক দূষণকারীর জরিমানার পাশাপাশি অবৈধ কারখানা বন্ধ করতে হবে।
কোনো যুক্তিতেই আর কোনো পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদনের জন্য অনুমোদন না দেওয়া, পাট ও কাপড়জাত সামগ্রীর উৎপাদনে সহযোগিতা করা, প্লাস্টিক ও পলিথিনের কাঁচামালের অপব্যবহার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া, প্লাস্টিকের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি ও প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্যের শুল্ক হ্রাস করতে হবে। পানি ও কোমলপানীয় বাজারজাতকরণে প্লাস্টিকের বোতল নিষিদ্ধ করতে হবে। পাটশিল্পকে আবার চাঙা করতে হবে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক এম. ফিরোজ আহমেদ। তিনি বিভিন্ন দেশে নদী, সাগরসহ বিভিন্ন জায়গাভেদে প্লাস্টিক দূষণের বিভিন্ন মাত্রা তুলে ধরেন।
তিনি জানান, এশিয়ায় প্লাস্টিকের ব্যবহার বেশি এবং প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সব থেকে পিছিয়ে আছে। আর বাংলাদেশ পৃথিবীর প্রথম দেশ হিসেবে ২০০২ সালে পলিথিনের ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।
অথচ বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই। বাংলাদেশে ১০০ কারখানায় প্রতিদিন ১ লাখ ৪০ হাজার টন প্লাস্টিক উৎপাদন হচ্ছে। অথচ প্লাস্টিক ১০০ বছরেও পচে না। আর করোনার সময় মাস্কসহ বিভিন্নভাবে দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার বহুমাত্রায় বেড়ে গিয়েছিল।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাপার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার। তিনি বলেন, ‘আপনি বা আমি নিজেও বাজারে গিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগ খুঁজি।’ রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে প্লাস্টিক দূষণ রোধের বিষয়টি যাতে গুরুত্ব পায়, সে আহ্বান জানান তিনি।
বাপার নির্বাহী সদস্য ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবাইলোজি বিভাগের অধ্যাপক মাহবুব হোসেন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমি একটার বেশি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করি না। আর যদি সুযোগ থাকে, তখন একেবারেই ব্যবহার করি না। পলিথিনে মোড়ানো পণ্য না কেনার চেষ্টা করি। অর্থাৎ প্লাস্টিক দূষণ রোধে নিজেদের লাইফস্টাইলেও পরিবর্তন আনতে হবে।’
এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) হেড অব প্রোগ্রাম মনোয়ারুল ইসলাম জানালেন, তাঁর সংগঠন ১৯৯০ সাল থেকে প্লাস্টিক–বিরোধী আন্দোলন করছে। প্লাস্টিক ও পলিথিনের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির কাজ করছে। তিনি প্লাস্টিকের দূষণ রোধে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন।
মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্লাস্টিক দূষণের সঙ্গে আশপাশের দেশগুলোও জড়িত। আশপাশের দেশগুলোর নদী থেকে প্লাস্টিক এ দেশের নদীতে ঢুকছে। পরে তা সাগরে যাচ্ছে। তাই দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি প্লাস্টিক দূষণ রোধ কার্যক্রমে কিশোর-কিশোরী ও যুবদের যুক্ত করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন।