আইনের বিভিন্ন শর্ত শিথিল করে বায়ুদূষণের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানিকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে
আইনের বিভিন্ন শর্ত শিথিল করে বায়ুদূষণের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানিকে (কয়লা, জ্বালানি তেল, গ্যাস) সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে পরিবেশগত প্রভাব নিরীক্ষণের বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়তেই থাকবে। আর সেই চাহিদা পূরণে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়বে। বাড়বে বায়ুদূষণ।
রাজধানীর বাংলামোটরের প্ল্যানার্স টাওয়ারে আয়োজিত গোলটেবিলে এ নিবন্ধ উপস্থাপন করেছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। যৌথভাবে গোলটেবিল আয়োজন করেছে ক্যাপস ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, অনেকেই কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বায়ুদূষণের কথা বলছেন। ঢাকার আশপাশে তো কোনো কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নেই। তাহলে ঢাকার বাতাস সবচেয়ে দূষিত কেন?
এ শহরের মানুষই দূষণ করছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য দূষণ হচ্ছে, এসব উন্নয়ন তো জনগণের সুবিধার জন্য করা। প্রকল্প শেষে এ দূষণ বন্ধ হয়ে যাবে। জাপানেও উন্নয়নের সময় বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি ছিল।
মানুষের মানসিকতা ঠিক না হলে শুধু সরকারের পক্ষে পরিবেশদূষণ রোধ করা সম্ভব হবে না বলে জানান উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। তিনি বলেন, ৮০ ভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠান ইটিপি স্থাপন করেছে। কিন্তু এটি বন্ধ করে রাখছে, তাই কোনো কাজে লাগছে না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নবায়নযোগ্য শক্তির লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে হবে। বায়ুদূষণে গড় আয়ু কমে যাচ্ছে। মানুষের জীবনের চেয়ে তো সব সময় বিদ্যুৎ থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ না। কয়লাবিদ্যুৎ না করে যদি দিনে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং দিতে হয়, তার একটি তুলনামূলক ক্ষতি বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে সরকারকে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশে দেশে মানুষের ফুসফুস তো আলাদা নয়, তাহলে বায়ুর মান আলাদা হবে কেন? বায়ুর মানে ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না। ধাপে ধাপে এটি আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে হবে। রাতারাতি তো আর বদলাবে না, কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে এগোতে হবে।
ওয়াটারকিপারস বাংলাদেশের সমন্বয়কারী শরীফ জামিল বলেন, বায়ুদূষণ মারাত্মক মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে। উন্নয়নের নামে দূষণের খোঁড়া যুক্তি দেওয়া যাবে না।
ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের সহসভাপতি মুহাম্মদ আলী নকী বলেন, অনেক বিধিমালা আছে কিন্তু সেগুলোর মধ্যে সমন্বয় নেই। নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বিধিমালাগুলোর মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।
গোলটেবিল সঞ্চালনা করেন বিআইপির সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন। এতে নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, দুই বছর ধরে তারা ঢাকায় বায়ুর মান পর্যালোচনা করছেন। এতে দেখা গেছে, যানবাহনের ব্যবহার বেশি যেসব এলাকায়, সেখানে বায়ুর মান বেশি খারাপ।
গোলটেবিলে আরও বক্তব্য দেন বিআইপির উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আকতার মাহমুদ, ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মোহাম্মদ খান, সেন্টার ফর গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিজিইডি) নির্বাহী পরিচালক আবদুল ওয়াহাব প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ (সিথ্রিইআর), পিওর আর্থ বাংলাদেশ, নোঙর বাংলাদেশ ট্রাস্ট, সেন্টার ফর গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিজিইডি), পরিবেশ উদ্যোগ এবং ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
গোলটেবিলের নিবন্ধে বলা হয়, বায়ুমান ও জ্বালানি উন্নয়নে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুৎ শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকারক গ্রিনহাউস গ্যাস ও বায়ুর দূষক নিঃসরণ ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ক্ষমতা।