সুন্দরবন রক্ষায় আইনের কঠোর প্রয়োগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে
সুন্দরবন নিয়ে বরিশালে নাগরিক সংলাপে বক্তারা বলেছেন, সুন্দরবন একটি শ্বাসমূলীয় বন (ম্যানগ্রোভ), লোনা ও মিঠাপানির সংমিশ্রিত পরিবেশের মধ্যে জন্ম নেওয়া ও বেঁচে থাকা এটি বিশ্বের একটি বিরল সম্পদ। সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশের নয়, গোটা বিশ্ববাসীর সম্পদ। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবন দেশের সুরক্ষা বর্ম হিসেবে কাজ করে।
বিশেষ ধরনের প্রজাপতি ও মৌমাছির পরাগায়ননির্ভর হয়ে এই বনের গাছ বেঁচে আছে। এই বনের সবকিছুই পৃথিবীতে অদ্বিতীয়। এর গাছ ও পশুপাখি অন্য কোনো বনে বা স্থানে বংশানুক্রমিকভাবে বাঁচবে না।
এই বন আর কৃত্রিমভাবে তৈরি সম্ভব নয়। এটিই সুন্দরবনের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এই বন ধ্বংস হলে শুধু আমরা নই, সমগ্র বিশ্ব চিরদিনের মতো অমূল্য সম্পদ হারাবে।
১৯ ফেব্রুয়ারি বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এ নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। জেট নেট বিডির সহযোগিতায় বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরাম, ‘আরোহী’ ও ‘প্রান্তজন’ যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে।
এতে সভাপতিত্ব করেন সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বরিশাল কমিটির সভাপতি গাজী জাহিদ হোসেন। সংলাপে বক্তব্য দেন বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জন সুরক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক শুভঙ্কর চক্রবর্তী, উন্নয়ন সংগঠন ‘আরোহী’র নির্বাহী পরিচালক এ টি এম খোরশেদ আলম, বরিশাল প্রতিবেশ ফোরামের সদস্যসচিব সুভাষ দাস, শিশু সংগঠক আখতারুল কবির প্রমুখ। নাগরিক সংলাপে সুন্দরবনের দখল ও দূষণ প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সনাক সভাপতি অধ্যাপক গাজী জাহিদ হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘প্রাণ ও প্রকৃতির আশ্চর্য লীলাভূমি এই বনে রয়েছে পাঁচ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ১৯৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১২৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫৭৯ প্রজাতির পাখি ও ১২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। কিন্তু মানুষের অসচেতনতার কারণে প্রতিনিয়তই হুমকির মুখে পড়ছে এই জীববৈচিত্র্য।
এভাবে চলতে থাকলে সুন্দরবনের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। এই বন বিপন্ন হলে মানবসভ্যতার অস্তিত্বও একসময় বিপন্ন হয়ে পড়বে। ব্যক্তিস্বার্থে প্রাণিকুলের বাস্তুসংস্থানের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে আমরা সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছি। সেই সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি লাভের আশায় নিজেদের দীর্ঘস্থায়ী সম্পদকেও অবলীলায় ধ্বংস করছি।
একই সঙ্গে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে এই বনাঞ্চলকে নানাভাবে হুমকিতে ফেলা হচ্ছে। এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।’
বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জন সুরক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক শুভঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘এই ধ্বংসের পথ থেকে ফিরে আসতে হবে। প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে মানবসভ্যতার অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। বরং প্রকৃতির সান্নিধ্যেই জীবন নতুনভাবে গতিশীল হয়।’
সংলাপে বক্তারা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং বরিশাল বিভাগে পরিবেশ আদালত প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। সেই সঙ্গে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।