মানিকগঞ্জে অবৈধ চুল্লির ধোঁয়ায় হুমকির মুখে পরিবেশ
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে গাছের গুঁড়ি ও কাঠ পুড়িয়ে কয়লা উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্য।
জানা যায়, কয়লা উৎপাদনের চুল্লি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় যেমনি পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, তেমনি নষ্ট হচ্ছে আবাদি জমির ফসল। এ ছাড়া আশপাশের মানুষ শ্বাসকষ্ট রোগে ভুগছেন।
বৃহস্পতিবার উপজেলার দিঘুলিয়া ইউনিয়নের ধলেশ্বরী নদীবেষ্টিত জালশুকা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে কয়লা উৎপাদন কারখানা। ইট দিয়ে দুটি চুল্লি বানিয়ে মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। চুল্লির চারদিকে রাখা গাছের গুঁড়ি, শুকনো কাঠ ও লাকড়ি। দুটি চুল্লিতে আগুন দিলে কালো ধোঁয়ায় চারদিক ছেয়ে যায়।
প্রতিটি চুল্লিতে ১৫০ থেকে ২০০ মণ কাঠ ফেলে আগুন দেওয়া হয়। চুল্লির চারদিকে রয়েছে ফসলের মাঠ ও বসতবাড়ি। বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছ কেটে চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে। এসব চুল্লি থেকে নিগর্ত ধোঁয়ায় হুমকিতে পড়েছে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, কৃষিজমির উর্বরতা ও জনস্বাস্থ্য।
কারখানার শ্রমিক কামরুল বলেন, ইট দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে চুল্লি তৈরি করা হয়েছে। সাটুরিয়ার বিভিন্ন গ্রাম থেকে কাঠ সংগ্রহ করা হয়। চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে একটি মুখ খোলা রেখে অন্য মুখগুলো মাটি ও ইট দিয়ে বন্ধ করে দেন। এই প্রক্রিয়ায় প্রতিটি চুল্লি সাজাতে দুই থেকে তিন দিন লাগে।
বিভিন্ন রাসায়নিক দিয়ে ৫-৭ দিন সময় নিয়ে কাঠ পোড়ান। তখন কাঠ কয়লা হয়ে যায়। আগুন নিভানোর তিন দিন পর চুল্লির কয়লাগুলো বের করেন। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ১৫০ থেকে ২০০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। পরে এই কয়লা ঠান্ডা করে, পরিষ্কার করে কেজিতে ওজন দিয়ে বস্তাবন্দি করেন।
এসব কয়লা বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁর মালিকরা কিনে নেন। হোটেল মালিকরা এ কয়লা রুটি ও নান রুটি তৈরিতে ব্যবহার করে। তিনি বলেন, এক মণ কাঠ পুড়িয়ে পাঁচ-ছয় কেজি কয়লা পাওয়া যায়। প্রতিমণ লাকড়ি ১৬০ টাকায় কিনে প্রতি কেজি কয়লা ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করেন।
সবুজ পরিবেশ আন্দোলনের মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি রাজ্জাক হোসেন রাজ বলেন, এমনিতেই গাছ কাটা ও জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এ ছাড়া কালো ধোঁয়া পরিবেশ ও ফসলের ক্ষতি করছে। এতে একদিকে যেমন বনজ সম্পদ নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ধোঁয়ার কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত নানা রোগব্যাধি দেখা দিচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন বলেন, ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে এ অবৈধ কয়লার কারখানা। এভাবে কাঠ পোড়ানোর ফলে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে এলাকার শিশু ও বৃদ্ধরা।
কারখানার মালিক আবুল বলেন, তাদের কারখানার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নেই। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই গাছ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করছেন বলে দাবি তাঁর।
দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শফিউল আলম জুয়েল বলেন, এ বিষয়ে উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় একাধিকবার বলা হলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।
তাঁর ও ইউএনওর কাছে এলাকার স্রহাধিক মানুষ গণস্বাক্ষর নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় অসাধু ব্যাবসায়ীর কাছে তারা জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে সাটুরিয়ার ইউএনও শান্তা রহমান বলেন, কয়লা তৈরির কারখানার বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছেন। শিগগির খোঁজ নিয়ে এ কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।