অ্যান্টার্কটিক মহাসাগরের দুর্বলতা: বৈশ্বিক কার্বন সিঙ্কের পরিবর্তনশীল ভূমিকা
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবিলায় প্রকৃতির দুটি প্রধান সহযোগী—স্থলজ বন এবং সমুদ্র—তাদের কার্বন শোষণ ক্ষমতা (Carbon Sink Capacity) হারাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো অ্যান্টার্কটিকার চারপাশের দক্ষিণ মহাসাগরের (Southern Ocean) দুর্বল হয়ে যাওয়া।
এই মহাসাগরটি বিশ্বব্যাপী মানবসৃষ্ট কার্বন নির্গমনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শোষণ করে আবহাওয়াকে স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। কিন্তু এখন বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন যে, এর কার্বন শোষণ করার ক্ষমতা অপ্রত্যাশিতভাবে কমে আসছে, যা জলবায়ু মডেলগুলির জন্য একটি বড় ধাক্কা।
ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA) এবং স্কিপস ইনস্টিটিউশন অফ ওশানোগ্রাফি (Scripps Institution of Oceanography)-এর এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, গত দশকে দক্ষিণ মহাসাগরের উপরিভাগে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব বেড়েছে।
এর প্রধান কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে শক্তিশালী হয়ে ওঠা পশ্চিমা বাতাস সমুদ্রের গভীরের উষ্ণ এবং কার্বন-সমৃদ্ধ জলকে উপরিভাগে নিয়ে আসছে। এই জল বায়ুমণ্ডলে কার্বন নির্গত করছে, যা মহাসাগরের কার্বন শোষণের ভূমিকাকে উল্টে দিচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাটিকে এক গুরুত্বপূর্ণ ‘টিপিং পয়েন্ট’ (Tipping Point) হিসেবে দেখছেন। সমুদ্রের জল উষ্ণ হতে থাকলে এটি বায়ুমণ্ডল থেকে কম CO₂ শোষণ করে। যদি বিশ্বের বৃহত্তম এই কার্বন শোষকটি দুর্বল হতে থাকে, তবে বায়ুমণ্ডলে কার্বনের পরিমাণ দ্রুত বাড়বে, যার ফলস্বরূপ বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি প্যারিস চুক্তির ১.৫°C সীমা অতিক্রম করার দিকে আরও দ্রুত এগিয়ে যাবে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারকদের জীবাশ্ম জ্বালানি নির্গমন হ্রাসে আরও দ্রুত এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
