23 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ১১:৪৪ | ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
বায়ুদূষণের ফলে ক্রমশ শিশুর ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমছে
পরিবেশ দূষণ

বায়ুদূষণের ফলে ক্রমশ শিশুর ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমছে

বায়ুদূষণের ফলে ক্রমশ শিশুর ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমছে

দিন দিন বেড়েই চলেছে দেশের বায়ু দূষণের পরিমাণ। বায়ুদূষণের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূষণজনিত রোগব্যাধি। দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেওয়ার কারণে সব বয়সের মানুষের বহুবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বায়ু দূষণে বিশেষ করে শিশুর স্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পরিবেশগত কারণে প্রতি বছর ১ কোটি ৩ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ অস্বাস্থ্যকর বাতাসে শ্বাস নিচ্ছে। বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে বিশ্বের ১২৪ নগরীর মধ্যে ঢাকা বায়ুদূষণে তৃতীয় স্থানে ছিল। এদিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে আইকিউ এয়ারের মানসূচকে ঢাকার বায়ুর মান ছিল ২৫৩। বায়ুর এই মানকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২ দশমিক ৫-এর উপস্থিতি। ঢাকার বাতাসে ২ দশমিক ৫ এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে ৩৫ গুণ বেশি।

ঢাকার বায়ুতে কি ধরনের ক্ষতিকর উপাদান আছে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, দূষিত বায়ুতে যা থাকে তার সব কিছুই মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দূষিত বাতাসে কঠিন ও তরল পদার্থ এবং গ্যাস থাকে।



এর মধ্যে আছে হাজার রকমের অর্গানিক কার্বন, ব্ল্যাক কার্বন, হেভি মেটাল, সালফেট, ফসফেট, নাইট্রেট, লেড, ক্যাডিয়াম, মার্কারি থাকে। আবার গ্যাসের মধ্যে সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, এমোনিয়া, মিথেন, কার্বন মনো অক্সাইডসহ আরও অনেক ধাতু থাকে। যার প্রত্যেকটিই মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।

পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, বাতাসে সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড এবং অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস বেড়ে যাওয়ায় বায়ু দূষণ বাড়ছে। বায়ু দূষণের ফলে বাতাসে প্লাস্টিক কণা, সীসার মতো ক্ষতিকর উপাদানও বাড়ছে।

এসব উপাদান মানবদেহের ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করে। মানুষ নিশ্বাসের সঙ্গে এই বিষাক্ত উপাদানগুলো গ্রহণ করছে এবং শ্বাসতন্ত্রের নানান জটিল অসুখে ভুগছে।

মানুষের ফুসফুসে একটা তরল পদার্থ রয়েছে যাকে সারফেকট্যান্ট বলে। এটা ফুসফুসের দুটি অংশকে একসাথে আটকে যেতে বাধা প্রদান করে। সারফেকট্যান্ট না থাকলে আমাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ঢাকার দূষিত বায়ু ফুসফুসের এই তরল পদার্থটি নষ্ট করে দিচ্ছে।

বায়ুদূষণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে শিশুরা। কারণ দূষণের ধাক্কা সামলানোর জন্য শিশুদের ফুসফুস যথেষ্ট পরিপক্ব নয়। শিশুদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে ঢাকার বাতাসে থাকা ক্ষতিকর উপাদানগুলো। এর ফলে শিশুদের সিওপিডি, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ফুসফুসের প্রদাহজনিত সমস্যা বাড়ছে।

বায়ু দূষণ শিশুর স্বাস্থ্যের ওপরে কি ধরনের প্রভাব ফেলে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাহবুবুল হক বলেন, আমরা বাতাস থেকে শ্বাস নেই। দূষিত বায়ু থেকে যে ডাস্ট শরীরে ঢুকে প্রথমে তা ইরিটেশন করে সর্দি ও কাশি হয়। অনবরত এটা হলে ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। এরফলে ফুসফুসে ইনফেকশন হয়ে নিউমোনিয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, যে সব পরিবারের সদস্যদের অ্যাজমা আছে, সেসব পরিবারের বাচ্চারা বায়ু দূষণজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাদের শ্বাসকষ্টও বেশি হয়। আবার যেসব বাচ্চাদের অন্যান্য কোন কোমরবিটি আছে, তারাও বেশি আক্রান্ত হয়, কারণ তাদেরও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।



অর্থাৎ সুস্থ বাচ্চাও অসুস্থ হয়ে যায়, আবার যারা ক্রনিক ডিজিজে আক্রান্ত তাদের জন্য মরণফাঁদের মতো হয়। খারাপ দিক হচ্ছে বাতাস দূষিত থাকার কারণে এমন রোগ নরমাল সর্দি কাশির ওষুধে ভালো হতে চায় না।

শিশু হাসপাতালে কি পরিমাণ শ্বাসকষ্টজনিত রোগী চিকিৎসা নিতে আসে, এমন প্রশ্নের উত্তরে পরিচালক বলেন, আমাদের এখানে যে পরিমাণ বাচ্চাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়ে গড়ে তার প্রায় ৩০ শতাংশ শ্বাসকষ্টের রোগী থাকে।

বায়ু দূষণের শিশুদের ক্ষতি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, বায়ু দূষণের ফলে মূল যে সমস্যা হয়, সেটা হচ্ছে ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি)।

অর্থাৎ শ্বাসনালির সমস্যা হবে। দূষিত বায়ুতে কিছু উপাদান থাকে যেগুলো অতি ক্ষুদ্র কণা। এগুলো আকারে এতটাই ছোট যে সরাসরি ফুসফুসের ভেতরে ঢুকে যায়। নিশ্বাসের মাধ্যমে এসব কণা ফুসফুসে জমতে থাকে।

তিনি আরো বলেন, আমরা ছোট বাচ্চাদের নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তিত। ছোট বাচ্চাদের ফুসফুসে দূষিত বায়ুর ক্ষতিকর উপাদানগুলো অনবরত যেতে থাকে, তাহলে তাদের শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা কমবে। বাচ্চারা যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন নিতে পারবে না, কারণ তাদের বায়ু সেলগুলো বেলুনের মতো চুপসে যায় আবার বড় হয়।

এভাবেই তারা বাতাস থেকে অক্সিজেন নেয়, আবার কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়ে। বাচ্চাদের ফুসফুসের গায়ে যদি দূষিত বায়ুর ক্ষতিকর কণাগুলো লেগে লেগে বেলুনের পরিবর্তে প্লাস্টিকের মতো হয়ে যায়, তাহলে ফুসফুসের যে স্বাভাবিক শ্বাস কার্যক্রম, সেটা আর হবে না।

ধীরে ধীরে তাদের শ্বাসনালিতে এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে এবং এটাই সিওপিডি। এরফলে একদিকে অক্সিজেনের ঘাটতি হবে আরেকদিকে ফুসফুসের ওপর চাপ বাড়বে, এটাকে কর পালমোনেল ডিজিজ বলা হয়। ফুসফুসে চাপ বাড়ার কারণে ধীরে ধীরে তার হার্ট ফেইলর হওয়া শুরু করবে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত