দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা খুব কমে গেছে
-আশফাকুর রহমান নিলয়
দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে যে ৪ সপ্তাহ করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকার পর এখন সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। আশার কথা হচ্ছে, এশিয়ার মধ্যে চীন ছাড়া অন্যান্য জায়গায় ভাইরাসের আক্রান্তের প্রকোপ হ্রাস পাবে।
দেশটি গত ২৪ ঘন্টার মধ্যে করোনাভাইরাসে নতুন করে ৬৪ জনের আক্রান্তের খবর নিশ্চিত করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় বর্তমানে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৯০৩৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ১২০ জন মানুষ।
কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট লোকজন হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যে সংক্রমণের বিরুদ্ধে আমাদের দেশ এখনও লম্বা যুদ্ধের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
ইউরোপ বর্তমানে এই ভাইরাসটির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপের সকল দেশে এই ভাইরাসটি দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে এবং মৃত্যুর মিছিল লম্বা হটচ্ছ। অদ্য ২৩/০৩/২০২০ তারিখ রাত ১০ টা পর্যন্ত ইউরোপের দেশগুলোর আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিন্মে দেয়া হল:
Country, Other | Total Cases | New Cases | Total Deaths | New Deaths |
Italy | 59,138 | 5,476 | ||
Spain | 33,089 | +4,321 | 2,206 | +434 |
Germany | 27,289 | +2,416 | 115 | +21 |
France | 16,689 | +671 | 674 | |
Switzerland | 8,547 | +1,073 | 118 | +20 |
UK | 5,837 | +154 | 289 | +8 |
Netherlands | 4,749 | +545 | 213 | +34 |
Austria | 4,018 | +436 | 21 | +5 |
Belgium | 3,743 | +342 | 88 | +13 |
Norway | 2,547 | +162 | 10 | +3 |
Portugal | 2,060 | +460 | 23 | +9 |
Sweden | 2,046 | +112 | 25 | +4 |
Denmark | 1,450 | +55 | 24 | +11 |
Israel | 1,238 | +167 | 1 | |
Turkey | 1,236 | 30 | ||
Czechia | 1,165 | +45 | 1 | |
Ireland | 906 | 4 | ||
Finland | 700 | +74 | 1 | |
Poland | 684 | +50 | 8 | +1 |
Greece | 624 | 17 | +2 | |
Iceland | 588 | +20 | 1 | |
Romania | 576 | +143 | 5 | +2 |
Slovenia | 442 | +28 | 3 | +1 |
Russia | 438 | +71 | 1 |
Source: WORLDOMETER
নিউইয়র্কে সিটি মেয়র এই ভাইরাসের ক্রমবর্ধমান বিকাশ সম্বন্ধে সবাইকে সতর্ক করেছেন। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে মূল চিকিৎসা সামগ্রীর সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই দীর্ঘসময় হওয়ার আশংকা ব্যক্ত করা জাপানের প্রধানমন্ত্রী এই প্রথম স্বীকার করলেন যে, ২০২০ টোকিও অলিম্পিক গেমস স্থগিত হতে পারে।
দক্ষিণ কোরিয়ার অগ্রগতি কেন অন্য সবার থেকে আলাদা?
দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতিদিন প্রায় ২০,০০০ লোকের পরীক্ষা করা হচ্ছে, যা কিনা বিশ্বের যেকোনো জায়গার মাথাপিছু লোকজন পরীক্ষা করার সংখ্যার থেকে বেশী।
দেশটি সরকারী ও বেসরকারী ল্যাবরেটরীর সাথে সমন্বয় করে একটি নেটওয়ার্কের সৃষ্টি করেছে এবং কয়েক ডজন “গাড়ীতে চলমান অবস্থায় করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র (drive through centres)” স্থাপন করেছে, যেখানে লোকজন তাদের স্বাস্থ্যের পরীক্ষা করতে পারবে।
দক্ষিণ কোরিয়া ২০১৫ সালের মার্স (Middle East Respiratory Syndrome- MARS)করোনা ভাইরাস এর মহামারীর পর তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে অনেক উন্নতি করেছে। মার্স ভাইরাসে তখন দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩৬ জন মানুষ মারা যায়, যা সৌদি আরবের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল।
মার্স করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এই ধরনের অন্যান্য রোগের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিকে পূনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছিল এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি উন্নত বিভাগ তৈরী করা হয়েছিল, যা কিনা খারাপ সময়ের জন্য কাজে লাগবে। সেই পদক্ষেপটি এখন যৌক্তিক বলে প্রমাণিত হলো।
মার্স করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পর সংক্রামক ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির তথ্য পরিচালন ও জনসম্মুখে প্রকাশে আইনকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। এই বছর সরকার মুঠোফোনে মানুষজনকে বার্তা পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহন করেছে, যার মাধ্যমে তারা তার আশেপাশে কেউ আক্রান্ত আছেন কিনা তা সহজে জানতে পারবে।
এই সপ্তাহের শেষের দিকে সরকার দেশের মানুষদেরকে গীর্জা, কারাওকে রুম, নাইটক্লাব ও জিমের মত জায়গা যেখানে জনসমাগম বেশী হয়, সেসব জায়গা এড়িয়ে চলার জন্য জরুরী সতর্কতা জারী করা হয়েছে।
ধর্মীয় নেতাদেরকে তাদের অনুসারীদের তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য বলা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় কাজের ক্ষেত্রে তাদেরকে কমপক্ষে ২ মিটার দূরে থেকে কাজ সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।
অনেক গীর্জাকে নিয়ম ভঙ্গের দায়ে এখন আইনানুগ ব্যবস্খার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
কেন দক্ষিণ কোরিয়া নতুন প্রবাহের আশঙ্কা করছে?
দেশটি সঙক্রমণের এখন পর্যন্ত ২ টি প্রবাহের সম্মুখীন হয়েছে। যোনহাপ নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, প্রথম শুরুটা হয়েছিল ১ম একজনের সংক্রমণের খবর নিশ্চিত হওয়ার পর এবং দ্বিতীয়টি হয়েছে ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক আকারে সংক্রমণের মাধ্যমে।
এখন তারা আগত সংক্রমণের সংখ্যাকে তৃতীয় প্রবাহের আশঙ্কাকে বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করছে।
ইউরোপ থেকে আগতদের ভাইরাসের পরীক্ষার গতিকে দ্রুত করার জন্য বিমান বন্দরসমূহে ফোনের বুথের মত পরীক্ষার জায়গা স্থাপনের পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার।
রবিবার খেকে বহিরাগতদের প্রবেশ কার্যক্রম আবার শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত আগত ১৫২ জনের মধ্যে ভাইরাসের লক্ষণ দেখা গিয়েছে এবং তারা তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছেন।
Source: BBC NEWS