28 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ২:২৪ | ৯ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
ন্যাটোর পুণরাস্রিকরন বছরে ২০ কোটি টন নির্গমন বৃদ্ধি করতে পারে
আন্তর্জাতিক পরিবেশ পরিবেশ গবেষণা পরিবেশ বিজ্ঞান পরিবেশ বিশ্লেষন

ন্যাটোর পুণরাস্রিকরন বছরে ২০ কোটি টন নির্গমন বৃদ্ধি করতে পারে

গবেষণায় দেখা গেছেন্যাটোর পুণরাস্রিকরন বছরে ২০ কোটি টন নির্গমন বৃদ্ধি করতে পারে

গবেষকরা বলছেন যে বিশ্বজুড়ে প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি জলবায়ু সংকটকে আরও খারাপ করবে যা আরও সংঘাতের কারণ হবে।

গবেষকদের মতে, বিশ্বব্যাপী সামরিক শক্তি বৃদ্ধি জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রার জন্য অস্তিত্বগত হুমকি তৈরি করছে, তা্ঁরা বলছেন যে, ন্যাটোর পরিকল্পনা অনুযাী পুনরায় অস্রে সজ্জিত করনে বছরে প্রায় ২০০ মিলিয়ন টন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বৃদ্ধি করতে পারে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্ব সর্বোচ্চ সংখ্যক সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে, দেশগুলি সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি শুরু করেছে, যা ২০২৩ সালে সম্মিলিতভাবে রেকর্ড ২.৪৬ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।

সমালোচকরা বলছেন, নতুন হার্ডওয়্যারে বিনিয়োগ করা প্রতিটি ডলারের জন্য, কেবল কার্বন খরচই নয়, সম্ভাব্য জলবায়ু কর্মকাণ্ডের জন্য একটি সুযোগ খরচও রয়েছে। এটি সশস্ত্র সংঘাতের ফলে সৃষ্ট বিশাল মৃত্যুর সংখ্যার উপরে।

কনফ্লিক্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অবজারভেটরির গবেষক এবং গবেষণার সহ-লেখক এলি কিন্নি বলেন, “আমরা যেভাবে স্বল্পমেয়াদী নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি এবং দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তাকে ত্যাগ করছি তা নিয়ে একটি বাস্তব উদ্বেগ রয়েছে।”

“এ ধরণের অজ্ঞতাপূর্ণ পদ্ধতির কারণে, আমরা এখন কঠোর সামরিক নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করছি, সে কারণে বিশ্বব্যাপী নির্গমন বৃদ্ধি করছে এবং জলবায়ু সংকটকে আরও খারাপ করছে।”

এর ফলে আরও সহিংসতা দেখা দেওয়ার আশংকা রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনকে এখন ক্রমবর্ধমানভাবে সংঘাতের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যদিও পরোক্ষভাবে। সুদানের দারফুর অঞ্চলে দীর্ঘ খরা এবং মরুকরণের পরে দুর্লভ সম্পদের প্রতিযোগিতার সাথে সংঘাতের সম্পর্ক ছিল। উত্তর মেরু অঞ্চলে সমুদ্রের বরফের পরিমাণ কমে যাওয়ায় নতুনভাবে তেল, গ্যাস এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ কে নিয়ন্ত্রণ করবে তা নিয়ে উত্তেজনা তৈরি করছে।

মে মাসে গাজা সীমান্তের কাছে ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া যান। অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনে খুব বেশি কার্বন-নিবিড়। ছবি: এরিয়েল শালিট/এপি
মে মাসে গাজা সীমান্তের কাছে ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া যান। অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনে খুব বেশি কার্বন-নিবিড়। ছবি: এরিয়েল শালিট/এপি

খুব কম সামরিক বাহিনী তাদের জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ সম্পর্কে স্বচ্ছ, তবে গবেষকরা অনুমান করেছেন যে সম্মিলিতভাবে তারা ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ৫.৫% এর জন্য দায়ী।

বেশ কয়েকটি অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির সাথে সাথে এবং কয়েক দশক ধরে বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক ব্যয়কারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা আশা করে তার ন্যাটো মিত্ররা তাদের সশস্ত্র বাহিনীতে উল্লেখযোগ্যভাবে আরও বেশি সম্পদ ব্যয় করবে, এই সংখ্যাটি আরও বাড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

