গাছের কান্না শোনে পোকা: শব্দের ভাষায় যোগাযোগ করছে উদ্ভিদ ও পোকামাকড়
ইসরায়েলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক প্রথমবারের মতো প্রমাণ করেছেন যে, গাছ ও পোকামাকড়ের মধ্যে শব্দের মাধ্যমে যোগাযোগ সম্ভব। গবেষণাটি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী eLife‑এ প্রকাশিত হয় এবং এটি উদ্ভিদজগৎ নিয়ে প্রচলিত ধ্যানধারণায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, টমেটো গাছ যখন পানির অভাবে চাপে পড়ে, তখন গাছটি মানুষের কানে শোনা যায় না এমন এক ধরনের অতিধ্বনিগত শব্দ নির্গত করে। গবেষকেরা এই শব্দগুলো উচ্চ সংবেদনশীল মাইক্রোফোনের মাধ্যমে ধারণ করেন। পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়, শুষ্ক টমেটো গাছ প্রতি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৫০টি অতিধ্বনির সংকেত পাঠায়। এই শব্দ সাধারণ মানুষের পক্ষে শোনা সম্ভব নয়, তবে অনেক পোকামাকড় বিশেষত মথ জাতীয় পোকা এই শব্দ শনাক্ত করতে সক্ষম।
গবেষকেরা যখন শুকনো গাছের এই শব্দগুলো মথ পোকার সামনে বাজিয়ে দেন, তখন দেখা যায়, পোকাগুলো সেই গাছে ডিম পাড়তে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তারা বরং এমন গাছ বেছে নেয়, যেগুলো সজীব এবং কোনোরূপ চাপ বা শুষ্কতার মধ্যে নেই। অর্থাৎ শব্দের মাধ্যমেই পোকাগুলো গাছের শারীরিক অবস্থার সংকেত পেয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা প্রাকৃতিক নির্বাচন ও পরিবেশগত অভিযোজনের এক অত্যন্ত সূক্ষ্ম উদাহরণ।
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ ও পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক লিলাচ হাদানি বলেন, আমরা আগে থেকে জানতাম গাছ তাদের পরিবেশের সঙ্গে রাসায়নিক সংকেত দিয়ে যোগাযোগ করে, যেমন ক্ষতিকর পোকা আক্রমণ করলে গাছ নির্দিষ্ট গন্ধ নির্গত করে আশেপাশের গাছকে সতর্ক করে দেয়। তবে এই গবেষণায় প্রথমবারের মতো শব্দের মাধ্যমে উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেল।
এই আবিষ্কার কৃষি ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। যদি গাছের এই অতিধ্বনি সংকেত অনুবাদ ও শনাক্ত করা সম্ভব হয়, তাহলে কৃষকরা গাছের পানিশূন্যতা বা অসুস্থতা আগে থেকেই জেনে গাছের যত্ন নিতে পারবেন। শুধু তাই নয়, কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন কমিয়ে পরিবেশবান্ধব উপায়ে পোকা নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব হতে পারে।
এই গবেষণাটি উদ্ভিদের “নীরব ভাষা”কে বুঝে নেয়ার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গাছ, যাদের আমরা চুপচাপ ও স্থির জীবনধারার প্রতীক মনে করি, তারা আসলে এক ধরণের শব্দ-ভাষা ব্যবহার করে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করে চলেছে। পোকামাকড় সেই ভাষা শুনে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে—এ যেন প্রকৃতির এক গভীর এবং চমৎকার বোঝাপড়া, যা মানুষের কাছে এতদিন ছিল অজানা।