সবুজ ভবিষ্যতের পথে বাংলাদেশ: গ্রিন রেলওয়ের প্রস্তুতিতে ৯৩ কোটি টাকার প্রকল্প
পরিবেশবান্ধব ও জলবায়ু সহনশীল পরিবহন ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। ৯৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘গ্রিন রেলওয়ে পরিবহন প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের রেল খাতকে আরও টেকসই ও পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে, যা ২০২৭ সালের মার্চের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সম্প্রতি প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছে।
মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ২৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং বাকিটা, অর্থাৎ ৬৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা, ঋণ হিসেবে আসবে বিশ্বব্যাংকের আইডিএ (ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন) থেকে। প্রকল্পটি দ্রুত এগিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংক প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ে ৬০ লাখ ডলার সরাসরি অর্থ সহায়তা (PPA) দিতে সম্মত হয়েছে।
এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডরের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন, চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট, গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (CGPY), বে টার্মিনাল (পতেঙ্গা), এবং মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল।
ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ ও পুনর্গঠনের সম্ভাব্যতা যাচাই, কমলাপুরে মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব গড়ে তুলতে স্টেশন ইয়ার্ড পুনর্নির্মাণ, এবং ফৌজদারহাট থেকে বে টার্মিনাল পর্যন্ত নতুন মালবাহী রেল সংযোগ স্থাপনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে সম্পন্ন হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ এক বিশেষ মূল্যায়ন সভা করে এবং নির্ধারিত কিছু শর্ত সাপেক্ষে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভবিষ্যতে মালবাহী রেল ইঞ্জিন, ত্রাণ ট্রেন ও পরিবহনের উপযোগী রেল অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মূল প্রকল্প বাস্তবায়নের ভিত্তি প্রস্তুত হবে।
সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হলে, গ্রিন রেলওয়ে প্রকল্প কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে, যা পরিবেশ দূষণ কমাবে এবং বাংলাদেশের পরিবহন খাতে একটি নতুন পরিবেশবান্ধব দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
পরিকল্পনা কমিশনের মতে, উন্নত রেল পরিবহন ব্যবস্থা কেবল যোগাযোগ সহজ করবে না, বরং পরিবহন খরচ কমিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।
বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় শুরু হওয়া এই উদ্যোগ দেশের রেল খাতকে আরও আধুনিক, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠবে।