ঢাকায় বায়ুদূষণ মোকাবিলায় এয়ার পিউরিফায়ার স্থাপন: নীতিনির্ধারণী দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) রাজধানীর ক্রমবর্ধমান বায়ুদূষণ মোকাবিলায় ৫০টি জনসমাগমপূর্ণ স্থানে এয়ার পিউরিফায়ার স্থাপনের একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানান, প্রতিটি যন্ত্র প্রতি মিনিটে ৩০,০০০ ঘনফুট বাতাস পরিশোধন করতে পারে এবং এটি ১০০টি গাছের সমপরিমাণ বায়ু শোধন ও শীতলীকরণ করতে সক্ষম।
HDCT-51000 মডেলের এসব যন্ত্র ১,৫০০ কেজি ওজনের ও ২২০ ভোল্টে চালিত, যা সম্পূর্ণভাবে স্পনসরদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে — ফলে সিটি করপোরেশনের জন্য আর্থিক ব্যয় নেই। (সূত্র: ডিএনসিসি, ২০২৫)
তবে বিশেষজ্ঞরা এই উদ্যোগের বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, “বড় দেশগুলো এ ধরনের ব্যয়বহুল প্রযুক্তির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখাতে পারেনি।”
(সূত্র: প্রথম আলো, ২০২৫) স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (CAPS)-এর চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কামরুজ্জামান উল্লেখ করেন, “এটি পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ হতে পারে, তবে মৌলিক দূষণ উৎসগুলোর সমাধান ছাড়া এটি দীর্ঘমেয়াদি উপকারে আসবে না।”
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক গবেষণা সংস্থা আইকিউএয়ারের ২০২৪ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বায়ুদূষিত দেশ এবং ঢাকা শহর তৃতীয় সর্বোচ্চ দূষিত শহর।
CAPS-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ৯ বছরে ঢাকায় মাত্র ৩১ দিন নির্মল বায়ু পাওয়া গেছে — যা শহরবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি স্পষ্ট করে। (সূত্র: IQAir, 2024; CAPS, 2023)
এই প্রেক্ষাপটে, ডিএনসিসির এয়ার পিউরিফায়ার স্থাপন একটি প্রতীকী ও সচেতনতামূলক উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কিন্তু এটি যেন লোকদেখানো প্রকল্পে পরিণত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
নীতিনির্ধারণী সুপারিশ:
- বায়ুদূষণের উৎস নিয়ন্ত্রণ: পরিবহন খাতে সিএনজি ও বৈদ্যুতিক যানবাহনের প্রসার, নির্মাণসাইটে ধুলা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রবর্তন, এবং ইটভাটায় জিগজ্যাগ প্রযুক্তির বাধ্যতামূলক প্রয়োগ।
- নগরায়ণ ও পরিকল্পনা: নগর পরিকল্পনায় সবুজ বাফার জোন, উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব অবকাঠামোর অগ্রাধিকার।
- নীতির বাস্তবায়ন তদারকি: DOE, সিটি করপোরেশন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বিত কার্যক্রম জোরদার করা।
পরিশেষে, ঢাকার বায়ুদূষণ একটি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত জরুরি অবস্থা — এখানে প্রযুক্তির পাশাপাশি রাজনৈতিক সদিচ্ছা, শক্তিশালী পরিবেশনীতি ও নগরবাসীর সচেতনতা একসাথে কাজ করলেই কেবল টেকসই সমাধান আসবে।