পরিবর্তিত জলবায়ু জলবাহিত ও মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়িয়েছে
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া বিভিন্ন সমস্যার কারণে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে দেশের মানুষ। ডেঙ্গু, নিপাহ ভাইরাস, চিকুনগুনিয়া, কালাজ্বর, কলেরা, ডায়রিয়া, চিকেন পক্স, মাম্পস রোগসহ অপুষ্টিজনিত শিশু জন্মের হার বাড়ছে। এই অবস্থায় এ প্রভাব মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
শনিবার রাজধানীর মহাখালীতে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) মিলনায়তনে ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস সোসাইটি এ আয়োজন করে।
সংলাপে আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, পরিবর্তিত জলবায়ু জলবাহিত এবং মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়িয়েছে।
চলতি বছর ডেঙ্গু ও নিপাহ ভাইরাসের প্রকোপ ছিল বছরজুড়ে। ডেঙ্গু আগে মৌসুমি রোগ থাকলেও এখন বছরব্যাপী রোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ডেঙ্গু মশা শহর থেকে গ্রামে– সবখানে মিলছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনে অসংক্রামক ও সংক্রামক উভয় রোগই বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) ডা. ইকবাল কবীর বলেন, সারাবিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নতুন নতুন রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
ইউনিসেফের এক প্রতিবেদন বলছে, দেশের ২০ জেলার ১ কোটি ৯৪ লাখ শিশু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় ২২ দশমিক ৯ শতাংশ শিশু মানসিক সমস্যায় ভুগছে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বায়ুদূষণ বাড়ছে, এতে মানুষের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে। শ্বাসকষ্ট, কাশি, ক্যান্সার, হৃদরোগ সবই বায়ুদূষণের ফল।
এসব দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বে উন্নত দেশগুলোতে বড় একটি ফান্ড থাকে। বাংলাদেশেও আছে, তবে ফান্ডের আকার অনেক ছোট। এই ফান্ড বাড়াতে বাজেট বাড়ানো দরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, অনিয়মিত বৃষ্টি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বনায়ন কমে যাওয়া, বিশুদ্ধ পানির অভাবে সার্বিকভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েছে। তাপমাত্রা বাড়ায় দেশের ৪ কোটি মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নানা রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে।
এটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরি করছে। দেশে গড়ে প্রতি বছরে বায়ুদূষণে প্রায় ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। অসংক্রামক ও সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তি সচেতনতা ও জীবনাচরণ পরিবর্তন জরুরি। এ কাজ এককভাবে সম্ভব নয়। সার্বিকভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. আবু জাহের, বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস সোসাইটির সভাপতি ডা. আসাদুর রহমান নবীন প্রমুখ।