গ্লোবাল পিস ইনডেক্স অনুসারে, ২০২৩ সালে ১০৮টি দেশে সামরিকীকরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৯২টি দেশ সশস্ত্র সংঘাতে জড়িত যা ইউক্রেন এবং গাজা থেকে দক্ষিণ সুদান এবং ডিআরসি পর্যন্ত, তাইওয়ান নিয়ে চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হিমায়িত সংঘাতের কারণে, যুদ্ধের ভয়ে ভীত সরকারগুলি তাদের সামরিক বাহিনীতে প্রচুর বিনিয়োগ করছে।

ইউরোপে, এই বৃদ্ধি বিশেষভাবে নাটকীয়: ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ অনুসারে, ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে, ইইউ দেশগুলির অস্ত্র ব্যয় ৩০% এরও বেশি বেড়েছে।

মার্চ মাসে, ইউক্রেনের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামরিক সহায়তা এবং কূটনৈতিক সহায়তা হ্রাসের ফলে ইইউ ইঙ্গিত দেয় যে এটি আরও বাড়বে, “পুনঃসজ্জিত ইউরোপ” নামক একটি পরিকল্পনায় ব্লক জুড়ে আরও ৮০০ বিলিয়ন ইউরো ব্যয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক কার্যালয়ের বিশ্লেষণে, বিশেষজ্ঞগণ জলবায়ু লক্ষ্য অর্জনে বর্ধিত সামরিকীকরণের সম্ভাব্য প্রভাব কি হতে পারে তা বিশ্লেষণ করেন। তারা যা পেয়েছেন তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক: ন্যাটোর পুনঃসামরিককরন থেকে নির্গমনের সম্ভাব্য বৃদ্ধি বিশ্বের অবশিষ্ট কার্বন বাজেটে পাকিস্তানের মতো বৃহৎ এবং জনবহুল একটি দেশের ব্যয় যোগ করার সমতুল্য হবে।

গবেষণার দল নেতা কিন্নি বলেন “আমাদের বিশ্লেষণ বিশেষভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ১৩ তম (Goal 13: Climate Action) এর উপর প্রভাবের দিকে নজর দিয়েছে, যা হল জলবায়ু পদক্ষেপ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া।” “এবং আমাদের বিশ্লেষণে এর বিভিন্ন উপ-লক্ষ্যগুলি দেখে যা দেখা গেছে … [তা হল] যে সামরিক ব্যয় বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধির ফলে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু কর্মকাণ্ডের জন্য একটি বাস্তব হুমকি রয়েছে।”

রাষ্ট্রের সকল কাজের মধ্যে সামরিক বাহিনী প্রায় অনন্যভাবে কার্বন-নিবিড়। “প্রথমত, তারা যে সরঞ্জামগুলি কিনে, যার মধ্যে মূলত প্রচুর পরিমাণে ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম থাকে, যার উৎপাদন খুবই কার্বন-নিবিড়।” “দ্বিতীয়ত, অভিযানের সময় সেনাবাহিনী খুব গতিশীল থাকে এবং চলাফেরার জন্য তারা জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে অর্থাৎ স্থল অভিযানের জন্য ডিজেল এবং বিমান অভিযানের জন্য কেরোসিন ব্যবহার করে। সামুদ্রিক অভিযানে যুদ্ধ জাহাজগলি পারমাণবিক-চালিত না হলে ডিজেল ব্যবহার করছে।”

সামরিক বাহিনী এবং তাদের অভিযানকে ঘিরে সাধারণত যে গোপনীয়তা থাকে, তা জানা কঠিন। ফলে তারা কতটা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করছে তা সঠিকভাবে নির্নয় সম্ভব হয় না। শুধুমাত্র ন্যাটো দেশগুলি তাদের গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনের যথেষ্ট পরিমাণ রিপোর্ট করে খাকেযা হতে বিজ্ঞানীরা গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনের অনুমান করার চেষ্টা করতে পারেন।

গবেষণা দলের জলবায়ু জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ডি ক্লার্ক বলেন। “আমরা ন্যাটোকে বেছে নিয়েছি, কারণ তারা ব্যয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে স্বচ্ছ। তাই আমরা বিশেষভাবে ন্যাটোর উপর মনোযোগ দিতে চাই না, বরং তাদের কাছ থেকে আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ।”

