প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশ পরিবেশগত ঝুঁকির চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে: প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশ আজ পরিবেশগত ঝুঁকির চূড়ান্ত পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে। জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড়, শিল্প দূষণ এবং অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণের ফলে সৃষ্ট অস্তিত্বগত হুমকি ঠেকাতে বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
শনিবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘পরিবেশগত ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখা: একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য বিচারকদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ব্রাজিলের ন্যাশনাল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আন্তোনিও হারমান বেঞ্জামিন। অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা এখানে পরিবেশগত অবক্ষয়ের উদ্ভূত সংকটের নিছক দর্শক হিসেবে একত্রিত হইনি, বরং পরিবেশগত ধ্বংসের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে ন্যায়বিচারের প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
তিনি বলেন, বিভিন্ন জনস্বার্থ মামলায় সাংবিধানিক আদেশ ও আইনগত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দেশের বিচার বিভাগ ঐতিহাসিকভাবে পরিবেশ রক্ষায় অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। নদী সুরক্ষা, বায়ুর মান নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশগত আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী রায় আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের দেশকে অপরূপ করে তুলেছে এমন অনেক বিষয়ের মধ্যে সুন্দরবন একটি। বিশ্বের বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন এটি। বিশ্বের ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতিও অর্জন করেছে সুন্দরবন।
এখানে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বিরল ইরাবতী ডলফিন এবং অসংখ্য প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ এবং সামুদ্রিক জীব। শুধু তাই নয়, সুন্দরবন আমাদেরে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবেও কাজ করছে।
আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলকে ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের আঘাত থেকে রক্ষা করছে। একইসঙ্গে কার্বন আহরণের মাধ্যমে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে করছে আমাদের সুন্দরবন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সুন্দরবনের বিশাল পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক সুফল থাকার পরেও এটিই এখন চরম সংকটের মুখোমুখি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, শিল্প দখল এবং অনিয়ন্ত্রিত বন উজাড় সুন্দরবনকে পরিবেশগত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি এখনই সঠিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হই, তাহলে কেবল অপূরণীয় প্রাকৃতিক ক্ষতিই নয়, লাখ লাখ মানুষ নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ন্যায়বিচারের রক্ষক হিসেবে আমাদের একান্ত কর্তব্য হলো কঠোর আইনি কাঠামো, টেকসই নীতিমালা এবং স্থায়ী বিচারিক তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই অপরিবর্তনীয় অভয়ারণ্যটি সুরক্ষিত রাখা।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আমি যখন বাংলাদেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলাম। তখন আমার কাঁধে বিশাল দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল। দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি বিচার বিভাগীয় সংস্কারের একটি বিস্তারিত রোডম্যাপ ঘোষণা করেছি। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বিচার বিভাগ শক্তিশালী হবে।