প্লাস্টিক প্রতিনিয়ত পরিবেশকে দূষিত করছে
আমরা যত দ্রুত প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার থেকে নিজেদের বিরত রাখব, তত দ্রুত প্লাস্টিক-দূষিত পরিবেশ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারব। আমাদের ব্যবহার্য যে দ্রব্যটি পরিবেশ দূষণের পেছনে অন্যতম বড় অবদান রাখছে তা হলো প্লাস্টিক।আমরা প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক ব্যবহার করছি এবং পরিবেশকে দূষিত করছি।
সত্যি কথা বলতে প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন কাজে এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, বেশিরভাগ মানুষের কাছেই প্লাস্টিক দ্রব্য ছাড়া জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব মনে হতে পারে।
সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর মুখে দেয়া চুষনি, দুধের বোতল থেকে শুরু করে আমাদের দৈনন্দিন খাবার প্লেট, জগ, গ্লাস, থালা, বাটিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় জিনিসই তৈরি হয় প্লাস্টিক দিয়ে। কিন্তু এই প্লাস্টিক পরিবেশের ওপর কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তা কি আমরা ভেবে দেখেছি?
তাই পরিবেশ দূষণ রোধকল্পে প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহার কমিয়ে আনার ব্যাপারে সবাইকে তৎপর হতে হবে এবং ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্য যত্রতত্র না ফেলে এগুলো নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে।
আমাদের সবার এ বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন যে, আমরা যত দ্রুত প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার থেকে নিজেদের বিরত রাখব, তত দ্রুত প্লাস্টিক-দূষিত পরিবেশ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারব।
চলুন প্লাস্টিক এড়ানোর কয়েকটি উপায় জানা যাক,
বেলুন
বেলুন পচনশীল না।এগুলো প্রানীদেহের ক্ষতি এবং মাটির সাথে মিশে খাদ্য গুনাগুণ নষ্ট করে ফেলে।কিন্তু শিশুদের কাছে বেলুন খুবই আকর্ষনীয় একটি বস্তু।
তাছাড়া জন্মদিন বা কোনো অনুষ্ঠানে বেলুন না হলে যেনো চলেই না।কিন্তু বেলুনের পরিবর্তে কাগজের তৈরী পম্পম ব্যবহার করা যায়।পম্পম দিয়ে ঘর সাজালে তা যেমন ঘরের সৌন্দর্য্য রক্ষা করবে তেমনি পরিবেশ বান্ধবও হবে।
ঝুড়ি
আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলে ঝুড়ি ব্যবহার করতে হবে।তা নাহলে এই ময়লাগুলোকে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে স্তূপাকারে জমা করা হয়।যা নদীর পানি,মাছ সবকিছুকে নষ্ট করে দেয়। ঢাকার খাল-বিলের দিকে তাকালে দেখা যায় বর্জ্যের ভিড়ে কীভাবে এসব প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হওয়ার পথে!
নদীতে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকা
নদী,পুকুরে,খালে ইচ্চেমতো ময়লা ফেলা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।কারণ এগুলো পানি দূষণ করে এবং মাছগুলো মরে যায়। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বিশ্বের অর্ধেক জায়গাতেই সমুদ্রের বাসকারী কচ্ছপেরা মারা যায় এইসব প্লাস্টিক,বর্জ্যের কারণে।
ক্লাব কর্মসুচি
স্কুলগুলোতে এই পরিবেশ বান্ধব বিভিন্ন ক্লাব খোলা যেতে পারে। যেখানে পরিবেশ রক্ষা সপ্তাহ , মিটিং,মেলার মতো কর্মসূচি থাকবে।এতে করে শিশুদের মাঝে সচেতনতা বাড়বে,তারা দায়িত্বশীল এবং যত্নবান হবে পরিবেশ যত্নে।
এলাকাভিত্তিক কর্মসূচি
নিজ নিজ এলাকায় এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। প্রতিবাড়ি থেকে প্লাস্টিক দ্রব্য অপসারণ,প্লাস্টিকের বদলে পরিবেশ বান্ধব অন্যকিছু ব্যবহারে পরামর্শ প্রদান,খতিকারক দিকগুলো তুলে ধরা এভাবে জনসচেতনতা তৈরী করা যেতে পারে।
পুনরায় ব্যবহারযোগ্য দ্রব্য
এক গবেষনায় দেখা গেছে, আমেরিকানরা তাদের আবর্জনার মাত্র ৩৫% পুনরায় ব্যবহার করতে পারে। কীভাবে এগুলোকে ব্যবহার করা যায় বা কোন দ্রব্যগুলো পুনব্যবহারযোগ্য তা জেনে ব্যবহার করা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে ,আমেরিকানরা দিনে ৫০কোটি প্লাস্টিক স্ট্র ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে কোনো ধাতুর তৈরী বা কাগজের স্ট্র ব্যবহার করা যায়।
আমাদের মাটি, পানি, বায়ু প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক দ্বারা দূষিত হচ্ছে। এছাড়া প্লাস্টিক স্টিরিন নামক ক্ষতিকর পদার্থ নির্গত করে, যা মানবদেহে তৈরি করতে পারে ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি।
মোটকথা, প্লাস্টিক পদার্থটি কোনোভাবেই পরিবেশ ও মানবজীবনের জন্য উপকারী নয়। বরং এর ব্যবহারে পরিবেশ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাতে মাশুল দিতে হবে আমাদেরই।
এক গবেষণায় দেখা গেছে সমুদ্রে প্রতিবছর ৮০ লাখ টনেরও অধিক পরিমাণ প্লাস্টিক দূষণ হয়।তাই প্লাস্টিক এড়িয়ে চলুন।প্লাস্টিকে পরিবর্তে অন্যকিছু ব্যবহার করুন।