গবেষকরা উপলব্দি করার চেষ্টা করেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাদে ন্যাটো দেশগুলি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি ব্যয় করে, তাদের সামরিক বাহিনীতে নিবেদিত জিডিপির অংশে দুই শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি করলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কতটা বৃদ্ধি পাবে।

এ বৃদ্ধি ইতিমধ্যেই চলছে, ইউক্রেনের সংকটের প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপের অনেক দেশ সামরিক ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করছে। যদিও ন্যাটো দেশগুলি প্রকাশ্যে জিডিপির ২% পর্যন্ত ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, গবেষকরা বলছেন যে পুনঃসামরিককরণ ইউরোপ পরিকল্পনাটি ২০২০ সালের প্রায় ১.৫% গ্রীনহাউজ গ্যাসের নির্গমন থেকে ৩.৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। গবেষকরা ধরে নিয়েছেন যে ন্যাটো সদস্য যারা ইইউর সদস্য নয়, যেমন যুক্তরাজ্য, তাদের ক্ষেত্রেও একই রকম বৃদ্ধি ঘটবে।

সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্র থেকে পদ্ধতি ধার করে, যেখানে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল যে সামরিক ব্যয়ের জন্য নিবেদিত জিডিপির অংশের প্রতিটি শতাংশ বৃদ্ধির ফলে জাতীয় নির্গমন ০.৯% থেকে ২% বৃদ্ধি পাবে। তারা অনুমান করেছেন যে দুই শতাংশ ব্যয়ের ধাক্কায় ব্লক জুড়ে প্রতি বছর ৮৭ থেকে ১৯৪ মেগাটন কার্বন ডাই অক্সাইড সমতুল্য কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)এর নির্গমন বৃদ্ধি পাবে।

গবেষকরা বলছেন যে নির্গমনের এত বিশাল বৃদ্ধি কেবল জলবায়ু ভাঙ্গনের উপর প্রভাব ফেলবে না বরং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি অর্থনীতির উপরও প্রভাব ফেলবে। কার্বনের সামাজিক খরচ নির্গত CO2 এর ক্ষতির আর্থিক সূচক এর সাম্প্রতিক অনুমান এটি $১,৩৪৭/tCO2e হিসাবে নির্ধারণ করেছে, যা ন্যাটোর সামরিক গঠনের বার্ষিক খরচ প্রতি বছর $২৬৪ বিলিয়ন হতে পারে বলে পরামর্শ দেয়।

এবং এটি সামরিকীকরণের প্রকৃত কার্বন খরচের একটি ভগ্নাংশ মাত্র, কিনি উল্লেখ করেছেন। “কাগজের হিসাব অনুযায়ী, ৩১টি দেশ যারা যৌথভাবে বিশ্বের মোট নির্গমনের মাত্র ৯% এর জন্য দায়ী। এর প্রভাব বিবেচনায় নিলে লক্ষ্য করা যায় যে, বিশ্বের অনেক দেশ আছে যেগুলো এই নির্দিষ্ট গণনায় বিবেচনা করা হয়নি।”

বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে যে সামরিক বাহিনীর উপর বেশি অর্থ ব্যয় জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করার লক্ষ্যে নীতিমালার জন্য উপলব্ধ সম্পদকেও হ্রাস করে। এটি ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করা গেছে যে, যুক্তরাজ্য তার বৈদেশিক সাহায্য বাজেট হ্রাস করে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির জন্য তহবিল সরবরাহ করছে,  বেলজিয়াম, ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডসে এ পদক্ষেপ প্রতিফলিত হয়েছে।

সামরিক ব্যয়ের এই বৃদ্ধি বহুপাক্ষিকতার জন্য প্রয়োজনীয় মূল আস্থার উপর প্রভাব ফেলছে, কিনি বলেন। “Cop29-এ, কিউবার মতো বিশ্বব্যাপী দক্ষিণ দেশগুলি বিশেষ করে রাষ্ট্রগুলির ভণ্ডামি তুলে ধরেছে যে তারা তাদের সামরিক ব্যয়ের উপর ক্রমবর্ধমান পরিমাণে ব্যয় করতে ইচ্ছুক, কিন্তু সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্যভাবে কম জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।”

মূল প্রবন্ধ লেখক ড্যামিয়েন গেইল, দি গার্ডিয়ানের সৌজন্যে।

অনুবাদ করেছেন- রহমান মাহফুজ।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত