জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বতসোয়ানায় ৩৫০টি হাতির মৃত্যু
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বতসোয়ানায় বিষাক্ত শৈবালের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এ জন্য ২০২২ সালে দেশটিতে ৩৫০টি আফ্রিকার হাতির মৃত্যু হয়। স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জেনেছেন যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা।
কিংস কলেজ লন্ডনের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় বলা হয়, পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্র বতসোয়ানার অকাভাঙ্গো বদ্বীপ। খরা থেকে হঠাৎ ভারী বৃষ্টিপাতে এই স্থানের পুকুরগুলোতে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
২০২০ সালের মে এবং জুন মাসে বতসোয়ানার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অকাভাঙ্গো বদ্বীপে একের পর এক হাতির মৃতদেহ পাওয়া যায়। এই ঘটনা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে ৩৫০টি হাতির মৃত ছিল অপ্রত্যাশিত।
তবে এসব হাতিদের শুঁড় অক্ষত ছিল। তাই হাতির মৃত্যুর জন্য চোরাশিকারীদের দায়ী করা যায় না। এখন স্যাটেলাইট প্রযুক্তি এবং স্থানিক বিশ্লেষণের উদ্ভাবনী ব্যবহার মাধ্যমে সেই পরিবেশগত ঘটনার সঙ্গে এই বিপর্যয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা।
কিংস কলেজ লন্ডনের ভূগোল বিভাগের পিএইচডি ছাত্র এবং গবেষণার প্রধান লেখক ডেভিডে লোমিও বলেন, ‘আফ্রিকান হাতির এক-তৃতীয়াংশের বাসস্থান হলো বতসোয়ানায়। তাদের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা অকাভাঙ্গো বদ্বীপে খরা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে বাড়তি উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত ঘটনাবলির অনুক্রম উন্মোচন করেছে গবেষণাটি। লোমিও বলেন, ‘২০২০ সালে ২০টি পুকুরে শৈবালের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়, যা গত তিন বছরের মোট পরিমাণের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল।’ ২০১৫ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এই পুকুরগুলো সবচেয়ে বেশি শৈবাল বায়োমাস (জীবিত বা মৃত জৈব উপাদান) ধারণ করেছিল।’
গবেষক দলের ধারণা, হাতিগুলো সম্ভবত এই বিষাক্ত পানির পুকুরগুলো থেকে গড়ে ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দূরে হেঁটেছে। এর প্রায় ৮৮ ঘণ্টার মধ্যে হাতিগুলো মারা গেছে।
২০১৯ সালে এই অঞ্চলে দশকের মধ্যে সবচেয়ে খরাপূর্ণ বছর ছিল। এর পর ২০২০ সালে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়। গবেষকদের মতে, এই নাটকীয় পরিবর্তন একটি বিধ্বংসী চেইন প্রতিক্রিয়া শুরু করে। যখন ভারী বৃষ্টি শুকিয়ে যাওয়া পুকুরগুলো পূর্ণ করল, তখন সেসব পুকুরে জমে থাকা পলি এবং পুষ্টি উপাদান শৈবালের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল।
গবেষণাটি তাদের ধারণাটি প্রতিষ্ঠা করতে একাধিক তথ্যসূত্র একত্রিত করেছে। প্রায় ৩ হাজারটি পুকুরের স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ করে এবং মৃত হাতির অবস্থানগুলোর সঙ্গে তাদের পরিস্থিতি তুলনা করে। এর মাধ্যমে গবেষক দল আবিষ্কার করে যে, এসব মৃত্যু কিছু পুকুরের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল, যেগুলোতে শৈবালের বৃদ্ধির মাত্রা অতীতের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বেশি ছিল।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কেবল একটি বিষয়েই সীমাবদ্ধ নয়। গবেষক দল সতর্ক করেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা যত শুকনো এবং গরম হতে থাকবে, ততই এই অঞ্চলের পুকুরগুলো বছরের বেশি দিন শুকনো থাকবে।
গবেষণাটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে হুমকির পর্যবেক্ষণের জন্য একটি শক্তিশালী নতুন পন্থা প্রদর্শন করেছে। স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ এবং স্থানিক বিশ্লেষণ একত্রিত করে, বিজ্ঞানীরা এখন পানির গুণগত মানের পরিবর্তন চিহ্নিত করতে পারবে, যা বন্যপ্রাণীকে বিপদে ফেলতে পারে এবং এভাবে একই ধরনের পরিবেশগত হুমকি তৈরি হলে তাড়াতাড়ি হস্তক্ষেপ করা যাবে।
জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে বন্যপ্রাণীর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে তা এই গবেষণা প্রকাশ করে। গবেষণাটি বলছে, পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল প্রজাতিগুলোকে রক্ষা করতে সমস্ত জলাশয়ে, এমনকি সবচেয়ে ছোটগুলোতেও পানির গুণগত মান পর্যবেক্ষণের জরুরি প্রয়োজন।