খালিশপুরের মিঠাপানির শুশুক: পরিবেশ সংকটের প্রতীক
খুলনার খালিশপুর এলাকায় রূপসা, ভৈরব ও আতাই নদীর মিলনস্থলে গ্যানজেস রিভার ডলফিন বা মিঠাপানির শুশুকের (Platanista gangetica) দল নিয়মিতভাবে দেখা যাচ্ছে। এই অঞ্চলে প্রায় ৭-১০টি শুশুকের একটি দল রয়েছে, যা স্থানীয়দের জন্য একটি আকর্ষণীয় দৃশ্য।
🐬 শুশুকের জীবনচক্র ও পরিবেশগত সংকট
শুশুকেরা সাধারণত ৩-৫ মিনিট পর পর পানির উপর উঠে শ্বাস নেয়।দিন-রাতের মাত্র ১৫-২০ মিনিট এরা ঘুমায়। এ সময়ও মস্তিষ্কের অর্ধেকটা অংশ বিশ্রাম নেয়। শরীরের অন্যান্য অংশ সচল থাকে।
তবে, খালিশপুরের নদীগুলোর পানির অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় শুশুকদের বারবার পানির উপর উঠে শ্বাস নিতে হয়। এটি নদী দূষণের একটি স্পষ্ট সংকেত। এছাড়া, নদীতে বড় জাহাজের নোঙর ও বর্জ্য ফেলা শুশুকদের জন্য পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
📉 শুশুকের সংখ্যা ও সংরক্ষণ উদ্যোগ
বাংলাদেশে মিঠাপানির শুশুকের সংখ্যা প্রায় ৬৩৬টি, যা বিভিন্ন নদীতে ছড়িয়ে রয়েছে। এসব দলে শুশুকের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ৩৫২। এ বছর আরও প্রায় ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার গণনা করা হয়েছে। শুশুক গণনার ফলাফল আমরা শিগগিরই পাব।
তবে, পরিবেশগত সংকটের কারণে শুশুকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বন অধিদপ্তর ও ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি (WCS) বাংলাদেশ যৌথভাবে শুশুক গণনা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে, শুশুক সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগের অভাব রয়েছে।
🛑 শুশুক মৃত্যুর প্রধান কারণ
গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে শুশুক মৃত্যুর ৭৯ শতাংশ হলো নিষিদ্ধ কারেন্ট জালে আটকা পড়া। এছাড়া, নদী দূষণ ও বাসস্থান ধ্বংস শুশুকদের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। নদীমাতৃক এই দেশে ডলফিন সংরক্ষণে মাত্র ৯টি অভয়ারণ্য ঘোষণা করলেও তা কার্যকরভাবে সংরক্ষণে সফল হয়নি।
📅 বিশ্ব মিঠাপানির শুশুক দিবস ও জাতীয় উদ্যোগের প্রয়োজন
২৪ অক্টোবর বিশ্ব মিঠাপানির শুশুক দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সংস্থা শুশুক সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে, জাতীয়ভাবে শুশুককে “জাতীয় জলের প্রাণী” হিসেবে ঘোষণা ও অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। এছাড়া, নদী দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
