প্রকৃতিবিরোধী যেকোনো প্রচেষ্টাকে রুখে দাঁড়াতে হবে
বাংলাদেশের পরিবেশ এখন সবচেয়ে দূষিত। বায়ুদূষণে প্রায়ই বাংলাদেশ সবার ওপরে থাকছে। ঢাকা বায়ু ও শব্দদূষণের দিক দিয়ে বিশ্বের রাজধানীগুলোর তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পরিবেশ রক্ষায় সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ ও মানবাধিকারকর্মীরা।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ সুরক্ষায় জাগো বাংলাদেশ’ শীর্ষক ‘পরিবেশ সমাবেশে’ এই আহ্বান জানানো হয়। পরিবেশ ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে, এমন ১৫টি সংগঠন এই সমাবেশের আয়োজন করেছে।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, মানুষ প্রকৃতির প্রতি বিরূপ হয়ে বাঁচতে পারবে না। তাই সচেতন বিবেকবান নাগরিক হিসেবে প্রাণ ও প্রকৃতিবিরোধী যেকোনো প্রচেষ্টাকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
দেশে এখন জবাবদিহিমূলক সরকার নেই মন্তব্য করে সুলতানা কামাল বলেন, ‘রাজনীতিকদের কাছে আমরা দেশ লিজ (ইজারা) দিইনি। দেশটা আমাদের। আমাদের সঙ্গে তারা যতই বৈরিতা করুক না কেন, আমাদের দেশকে আমাদেরই রক্ষা করতে হবে।’
সরকারের চাপিয়ে দেওয়া উন্নয়নকে প্রশ্ন করার কথা বলেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘যে প্রকৃতিকে আমরা সৃষ্টি করতে পারি না, তাকে বিনষ্ট করা যাবে না। প্রকৃতিকে মাঝখানে রেখেই তা অক্ষুণ্ন রেখে আমাদের উন্নয়ন ভাবনা ও পরিকল্পনা করতে হবে।’
পরিবেশ রক্ষায় শুধু পরিবেশ মন্ত্রণালয় নয়, সব মন্ত্রণালয়, রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, এবারের তাপদাহ পরিবেশের দূষণ, জলবায়ুর পরিবর্তন সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে। এরপরও প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সামনে পড়তে হবে।
সমাবেশে ‘উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস বন্ধ করো, পরিবেশ রক্ষায় জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দাও’ শীর্ষক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পরিবেশকর্মী পাভেল পার্থ। সমাবেশ সঞ্চালনাও করেন তিনি।
পাভেল পার্থ বলেন, বারবার উন্নয়নের প্রথম কোপটা পড়ছে গাছ, নদী, বনভূমি, কৃষিজমি, পাহাড় বা জলাভূমির ওপর। প্রতিবছর উৎপাদিত হচ্ছে ১০ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন পরিবেশবিনাশী প্লাস্টিক বর্জ্য। নদীমাতৃক দেশে নদ–নদী দখল–দূষণে মহাবিপন্ন। তাই পরিবেশ রক্ষায় এখনই জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পরিবেশকর্মী ও সংগঠনের সংহতি প্রকাশ, পরিবেশ নিয়ে গান, আবৃত্তি, নাটকের অভিনয় দিয়ে এগোয় পরিবেশ রক্ষার এই প্রতিবাদী সমাবেশ।
আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সোমা দে, নারীপক্ষের শিরিন হক, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, পরিবেশকর্মী সুন্দরবনের কৃষ্ণপদ মুন্ডা, মানিকগঞ্জের ইউসুফ আলী ও ধানমন্ডি সাতমসজিদ রোড গাছ রক্ষা আন্দোলনের আমিরুল রাজীব।